Ad T1

দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন শহীদ জুয়েলের স্ত্রী

জাহিদুর রহমান প্রধান টুকু, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা)
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ২১

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার যুবক জুয়েল রানা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। চাকরি করতেন একটি গার্মেন্টে। তার দেওয়া টাকায় ভালোই চলছিল সংসার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হঠাৎ উলটপালট হয়ে গেল সব।

স্বৈরাচার পালানোর খবরে আনন্দ মিছিলে যোগ দেওয়ার পর ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে শহীদ হন জুয়েল। স্বামী হারিয়ে স্ত্রী দুলালী আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন দুই কন্যার ভবিষ্যৎ নিয়ে।

জানা যায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের শাখাহাতী গ্রামের মমতাজুর রহমান ব্যাপারী ও জমেলা বেগমের একমাত্র ছেলে জুয়েল। যিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কাজ করতেন গার্মেন্টে। তার উপার্জনেই চলত পরিবার। পরিবারে রয়েছে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই কন্যা। চাকরির ফাঁকে যোগ দিতেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট হাসিনার পলায়নের খবর পেয়ে গাজীপুরে আনসার একাডেমির সামনে সহকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন আনন্দ মিছিলে। সেখানে পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জুয়েল। সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় জুয়েলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তার সহকর্মীরা। চিকিৎসার অভাবে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন জুয়েলের বাবা-মা। তারা জানান, অকালে ছেলে হারানোর ব্যথা যে কী কষ্টকর, তা তারা উপলব্ধি করছেন। সন্তান যে তাদের মাঝে নেই, সেটা তারা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। এ ছাড়া সংসার চালানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। তারপরও তাদের ছেলে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেÑ এটা ভেবে তারা গর্ববোধ করেন। বর্তমান সরকার জুলাই-আগস্টে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সহযোগিতায় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান জুয়েলের বাবা-মা। সে সঙ্গে ছেলে হত্যার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের উপযুক্ত বিচার চান।

এদিকে স্বামী হারিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জুয়েলের স্ত্রী দুলালী আক্তার। স্বামীর অবর্তমানে তিনি দুই মেয়ে জুঁই আক্তার ও জিন্না আক্তারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। তিনি বলেন, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ছোট্ট দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে সাজানো-গোছানো পরিবারটি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসন, বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। তবে এ অর্থ দিয়ে সংসার চালানো কঠিন।

জুয়েলকে আর কখনো ফিরে পাবেন না তার বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানরা। তবে তাকে হত্যার উপযুক্ত বিচারসহ পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক— এটাই উপজেলাবাসীর দাবি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত