উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম

বাবুল হোসেন
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ২০
পাবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অব ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট’

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি)। দেশের ইতিহাসে এ বছর প্রথমবারের মতো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অব ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট (আইআইইডি)’। উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য এ-সংক্রান্ত আলাদা কোনো ইনস্টিটিউট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর আগে গড়ে ওঠেনি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ‘সেল’ বা ‘সেন্টার’ আছে, তবে সেগুলো সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচালিত করে থাকে।

বিজ্ঞাপন

উদ্ভাবনী ও উদ্যোক্তা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনোভেশন, ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ সেন্টার (আইসিই)’ আছে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ২১টি বিভাগের পাশাপাশি এ ইনস্টিটিউট তরুণদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করল।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা তৈরির জন্য এই প্রথম এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হলো। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল-আওয়াল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যোগদান করার পর শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন, সহশিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা উন্নয়নের জন্য ব্যাপক তাগিদ দেন। এরই প্রেক্ষাপটে তিনি এ বছর পাবিপ্রবিতে ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ ছাড়াও ‘রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজি ট্রান্সফার সেল’ এবং ‘ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কোলাবোরেশন সেল’ প্রতিষ্ঠা করেন।

উচ্চশিক্ষা শুধু ডিগ্রি অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা মানুষের মেধা, সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতাকে গড়ে তোলার সর্বোচ্চ প্ল্যাটফর্ম। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী আজকের বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞান বিতরণ করে না; বরং নতুন জ্ঞানের উৎপাদন ও তা প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। আর এই জায়গাতেই ইনোভেশন ও এন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট পাবিপ্রবিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

Awal

পরিবর্তিত দুনিয়ার সঙ্গে টিকে থাকতে হলে তরুণ প্রজন্মকে হতে হবে উদ্ভাবনী চিন্তার ধারক এবং সেইসঙ্গে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা মনে ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশও এখন উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। তবে এজন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা, গবেষণা ও ইনোভেশনের সুযোগ। ইনস্টিটিউটটি তরুণদের শুধু কর্মসংস্থান প্রত্যাশী নয়, বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবে। গবেষণা, প্রশিক্ষণ, আইডিয়া, ইনকিউবেশন, উদ্যোক্তাদের সহায়তা এবং শিল্প-অ্যাকাডেমির মধ্যে এক মেলবন্ধন তৈরি করবে।

যেসব কাজ করবে : বর্তমান চাকরির বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তরুণদের বিভিন্ন ধরনের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্স করার সুযোগ থাকবে। স্বল্পমেয়াদি (শর্ট) কোর্সের মধ্যে তিন থেকে ছয় মাসের কোর্স হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি (ডিপ্লোমা) বা প্রফেশনাল কোর্স এক বছর বা কমবেশি হতে পারে। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (এইচআরএম), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ফিন্যানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট, আইসিটিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হবে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। ইনস্টিটিউটটি চালু হওয়ার পরপরই বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (বিআইএম) সঙ্গে এ বছরের ১৭ আগস্ট একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সার্টিফিকেট প্রদান করবে। বিআইএমের প্রশিক্ষক ও পাবিপ্রবির শিক্ষকরা একসঙ্গে কোর্স পরিচালনা করবেন। গবেষণা, প্রকাশনা এবং নীতিগত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত, গাইডলাইন, শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইন্টার্নশিপের সুযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয়ে একসঙ্গে সহযোগিতা আদান-প্রদান করবেন।

শিল্প ও অ্যাকাডেমির সঙ্গে সম্পর্ক : আমাদের দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় ও সংযোগ খুবই দুর্বল। ফলে গবেষণার ফলাফল শিল্পে প্রয়োগ করা হয় না। এই ইনস্টিটিউট প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে শিল্প খাতের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেতুবন্ধ তৈরি করবে। এতে যেমন শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে, সেইসঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানও উপকৃত হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো মূলত পোশাকশিল্পনির্ভর এবং সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮২ ভাগ আয় আসে তৈরি পোশাকশিল্প থেকে এবং বিশ্বে অবস্থান দ্বিতীয়। কিন্তু ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে এবং টিকে থাকতে হলে বহুমুখী উদ্যোক্তা খাত গড়ে তুলতে হবে। ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধিকরণ ও বৈচিত্র্য আনতে হবে। আইটি, ই-কমার্স, গ্রিন টেকনোলজিসহ নানা খাতে তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে এই ইনস্টিটিউট কাজ করবে। এর ফলেই তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল-আওয়াল নতুন ইনস্টিটিউট সম্পর্কে বলেন, ‘ইনস্টিটিউট অব ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক।

বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞান বিতরণের জায়গা নয়; জ্ঞানের সৃজন, প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের কেন্দ্র। শিক্ষার্থীদের প্রচলিত চাকরির পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী, সৃজনশীল উদ্ভাবক ও সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকতে হলে উদ্ভাবনী চিন্তা, গবেষণা ও উদ্যোক্তা মনোভাব ছাড়া কোনো জাতি এগোতে পারে না। এই ইনস্টিটিউট তরুণদের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেবে, তাদের আইডিয়াকে রূপান্তর করবে কার্যকর উদ্যোগে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও অ্যাকাডেমির মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি করবে।’

ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণদের আইডিয়াগুলো শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করব। গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হিসেবে তৈরি করাই হবে আমাদের লক্ষ্য।’

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত