সাজের অনুষঙ্গ গহনা

তনিমা রহমান
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৫৮

সাজের অন্যতম অনুষঙ্গ গহনা। এটি ছাড়া নারীর সাজ পূর্ণতা পায় না। তা ছাড়া নারীরা সব সময় গহনাপ্রেমী। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আধুনিক ফ্যাশনপ্রিয় নারীরা বিভিন্ন ধরনের মেটালের তৈরি গহনার প্রতি বেশি আকৃষ্ট।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ফুটপাত থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের জুয়েলারির দোকানগুলোয় উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। ঈদের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পছন্দমতো নানা ধরনের গহনা কিনতে তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের নারীরা জুয়েলারি দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

ঈদ আনন্দকে বাড়িয়ে তুলতে নগরবাসী কেনাকাটার যুদ্ধে ক্লান্তিহীন কেনাকাটা করছেন। এখন নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনতে সবাই ছুটছেন প্রসাধনীর দোকানে। কেউ নিজের জন্য আবার কেউ উপহার দেওয়ার জন্য কিনছেন।

দামে অনেকটা সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য হওয়ায় ঈদের বাজারে চলছে ইমিটেশনের গহনার দাপট। এসব গহনা দেখতে একেবারে সোনার মতোই চকচকে। দৃষ্টিনন্দন এসব গহনা কিনতে দোকানে ভিড় করছেন তরুণীরা।

রাজধানীর মিরপুর-১০ ও নিউমার্কেট ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়ে। এসব মার্কেটের ইমিটেশন ও রুপার গহনার দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, তরুণী ও নারীরা দামাদামি করছেন। ঈদে শাড়ি বা থ্রি-পিসের সঙ্গে মিলিয়ে পড়ার জন্য কানের দোল, আংটি, গলার হার, চুড়ি ও ব্রেসলেট কিনছেন।

দোকানিরাও গলার হার, চুড়ি, টিকলি, নাকফুল, পায়েল, নূপুর, গলার চেইন, বাজুবন্ধ, ব্রেসলেট, আংটি, নথ, কানের দুল, লকেট, ঝুমকাসহ অসংখ্য গহনার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এসব গহনা আসল স্বর্ণ বা রুপার তৈরি নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন রঙের পাথর ও পুঁতি দিয়ে তৈরি গহনারও চাহিদা রয়েছে।

তামা, পিতল বা ব্রোঞ্জের মতো সহজলভ্য ও কমদামি ধাতু দিয়ে নিখুঁতভাবে তৈরি করার পর দৃষ্টিনন্দন করতে গ্যালভানাইজিং পদ্ধতির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে সোনালি প্রলেপ। আর এটুকুতেই স্বর্ণের বিকল্প হয়ে ক্রেতার চাহিদা পূরণ করছে ইমিটেশন বা ‘নকল স্বর্ণ’। আসন্ন ঈদ কেন্দ্র করে তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ইমিটেশনের তৈরি এসব গহনা।

বিক্রেতারা বলেন, এসব ইমিটেশনের গহনা দামে কম ও মানে ভালো হওয়ার কারণে বর্তমানে স্বর্ণের জায়গা অনেকটা দখল করে নিয়েছে। একটা সময় নারীর অলংকার বলতেই শুধু স্বর্ণ ও রুপার গহনা বোঝালেও গত কয়েক বছরে সেই চিত্র পাল্টে গেছে।

এমন কোনো গহনা নেই, যা ইমিটেশনের হয় না। বিয়ে, গায়ে হলুদ, পার্টি কিংবা ঘরোয়া অনুষ্ঠানসহ সবকিছুতেই ইমিটেশনের ব্যবহার উপযোগী গহনা রয়েছে। স্বর্ণ-রুপার গহনার চেয়ে দাম অনেকটা কম হওয়ায় ক্রেতাসাধারণের মধ্যে ইমিটেশনের গহনার চাহিদাই বেশি।

অন্যদিকে সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর মার্কেট, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি ফুটপাতের ভাসমান গহনার দোকানেও ঈদ কেন্দ্র করে নারীদের বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সঙ্গে রঙ ও ডিজাইন মিলিয়ে গলার মালা, কানের দুল, হাতের চুড়ি, ব্রেসলেট ও পছন্দের আংটি কিনছেন।

চুড়ি ও বালা ৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ধাতুর তৈরি গহনা, পাথর বসানো কানের দুল ৫০ থেকে ৫০০, রঙিন পুঁতির মালা ১০০ থেকে ৩০০, গলা ও কানের সেট ১৫০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর মার্কেটে আসা সারা ও আদিবা বলেন, পরিবারের সব সদস্যের ও নিজের পোশাক, জুতা কেনাকাটা শেষ করেছি। এখন নিজের জন্য গহনা, ব্যাগ ও কসমেটিকস কিনছি। তবে ঈদ সামনে রেখে গহনার দাম অনেক বেশি। ফলে একটু চিন্তাভাবনা করে কিনতে হচ্ছে।

দোকানি জিসান বলেন, সবাই ঈদের শাড়ি বা থ্রি-পিসের সঙ্গে ম্যাচিং করে পরতে অলংকার নিচ্ছেন। হোয়াইট গোল্ডের আদলে বানানো গহনার চাহিদাও বেশ ভালো। এসব গহনার দাম ক্রেতাদের হাতের নাগালে হওয়ার কারণে ভালো সাড়া পাচ্ছি। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা দামের গহনা রয়েছে। দাম নির্ভর করছে এর ওজন ও স্টাইলের ওপর।

ক্রেতারা বলেন, স্বর্ণের গহনার দাম অনেক বেশি। ঈদসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরার জন্য ইমিটেশনের গহনা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি উপযোগী। গলার হার থেকে শুরু করে পায়ের নূপুর ও পায়েল পর্যন্ত সবকিছুই মিলছে অল্প টাকায়। তা ছাড়া ইমিটেশনের সবচেয়ে বড় সুবিধা এ বছর এক ধরনের ডিজাইনের গহনা কিনলে পরের বছর আরেক ধরনের কেনা যায়।

মিরপুর মার্কেট করতে আসা ক্রেতা আদিবা বলেন, ইমিটেশনের গহনার চাহিদাই বেশি। তবে বেশি দামের জন্য বেশ কিছু দোকান ঘুরতে হচ্ছে। শপিং মলগুলোয় গহনার দাম নির্ধারিত থাকলেও ছোট দোকানগুলোয় তা নির্ধারণ করা নেই। ফলে যার কাছে যত দাম বাড়িয়ে বলা যায়। সেভাবেই চলছে তাদের ব্যবসা।

ফুটপাতের গহনার মান ততটা ভালো হয় না। তারপরও দামাদামি করে শপিং মলের চেয়ে কম দামে কেনা যায়। তবে এক দরের দোকান থেকে কিনলে মান ভালো পাওয়া যায়। এ জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হয়।

বিষয়:

গহনাসাজ
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত