নওশিনের সাফল্যের গল্প

ওমর শাহেদ
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ২৫

সুলতানা নওশিন জাহান তার নাম। ঢাকার নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএপি (ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক) থেকে এমবিএ পাস। তবে তিনি ব্যাংকের চাকরির দিকে যাননি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে নারী উদ্যোক্তা হয়েছেন। তার এদিকে ঝুঁকে পড়ারও ইতিহাস আছে। অনেক বছর আগে থেকেই তাদের পরিবারে কারো বিয়ে-শাদি হলে তিনি ডেকোরেশনের কাজ করতেন।

পরে যখন দেখলেন ওয়েডিং ইন্ডাস্ট্রি নামে বিশাল এক ব্যবসাক্ষেত্র চালু আছে, তখন থেকে তার শখ ওই পেশার দিকে ধাবিত হলো এবং তা পেশায় পরিণত হলো। এর মধ্যে তার ছেলে নাবহান জোবায়েদের প্রথম জন্মদিন পালনের সময় হলো। তিনিই পুরো আয়োজনের ডেকোরেশন করলেন। পরিবারের সবাই ধন্য ধন্য করলেন এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে পেশা হিসেবেই নিতে বললেন।

বিজ্ঞাপন

এরপরই জন্ম নিল তার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম লুক এন ফিল। তার ছোট বোন একটি কাজ এনে দিলেন। সেটি ছিল ঢাকার বনানীতে একটি শিশুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন। সেটি করার মাধ্যমে নওশিনের পেশাদার ভুবনে যাত্রা শুরু হলো। এখন পর্যন্ত তিনি এক হাজারের বেশি ইভেন্ট করেছেন। নওশিন জানালেন, ‘আমার করা সব ইভেন্টই আমার জন্য উল্লেখযোগ্য। আমার সব ইভেন্টের বিস্তারিতই মনে আছে।’ কী কী ধরনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম করেন—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, ‘আমি জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, বেবি শাওয়ার, ব্রাইডাল শাওয়ার, সুন্নতে খতনা, মেহেদি উৎসব, এনগেজমেন্ট, গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত, দোকান উদ্বোধন, করপোরেট, এজিএম—সব ধরনের ইভেন্টই করি।’

তবে আজকের বহুমুখী ও সফল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নারী কর্মীর এই ভুবনে যাত্রাপথ খুব একটা সহজ ছিল না। একদম ছোট থেকে শুরু হয়েছে তার হাঁটি-হাঁটি পায়ের গল্প। বিশাল আকারের কাজও তিনি করেছেন। প্রচণ্ড রোদে যেমন কাজ করেছেন, তেমনি ঝড়ের মধ্যেও কাজে মগ্ন থাকতে হয়েছে তাকে।

ততত

সারা রাত জেগে কাজ করেছেন, কুয়াশাও সামলেছেন কাজের মধ্য থেকে। অনেক হাসিখুশি অমায়িক তারকার সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রচণ্ড নিয়মনিষ্ঠ ব্যক্তিকেও সামলেছেন। এমনকি কোভিডের মধ্যেও কাজ করেছেন। তিনি বললেন, ‘আসলে একটি কাজ সম্পন্ন করার পর ক্লায়েন্টদের হাসিমুখ দেখতে খুব ভালো লাগে। ইভেন্টটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হলে আমার নিজেরও খুব আনন্দ হয়।’

তার প্রতিষ্ঠানের নাম হলো ‘লুক এন ফিল – ইভেন্ট সলিউশন’; ঢাকার মোহাম্মদপুরে অফিস। গল্প করতে করতে তিনি তারকাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানালেন, ‘আমার প্রথম সেলিব্রেটি কাজ ছিল লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার মুমতাহিনা চৌধুরী টয়ার। এরপর আমি আরো অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি।’ আর কষ্টের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘একটি কাজের সময় তৃতীয় পক্ষের জন্য ক্লায়েন্টের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হলো। এরপর ক্লায়েন্ট আমাদের কিছু উপকরণ নষ্ট করে ফেললেন এবং তিনি কোনো ক্ষতিপূরণও দেননি। তখন মনটি খুব ভেঙে পড়ল এবং প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলাম।’

তার পরিবার এ কাজে তাকে খুব সহযোগিতা করেন। স্বামী মোহাম্মদ জোবায়েদ আদনান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তিনি তাকে সবসময় উৎসাহ দেন। একমাত্র ছেলে নাবহান জোবায়েদ ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সেও মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন সাইটে যায় এবং মায়ের কাজ দেখে খুব খুশি হয়। সুলতানা নওশিন জাহান জানালেন, ‘পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া আমার জন্য কাজ করা খুব কঠিন হতো। আমার মতো যাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, তাদের জন্য পরিবারের উৎসাহ কাজ করতে পারার একমাত্র প্রেরণা।’ তার স্বামী তাকে সুপার ওম্যান হিসেবে দেখেন। তার ধারণা স্ত্রী চাইলেই সব করতে পারেন। শুধু চাওয়ার জন্য অপেক্ষা।

শুরুটি করেছিলেন তিনি মোটে একজন কর্মী নিয়ে। আস্তে আস্তে তার ব্যবসার পরিধি বেড়েছে, লোকবলও বেড়েছে। বর্তমানে লুক অ্যান্ড ফিল – ইভেন্ট সলিউশনে সাতজন কর্মী কর্মরত আছেন। ডিজাইনার, পরিকল্পনা সহকারী, ম্যানেজার, ডিজিটাল মার্কেটার প্রভৃতি পদে তারা চাকরি করেন। নিজ প্রতিষ্ঠানে তিনি শুধু দায়িত্বশীলই নন, বরং অত্যন্ত মানবিক গুণসম্পন্ন নারীপ্রধান। তবে কাজের ক্ষেত্রে দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। তার টিমকে তিনি শুধু নির্দেশনাই প্রদান করেন না, প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করেন। তিনি চান তার সহকর্মীরা তাকে শুধু বস হিসেবে না দেখে একজন গাইড ও প্রেরণাদায়ী নেতা হিসেবে দেখুক। আর প্রতিষ্ঠান নিয়ে তার স্বপ্ন—‘লুক এন ফিল – ইভেন্ট সলিউশন’ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত