জুলাই বিপ্লব

এক বছরেও গুলিবিদ্ধ আনারুলের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ

জসিম উদ্দিন, খানসামা (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১০: ৪০

বিবেকের তাড়নায় রাস্তায় নেমেছিলেন গাজীপুরে কর্মরত গার্মেন্টশ্রমিক আনারুল ইসলাম। প্রতিবাদের মিছিলে গিয়েছিলেন একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন বুকে নিয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ গুলিবিদ্ধ। আক্ষরিক অর্থেই তার শরীরে এখনো রয়ে গেছে অন্তত ১০টি রাবার বুলেট। এক বছর ধরে সেসব গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি দুঃসহ এক মানবেতর জীবনের ভার কাঁধে নিয়ে। কিন্তু তার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ—না রাষ্ট্র, না রাজনৈতিক কোনো নেতা, না মানবতা।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দা আনারুল ইসলাম পেশায় ছিলেন গাজীপুরের চান্দুরা এলাকার একটি গার্মেন্টের শ্রমিক। সংসারে স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানই ছিল তার জীবনের সবটুকু। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গাজীপুরের চান্দুরা চৌরাস্তা মোড়ে অনুষ্ঠিত একটি স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নেন তিনি। হঠাৎ মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ। এতে গুলিবিদ্ধ হন আনারুল।

বিজ্ঞাপন

প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখান থেকে কোনো চিকিৎসা নথি বা প্রতিবেদন তাকে দেওয়া হয়নি। পরে ফিরে আসেন নিজ এলাকায়। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ একাধিক জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছেন; কিন্তু অপারেশনের মতো উন্নত চিকিৎসা অর্থের অভাবে হয়ে ওঠেনি। আজও তার মাথা ও পিঠে রয়ে গেছে সেই বুলেটের অস্তিত্ব। জীবন-জীবিকা সব থেমে গেছে। স্বাভাবিক চলাফেরাও আর সম্ভব নয়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এই শ্রমিক। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এখন নিজের সংসারেই বোঝা।

আনারুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, ‘এতজনের মৃত্যুর মিছিল দেখে আমিও আর বসে থাকতে পারিনি। বিবেকের তাগিদে মিছিলে অংশ নিয়েছি। সেই মিছিলে অংশ নিয়ে আমার শরীরে এখনো ১০টি গুলি। হাত-পা ঠিকমতো কাজ করে না। কোনো কাজ করতে পারি না। দুঃখের বিষয়, কেউ খোঁজ নেয় না, কেউ পাশে দাঁড়ায় না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি, ভাগ্যে কী আছে জানি না।’

আনারুলের ভাই এরশাদ আলী আমার দেশকে জানান, ‘শুধু চিকিৎসাই নয়, সংসার চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন আনারুল। পাটখড়ি আর জরাজীর্ণ টিনের ঘরে শুয়ে-বসে দিন কাটছে তার। সরকার বা কোনো সংস্থা তাকে সহায়তা করলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারত।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি রহিদুল ইসলাম রাফি বলেন, এই আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। তাই রাষ্ট্র হোক বৈষম্যহীন। জুলাই-আগস্টে আহত যোদ্ধাদের উন্নত চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে আনয়ন করার দায় রাষ্ট্রের। তাই আনারুলকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট সবার সুদৃষ্টি কামনা করছি।

খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও শামসুদ্দোহা মুকুল আমার দেশকে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আহত আনারুল চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে প্রাপ্ত এক্স-রেতে তার মাথা ও পিঠে ১০টি রাবার বুলেটের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে; কারণ বুলেট অপসারণসহ তার আরো বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন। কেননা, তিনি মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার আমার দেশকে বলেন, ‘আনারুলের বিষয়ে জানার পর আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে তিনি এখনো শরীরে গুলি বহন করছেন, যা উদ্বেগজনক। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এ বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবাও অবগত করব।’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত