কার্টুন কণ্ঠে মুগ্ধতা আনেন জেরিন

তানজিদ শুভ্র
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১৮

শিনচ্যানের দুষ্টুমি, ডোরেমনের কোমলতা কিংবা মিনার সরল উচ্চারণ সব যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে এক তরুণীর কণ্ঠে। তিনি আয়শা আক্তার জেরিন। একদিকে দায়িত্বশীল নার্সিং শিক্ষার্থী, অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় মুখ; অসাধারণ মিমিক্রি প্রতিভার জন্য। একাডেমিক জীবনের গাম্ভীর্যের বাইরে তার প্রাণবন্ত কণ্ঠ আর অনুকরণ দক্ষতা প্রতিদিনই নেটিজেনদের মুখে হাসি ফোটায়।

ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জ নার্সিং কলেজের চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন জেরিন। তবে পড়াশোনার বাইরেও তার পরিচিতি দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি একজন দক্ষ মিমিক্রিকার ও ভয়েস ওভার আর্টিস্ট। বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় তিনি নিখুঁতভাবে অনুকরণ করতে পারেন শিনচ্যান, ডোরেমন, মিনা, সিসিমপুরের ইকরি, নিনজা হাতোরিসহ ৩০টিরও বেশি কার্টুন চরিত্রের কণ্ঠস্বর। শুধু কার্টুন নয়, বিভিন্ন ভিডিও ডকুমেন্টারি ও প্রতিবেদনে ভয়েস ওভার করেও তিনি নজর কেড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জেরিনের এই যাত্রা এত সহজ ছিল না। শৈশবে তার বাকপ্রকাশ ছিল অস্পষ্ট। ক্লাসে শিক্ষক কিংবা সহপাঠীরা তার কথা বুঝতে পারত না। এ নিয়ে অভিভাবকদের কাছে শিক্ষকদের অভিযোগও পৌঁছাত। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটি হাল ছাড়েনি। মনে জন্ম নেয় এক কঠিন সংকল্প—এই কণ্ঠ দিয়েই একদিন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবেন। আজ সেই দুর্বলতাই তার শক্তিতে রূপ নিয়েছে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার মাস্টারপাড়া গ্রামের মেধাবী জেরিন এসএসসি ও এইচএসসি কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন। করোনাকালে ঘরে বসে কার্টুন দেখতে দেখতে চরিত্রগুলোর কণ্ঠ অনুকরণের চেষ্টা শুরু করেন। ইউটিউব ও ফেসবুকের ভিডিও দেখে নিজেই শিখে ফেলেন ভয়েস টেকনিক। এক বছরের অনুশীলনে ৩০টিরও বেশি চরিত্রের অনুকরণে হয়ে ওঠেন নিপুণ।

জেরিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কার্টুন দেখতে ভীষণ ভালো লাগত। চরিত্রগুলোর কণ্ঠস্বর আমার কাছে ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। একসময় নিজের কণ্ঠেই সেগুলো তুলতে ইচ্ছে হলো। ধীরে ধীরে আমি নিজেই ভয়েস শিখে ফেললাম।’

শিনচ্যানের খুনসুটি, ডোরেমনের কোমলতা কিংবা মিনার শিক্ষণীয় উচ্চারণÑজেরিনের কণ্ঠে সবকিছুই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। তার মিমিক্রি ভিডিওগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যাকে একসময় বোঝা যেত না, আজ সেই কণ্ঠই হয়ে উঠেছে স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার।

ভবিষ্যৎ নিয়ে জেরিনের দৃঢ় প্রত্যয়Ñ‘একদিন চাই ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে।’

জেরিন শুধু একজন মিমিক্রিকার নন—তিনি সংগ্রামজয়ী এক কণ্ঠশিল্পী। তিনি প্রমাণ করেছেন, আত্মবিশ্বাস থাকলে দুর্বলতাকেও শক্তিতে রূপ দেওয়া যায়। আজ তিনি হয়ে উঠেছেন সাহস, সম্ভাবনা আর তারুণ্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত