‘মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে না—এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করব!’

এমরানা আহমেদ
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ১০: ৩১

‘প্রতিদিনই মেয়েকে আমি স্কুলে নিয়ে যাই, কিন্তু গতকাল যাইনি। আমার এক ভাই সায়মাকে স্কুলে নিয়ে যায়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে বলে, আম্মু, স্কুলে যাচ্ছি, টাটা বাই বাই। এটাই যে আমার মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা ছিল, বুঝতে পারিনি। দুপুরে ফেসবুকে জানতে পারি, আমার মেয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেছে।’ এভাবেই মেয়ের সঙ্গে শেষ স্মৃতি স্মরণ করে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় নিহত সায়মা আক্তারের মা রিনা বেগম। সোমবার ২১ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হয় ৯ বছরের সায়মা আক্তার। সে ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

বিজ্ঞাপন

সায়ান ইউসুফের চাচাতো ভাই পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘সবসময়ই হাসিখুশি থাকত সে। মেধাবী আর বিনয়ী হওয়ায় সবারই প্রিয় ছিল। গ্রামে এলে ছোটাছুটি করত, খেলত। সেই সায়ান আজ কফিনে বিদায় নিচ্ছে।’ রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় ক্লাসে থাকা অবস্থায় দগ্ধ হয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সায়ান ইউসুফ। পরিবারের সদস্যরা জানান, সেখান থেকে তাকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৩টায় সায়ান মারা যায়। সায়ান মাইলস্টোন কলেজ শাখার রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এএফএম ইউসুফ ও স্কুল শাখার রসায়নের শিক্ষক শামীমা শাম্মীর ছেলে। মা শামীমা শাম্মী জানান, ‘গতকালের সকাল অন্য দিনের মতোই ছিল। প্রতিদিনের মতোই স্কুলের পোশাক পরে স্কুলে গিয়েছিল সে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখত সে। কিন্তু কে জানত, সেদিনই তার জীবনের শেষ দিন।’ পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা ৩টায় জানাজা হয়েছে সায়ানের। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা ও তানভীর আহমেদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও সখীপুর উপজেলায় দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়িতে তাদের দাফন করা হয়। নিহত সায়মার বড় ভাই সাব্বির হোসেন চলতি বছর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেছে। ছোট বোনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে, ‘তুই আমার কলিজা, তুই আমার জান। প্রতিদিন আমরা একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। এখন আমি কাকে নিয়ে স্কুলে যাব? তুই কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলি? আমি তোকে ছাড়া বাঁচব না।’

সায়মার বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমার এক বন্ধু ফোন করে জানান, স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপর সারা দিন খোঁজাখুঁজি করেছি, পাইনি। রাত ৮টায় জানতে পারি সিএমএইচে মরদেহ আছে। পরে লাশ নিয়ে এসেছি। গত রাতেও মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিল। কতবার চুমু দিয়েছে, তার হিসাব নেই। এরপর আর মায়ের সঙ্গে কথা হয়নি। আমার মেয়ে আর আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে না। এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করব!’

তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া শ্রেয়া ঘোষের ছুটি হয়েছে। মেয়েকে নিতে মা পপি ঘোষ রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকছিলেন। ঠিক সেই সময় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি স্কুলভবনে আছড়ে পড়ে। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৫২০ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে একটু পরপর কেঁদে উঠছিলেন পপি ঘোষ।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পপি ঘোষ বলেন, ‘আমার মেয়ের স্কুল ছুটি হয়েছে। অভিভাবকেরা সন্তানদের নিচ্ছিলেন। আমার যেতে পাঁচ মিনিটের মতো দেরি হয়েছে। স্কুলের ফটক দিয়ে প্রবেশ করছিলাম, এ সময় বিমান আছড়ে পড়ে।’ ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজে আসার পর একপর্যায়ে শ্রেয়াকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে নেওয়া হয় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। পপির সঙ্গে থাকা স্বজনেরা চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানান, শ্রেয়ার শরীরের আট-দশ শতাংশ পুড়ে গেছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ১৬৫ জন। মঙ্গলবার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ১১ জন।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত