পুলিশের গুলিতে ১৬ জুলাই আবু সাঈদসহ সারা দেশে ছয়জন নিহত হওয়ার পর ১৭ জুলাই দুপুর ২টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে নিহত শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাজা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেলা ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্ররা রাজু চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন এবং কফিন মিছিলে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন ছিল। ফলে ক্যাম্পাসে ঢোকার পথে ছাত্রদের বাধা দেওয়া হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী ভোগান্তিতে পড়েন। রাত ৮টার দিকে আন্দোলনকারীরা পুনরায় ক্যাম্পাসে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন।
এর আগে বিকাল ৪টায় জানাজা শেষে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী কফিন মিছিল শুরু করেন, যা রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টিএসসি মোড়ে গিয়ে থামে। এরপর তারা পলাশীর দিকে যান। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। জবাবে শিক্ষার্থীরাও পুলিশের ওপর ইট নিক্ষেপ করেন। এ সময় মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারা টিএসসি চত্বর, রাজু চত্বর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সংঘর্ষে টিয়ার শেলের আঘাতে অনেকে আহত হন।
এদিকে অবস্থান নেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত দাবি দিয়ে নিরপেক্ষ বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি, বরং শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ রাফি আমার দেশকে বলেন, ১৬ জুলাই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিলে যোগ দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সেদিন ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল পুলিশ। তখন পুলিশ অনেক আক্রমণাত্মক আচরণ করে।
শাফকাত আহমেদ নামে ঢাকা সিটি কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা গায়েবানা জানাজায় অংশ নিতে ভাগ ভাগ করে রাজু চত্বরে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে বাধাপ্রাপ্ত হই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তাড়িয়ে দেয় এবং ক্যাম্পাসকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করে। পাশাপাশি নিহতদের জন্য গায়েবানা জানাজার চেষ্টা করলেও পুলিশ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসমাবেশে হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস বন্ধ করে ছাত্রদের আবাসিক হল খালি করার নির্দেশ দেয়।
এদিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিহতদের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দেন এবং কোটা সংস্কারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
কিন্তু আন্দোলন তখন তুঙ্গে। শিক্ষার্থীরা ১৮ জুলাইয়ের জন্য সারা দেশে পরিবহন বন্ধ রাখার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
১৭ জুলাইয়ের এই ঘটনাবলি গণঅভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে রয়ে যায়, যেখানে শিক্ষার্থীদের গণআন্দোলন ও রাষ্ট্রীয় কঠোরতার মুখোমুখি সংঘর্ষ দৃশ্যমান হয়।


আবু সাঈদ ও ওয়াসিমের হত্যাকাণ্ড স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করে আন্দোলনে
প্রকাশ্যে সায়ানের ‘আমি জুলাই-এর গল্প বলবো বন্ধু’