
খায়রুল আলম বেলাল

পঞ্চম দিন বুলেট ট্রেনে সন্ধ্যায় সাংহাই এসে হোটেল রুমে চেক ইন করে ফ্রেশ হই। এরপর শহরের মলে কিছুটা সময় কাটিয়ে হালাল রেস্টুরেন্টে রাতের আহার সেরে নিই। রুমে ফিরে এসে তৃপ্তির ঘুম। সকালে হোটেলের রেস্টুরেন্টে বাহারি নাস্তা শেষে বেরিয়ে পড়ি শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য। প্রথমেই আমরা যাই পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্র ফ্রেঞ্চ কলোনি পরিদর্শনে।
এটি একসময় ফ্রান্সের কলোনি ছিল (১৮৪৯-১৯৪৩)। বর্তমানে এটি সাংহাইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে একটি জাদুঘর রয়েছে, যেখানে ইতিহাসের পুরোনো স্মৃতির অনেক কিছুই দেখানো হচ্ছে। এছাড়া এখানে প্রচুর দোকানপাট, নানারকম রেস্টুরেন্ট, সুভ্যেনির শপ প্রভৃতি স্থান সরগরম হয়ে আছে।
জাদুঘর পরিদর্শন শেষে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে আমরা একটি হালাল রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করি। এরপর নদীর তলদেশের টানেল পেরিয়ে সাংহাইয়ের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব প্রান্তে এসে হাজির হই। এই প্রান্তে আধুনিক সাংহাই গড়ে উঠেছে। এই এলাকায় চার হাজারেরও বেশি সুউচ্চ অট্টালিকা রয়েছে, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
সাংহাই টাওয়ার এই এলাকাতেই সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটিই চীনের সর্বোচ্চ টাওয়ার (স্কাইস্ক্রেপার)। আমরা এই এলাকায় অনেকটা সময় কাটাই, ছবি তুলি। সন্ধ্যায় নৌবিহারের জন্য নদীর ঘাটে যাই।
সাংহাই : সাংহাই চীনের একটি প্রধান শহর এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে একটি। এটি চীনের আর্থ-বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও উৎপাদন কেন্দ্র। শহরটি ইয়াংজি নদীর মোহনায় অবস্থিত। এর বিখ্যাত আকাশচুম্বী ভবন, ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও bustling বুন্দ এলাকা রয়েছে। সাংহাই বন্দর বিশ্বের বৃহত্তম কনটেইনার বন্দর। এটি চীনের সবচেয়ে জনবহুল নগর এলাকাও। শহরটি তার আধুনিক আকাশচুম্বী ভবন, যেমন সাংহাই টাওয়ার ও বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত আর্ট ডেকো ভবনগুলোর জন্য পরিচিত।

চীন ভ্রমণের ষষ্ঠ দিন সন্ধ্যায় আমাদের মূল আকর্ষণ ছিল সাংহাইয়ে নৌবিহার। সাংহাইতে আরো বহু পর্যটন স্পট রয়েছে। তবে সময়স্বল্পতার জন্য সবকিছু দেখা সম্ভব নয়, তাই এই অসাধারণ রাতের ক্রুজটি আমরা বেছে নিয়েছিলাম। এই ক্রুজটি হুয়াংপু নদীতেই ছিল। এই ক্রুজটি দিনরাত উভয় সময়ই হয়ে থাকে। তবে রাতের ক্রুজটি তুলনাবিহীন। কারণ রাতের ক্রুজে নদীর উভয় পাশের যে আলোকসজ্জার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়, পৃথিবীর আর কোথাও তা দেখতে পাওয়া যায় কি না সন্দেহ।
আমাদের এক ঘণ্টার এই ক্রুজটির টিকিট আগেই কাটা ছিল। আমরা জাহাজে ওঠার পর ঠিক সন্ধ্যা ৬টায় এটি জেটি ত্যাগ করে এবং ধীরে ধীরে জাহাজটি নদীপথে অগ্রসর হতে থাকে। জাহাজটি নানা দেশের পর্যটকে ঠাসা ছিল। তাদের সরব উপস্থিতিতে ও হৈহুল্লোড়ে পুরো জাহাজটি ছিল আনন্দে মাতোয়ারা। টুকটাক স্ন্যাকস খেতে খেতে আমরা দুচোখ ভরে এই অবিস্মরণীয় যাত্রাটি উপভোগ করি। ক্রুজ শেষে শহরে গিয়ে একটি হালাল রেস্টুরেন্টে নৈশ ভোজ শেষে হোটেলে ফিরে এসে রাত যাপন করি। পরের দিন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে গোয়াংজুর উদ্দেশে উড়াল দিই।
রিভার ক্রুজ : সাংহাইয়ের রিভার ক্রুজগুলো সাধারণত হুয়াংপু নদী বা ইয়াংজি নদীতে হয়ে থাকে। হুয়াংপু নদীর ক্রুজগুলো প্রায় ৩০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়, যেগুলো সাংহাইয়ের আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী ল্যান্ডমার্ক, যেমন বুন্দ ও লুজুইজি বাণিজ্যিক এলাকা দেখার সুযোগ করে দেয়। ক্রুজের জন্য সেরা সময় হলো বসন্তকাল এপ্রিল থেকে মে এবং শরৎকাল সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর। তবে এই সময়ে ভাড়া বেশি হতে পারে।
চীনে সপ্তম দিনে সাংহাইয়ের পর্ব শেষ করে আমরা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে গোয়াংজুতে আসি। ভোর সাড়ে ৪টায় সাংহাইয়ের হোটেল থেকে বাসে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হই এবং সাড়ে ৫টায় বিমানবন্দরে পৌঁছাই। আমাদের সকালের নাস্তা প্যাক করে সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে সাড়ে ৯টা উড়াল দিই। দুপুর ১২টায় আমরা গোয়াংজুতে নামি। সেদিন আমাদের নির্দিষ্ট কোনো প্রোগ্রাম না থাকায় যে যার মতো এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াই এবং নিজ দায়িত্বে ডিনার সেরে হোটেলে ফিরে আসি।
পরদিন ভোরে আমরা আমাদের নির্ধারিত বাসে গাইডসহ প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে সেনজেন সিটিতে অতি আকর্ষণীয় পর্যটক স্পট ‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ কমপ্লেক্স দেখার জন্য রওনা হই। এই বিশাল কমপ্লেক্সটি এ বছরেরই মে মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি চীনের একটি অতি বিস্ময়কর কমপ্লেক্স। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এটি ভিজিট করেছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকদের ভিড়ে পুরো এলাকাটি সরগরম থাকে।
কমপ্লেক্সটি তিনতলাবিশিষ্ট। এখানে প্রায় ঘণ্টা তিনেক কাটিয়ে আমরা বিশ্বখ্যাত ইলেকট্রনিকস সুপারমার্কেটে যাই। সেখানে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক গেজেট কিনি। এর আগে সেখানে ম্যাকডোনালসে আমরা যে যার পছন্দমতো দুপুরের আহার সেরে নিই।
চীনের শেনজেনের নতুন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়ামটি গুয়াংমিং জেলায় অবস্থিত, যা জাহা হাদিদ স্থপতিদের নকশা করা একটি আধুনিক স্থাপত্য। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মেট্রোপলিটন অঞ্চলের মধ্যে একটি, যার মাধ্যমে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রতি চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়। এখানে বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনী দেখতে পারবেন, যার মধ্যে রয়েছে এআই ও সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রদর্শনী, চীনের মহাকাশ স্টেশনের একটি প্রতিলিপি এবং সামুদ্রিক জীবন-সম্পর্কিত বিষয়।
চীনে অষ্টম দিনে সেনজেনের ইলেকট্রনিকস মার্কেটে টুকটাক কেনাকাটা সেরে পড়ন্ত বিকালে আমরা চলে এলাম চীনের সেনজেন বে এলাকায়। এখানে নদীপথের সেতু চীনের সঙ্গে হংকংকে সংযুক্ত করেছে। এই নান্দনিক সেতুটি ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর নির্মাণশৈলী পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
এখানেই গড়ে উঠেছে একটি চমৎকার বে পার্ক। দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদচারণায় স্থানটি সর্বদাই মুখরিত থাকে। আমরা এখানে ছবি তুলি, ভিডিও করি, পার্কে ঘুরাঘুরি করি এবং পরিশেষে সন্ধ্যায় গোয়াংজুর উদ্দেশে রওনা হই। গোয়াংজুতে পৌঁছে আমরা ‘সানওয়ে লু’ এলাকায় যাই। সেখানে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ‘রাঁধুনী চায়না’তে দেশি স্টাইলে ভর্তা-ভাজি, সবজি, ডাল-ভাত, বেগুন ভাজি, মাংস, কাবাব, দই ইত্যাদি দিয়ে পরিতৃপ্তির সঙ্গে রাতের খাবার শেষ করি।
গোয়াংজুতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রচুর আনাগোনার কারণে এই অঞ্চলে আরো বেশকিছু হোটেল হয়েছে, যেমন ঢাকা হোটেল ও বারাকাত হোটেল। ধানসিঁড়ি নামক হোটেলও দেখতে পাই।
বে পার্ক : সেনজেন বে পার্ক চীনের শেনজেন শহরের একটি সুন্দর ও জনপ্রিয় পার্ক, যা তার মনোরম দৃশ্যের জন্য পরিচিত। এই পার্কটি ‘শেনজেন বে পার্ক’ নামে পরিচিত। এটি একটি সুন্দর সৈকত ও পার্কের সমন্বয়ে গঠিত। পার্কটি তার মনোরম দৃশ্য ও সুন্দর পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।
সেনজেন বে ব্রিজ: এটি একটি অসাধারণ সাসপেনশন ব্রিজ, যা চীনের আধুনিক শহর সেনজেন ও হংকংয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো। এটির অবস্থান সেনজেন ও হংকংয়ের মধ্যে।
শেষ পর্ব : গোয়াংজুতে অর্থাৎ চীনের এই শহরটিতে দুদিন কাটাই। তৃতীয় দিন রাতের ফ্লাইটে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের উদ্দেশে উড়াল দিই। যথারীতি চার তারকা-বিশিষ্ট সমারসেট হোটেলে বুফে প্রাতরাশ শেষে আমরা রুমে খানিক বিশ্রাম নিই। সকাল ১১টায় যার যার লাগেজ রিসিপশনের লবিতে রেখে দিই। এরপর যে যার মতো শহরে হালকা কেনাকাটার জন্য বেরিয়ে যাই।
চীনের সব হোটেলেই চেক আউট টাইম সকাল ১১টায় এবং চেক ইন টাইম বেলা ১টায়। আমরা ইচ্ছামতো ঘুরেফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। প্রায় ৪টা নাগাদ নিজ নিজ লাগেজ সংগ্রহ করে আমাদের নির্ধারিত বাসে গোয়াংজু এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হলাম। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমরা বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হলাম এবং বাংলাদেশের সময় রাত সাড়ে ১০টায় আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই সহিসালামতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম। এভাবেই প্রচুর ব্যস্ততা আর আনন্দের মধ্য দিয়ে আমাদের চীন ভ্রমণের ঘোরলাগা আটটি দিনের সমাপ্তি হলো। এটি আমাদের ৪০ জনের একটি বড় দল ছিল। সবাই সবাইকে চিনতাম না। তবুও এই কটি দিনে আমরা সবাই একে অপরের অনেক কাছাকাছি চলে এসেছিলাম, একটি পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিলাম।
লেখক: লে. কর্নেল (অব.)

পঞ্চম দিন বুলেট ট্রেনে সন্ধ্যায় সাংহাই এসে হোটেল রুমে চেক ইন করে ফ্রেশ হই। এরপর শহরের মলে কিছুটা সময় কাটিয়ে হালাল রেস্টুরেন্টে রাতের আহার সেরে নিই। রুমে ফিরে এসে তৃপ্তির ঘুম। সকালে হোটেলের রেস্টুরেন্টে বাহারি নাস্তা শেষে বেরিয়ে পড়ি শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য। প্রথমেই আমরা যাই পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্র ফ্রেঞ্চ কলোনি পরিদর্শনে।
এটি একসময় ফ্রান্সের কলোনি ছিল (১৮৪৯-১৯৪৩)। বর্তমানে এটি সাংহাইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে একটি জাদুঘর রয়েছে, যেখানে ইতিহাসের পুরোনো স্মৃতির অনেক কিছুই দেখানো হচ্ছে। এছাড়া এখানে প্রচুর দোকানপাট, নানারকম রেস্টুরেন্ট, সুভ্যেনির শপ প্রভৃতি স্থান সরগরম হয়ে আছে।
জাদুঘর পরিদর্শন শেষে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে আমরা একটি হালাল রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করি। এরপর নদীর তলদেশের টানেল পেরিয়ে সাংহাইয়ের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব প্রান্তে এসে হাজির হই। এই প্রান্তে আধুনিক সাংহাই গড়ে উঠেছে। এই এলাকায় চার হাজারেরও বেশি সুউচ্চ অট্টালিকা রয়েছে, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
সাংহাই টাওয়ার এই এলাকাতেই সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটিই চীনের সর্বোচ্চ টাওয়ার (স্কাইস্ক্রেপার)। আমরা এই এলাকায় অনেকটা সময় কাটাই, ছবি তুলি। সন্ধ্যায় নৌবিহারের জন্য নদীর ঘাটে যাই।
সাংহাই : সাংহাই চীনের একটি প্রধান শহর এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে একটি। এটি চীনের আর্থ-বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও উৎপাদন কেন্দ্র। শহরটি ইয়াংজি নদীর মোহনায় অবস্থিত। এর বিখ্যাত আকাশচুম্বী ভবন, ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও bustling বুন্দ এলাকা রয়েছে। সাংহাই বন্দর বিশ্বের বৃহত্তম কনটেইনার বন্দর। এটি চীনের সবচেয়ে জনবহুল নগর এলাকাও। শহরটি তার আধুনিক আকাশচুম্বী ভবন, যেমন সাংহাই টাওয়ার ও বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত আর্ট ডেকো ভবনগুলোর জন্য পরিচিত।

চীন ভ্রমণের ষষ্ঠ দিন সন্ধ্যায় আমাদের মূল আকর্ষণ ছিল সাংহাইয়ে নৌবিহার। সাংহাইতে আরো বহু পর্যটন স্পট রয়েছে। তবে সময়স্বল্পতার জন্য সবকিছু দেখা সম্ভব নয়, তাই এই অসাধারণ রাতের ক্রুজটি আমরা বেছে নিয়েছিলাম। এই ক্রুজটি হুয়াংপু নদীতেই ছিল। এই ক্রুজটি দিনরাত উভয় সময়ই হয়ে থাকে। তবে রাতের ক্রুজটি তুলনাবিহীন। কারণ রাতের ক্রুজে নদীর উভয় পাশের যে আলোকসজ্জার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়, পৃথিবীর আর কোথাও তা দেখতে পাওয়া যায় কি না সন্দেহ।
আমাদের এক ঘণ্টার এই ক্রুজটির টিকিট আগেই কাটা ছিল। আমরা জাহাজে ওঠার পর ঠিক সন্ধ্যা ৬টায় এটি জেটি ত্যাগ করে এবং ধীরে ধীরে জাহাজটি নদীপথে অগ্রসর হতে থাকে। জাহাজটি নানা দেশের পর্যটকে ঠাসা ছিল। তাদের সরব উপস্থিতিতে ও হৈহুল্লোড়ে পুরো জাহাজটি ছিল আনন্দে মাতোয়ারা। টুকটাক স্ন্যাকস খেতে খেতে আমরা দুচোখ ভরে এই অবিস্মরণীয় যাত্রাটি উপভোগ করি। ক্রুজ শেষে শহরে গিয়ে একটি হালাল রেস্টুরেন্টে নৈশ ভোজ শেষে হোটেলে ফিরে এসে রাত যাপন করি। পরের দিন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে গোয়াংজুর উদ্দেশে উড়াল দিই।
রিভার ক্রুজ : সাংহাইয়ের রিভার ক্রুজগুলো সাধারণত হুয়াংপু নদী বা ইয়াংজি নদীতে হয়ে থাকে। হুয়াংপু নদীর ক্রুজগুলো প্রায় ৩০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়, যেগুলো সাংহাইয়ের আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী ল্যান্ডমার্ক, যেমন বুন্দ ও লুজুইজি বাণিজ্যিক এলাকা দেখার সুযোগ করে দেয়। ক্রুজের জন্য সেরা সময় হলো বসন্তকাল এপ্রিল থেকে মে এবং শরৎকাল সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর। তবে এই সময়ে ভাড়া বেশি হতে পারে।
চীনে সপ্তম দিনে সাংহাইয়ের পর্ব শেষ করে আমরা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে গোয়াংজুতে আসি। ভোর সাড়ে ৪টায় সাংহাইয়ের হোটেল থেকে বাসে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হই এবং সাড়ে ৫টায় বিমানবন্দরে পৌঁছাই। আমাদের সকালের নাস্তা প্যাক করে সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে সাড়ে ৯টা উড়াল দিই। দুপুর ১২টায় আমরা গোয়াংজুতে নামি। সেদিন আমাদের নির্দিষ্ট কোনো প্রোগ্রাম না থাকায় যে যার মতো এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াই এবং নিজ দায়িত্বে ডিনার সেরে হোটেলে ফিরে আসি।
পরদিন ভোরে আমরা আমাদের নির্ধারিত বাসে গাইডসহ প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে সেনজেন সিটিতে অতি আকর্ষণীয় পর্যটক স্পট ‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ কমপ্লেক্স দেখার জন্য রওনা হই। এই বিশাল কমপ্লেক্সটি এ বছরেরই মে মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি চীনের একটি অতি বিস্ময়কর কমপ্লেক্স। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এটি ভিজিট করেছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকদের ভিড়ে পুরো এলাকাটি সরগরম থাকে।
কমপ্লেক্সটি তিনতলাবিশিষ্ট। এখানে প্রায় ঘণ্টা তিনেক কাটিয়ে আমরা বিশ্বখ্যাত ইলেকট্রনিকস সুপারমার্কেটে যাই। সেখানে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক গেজেট কিনি। এর আগে সেখানে ম্যাকডোনালসে আমরা যে যার পছন্দমতো দুপুরের আহার সেরে নিই।
চীনের শেনজেনের নতুন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়ামটি গুয়াংমিং জেলায় অবস্থিত, যা জাহা হাদিদ স্থপতিদের নকশা করা একটি আধুনিক স্থাপত্য। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মেট্রোপলিটন অঞ্চলের মধ্যে একটি, যার মাধ্যমে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রতি চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়। এখানে বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনী দেখতে পারবেন, যার মধ্যে রয়েছে এআই ও সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রদর্শনী, চীনের মহাকাশ স্টেশনের একটি প্রতিলিপি এবং সামুদ্রিক জীবন-সম্পর্কিত বিষয়।
চীনে অষ্টম দিনে সেনজেনের ইলেকট্রনিকস মার্কেটে টুকটাক কেনাকাটা সেরে পড়ন্ত বিকালে আমরা চলে এলাম চীনের সেনজেন বে এলাকায়। এখানে নদীপথের সেতু চীনের সঙ্গে হংকংকে সংযুক্ত করেছে। এই নান্দনিক সেতুটি ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর নির্মাণশৈলী পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
এখানেই গড়ে উঠেছে একটি চমৎকার বে পার্ক। দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদচারণায় স্থানটি সর্বদাই মুখরিত থাকে। আমরা এখানে ছবি তুলি, ভিডিও করি, পার্কে ঘুরাঘুরি করি এবং পরিশেষে সন্ধ্যায় গোয়াংজুর উদ্দেশে রওনা হই। গোয়াংজুতে পৌঁছে আমরা ‘সানওয়ে লু’ এলাকায় যাই। সেখানে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ‘রাঁধুনী চায়না’তে দেশি স্টাইলে ভর্তা-ভাজি, সবজি, ডাল-ভাত, বেগুন ভাজি, মাংস, কাবাব, দই ইত্যাদি দিয়ে পরিতৃপ্তির সঙ্গে রাতের খাবার শেষ করি।
গোয়াংজুতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রচুর আনাগোনার কারণে এই অঞ্চলে আরো বেশকিছু হোটেল হয়েছে, যেমন ঢাকা হোটেল ও বারাকাত হোটেল। ধানসিঁড়ি নামক হোটেলও দেখতে পাই।
বে পার্ক : সেনজেন বে পার্ক চীনের শেনজেন শহরের একটি সুন্দর ও জনপ্রিয় পার্ক, যা তার মনোরম দৃশ্যের জন্য পরিচিত। এই পার্কটি ‘শেনজেন বে পার্ক’ নামে পরিচিত। এটি একটি সুন্দর সৈকত ও পার্কের সমন্বয়ে গঠিত। পার্কটি তার মনোরম দৃশ্য ও সুন্দর পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।
সেনজেন বে ব্রিজ: এটি একটি অসাধারণ সাসপেনশন ব্রিজ, যা চীনের আধুনিক শহর সেনজেন ও হংকংয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো। এটির অবস্থান সেনজেন ও হংকংয়ের মধ্যে।
শেষ পর্ব : গোয়াংজুতে অর্থাৎ চীনের এই শহরটিতে দুদিন কাটাই। তৃতীয় দিন রাতের ফ্লাইটে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের উদ্দেশে উড়াল দিই। যথারীতি চার তারকা-বিশিষ্ট সমারসেট হোটেলে বুফে প্রাতরাশ শেষে আমরা রুমে খানিক বিশ্রাম নিই। সকাল ১১টায় যার যার লাগেজ রিসিপশনের লবিতে রেখে দিই। এরপর যে যার মতো শহরে হালকা কেনাকাটার জন্য বেরিয়ে যাই।
চীনের সব হোটেলেই চেক আউট টাইম সকাল ১১টায় এবং চেক ইন টাইম বেলা ১টায়। আমরা ইচ্ছামতো ঘুরেফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। প্রায় ৪টা নাগাদ নিজ নিজ লাগেজ সংগ্রহ করে আমাদের নির্ধারিত বাসে গোয়াংজু এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হলাম। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমরা বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হলাম এবং বাংলাদেশের সময় রাত সাড়ে ১০টায় আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই সহিসালামতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম। এভাবেই প্রচুর ব্যস্ততা আর আনন্দের মধ্য দিয়ে আমাদের চীন ভ্রমণের ঘোরলাগা আটটি দিনের সমাপ্তি হলো। এটি আমাদের ৪০ জনের একটি বড় দল ছিল। সবাই সবাইকে চিনতাম না। তবুও এই কটি দিনে আমরা সবাই একে অপরের অনেক কাছাকাছি চলে এসেছিলাম, একটি পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিলাম।
লেখক: লে. কর্নেল (অব.)

চিকিৎসা কোনো বাণিজ্য, এটি সেবার পেশা বলে মন্তব্য করেছেন কিংবদন্তি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী। চিকিৎসকদের মানবিকতা ও পেশাগত সততার সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
৭ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রশাসনিক, আর্থিক ও অবকাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ২০ দফা দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক (ইউটিএল)।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কর প্রশাসন এখন প্রযুক্তিনির্ভর ও স্বচ্ছ ব্যবস্থার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ।
৮ ঘণ্টা আগে
জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতার প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। রবিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ডাকসু জানায়, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসন-কাঠামোর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলন।
৮ ঘণ্টা আগে