আমার দেশ

ছুটির দিনেও উত্তাল ছিল দেশ, শাহবাগ অবরোধ

আবু সুফিয়ান
ছুটির দিনেও উত্তাল ছিল দেশ, শাহবাগ অবরোধ

কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের ১২ জুলাই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। দিনটি শুক্রবার হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। একই সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করেন।

এর আগের দিন, ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ১ জুলাই থেকে এ আন্দোলন টানা চলছিল। সেদিন দুটি স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের বাধার কারণে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারেননি আন্দোলনকারীরা।

বিজ্ঞাপন

বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টার জন্য অবরোধ করেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। অবরোধ চলাকালে শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার গাড়িগুলোর জন্য পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সেদিন বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিকাল সাড়ে ৪টায় কলাভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বাহাদুরশাহ পার্ক, কবি নজরুল কলেজ হয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে শেষ হয়।

ঢাকার বাইরেও অন্তত ১৫টি স্থানে আন্দোলন হয়েছিল। তবে মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বাধায় শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে পারেননি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকাল ৫টার দিকে স্টেশন বাজারসংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করেন। এই বিক্ষোভে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছিলেন।

চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে আলমাস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বটতলা হয়ে ১৪টি হল অতিক্রম করে রাত পৌনে ৯টার দিকে শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মশাল মিছিল করেছিলেন।

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ৬টায় ক্যাম্পাসের বাইরে সড়কে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশি বাধায় আটকে যান। পরে তারা ১ নম্বর ফটকে অবস্থান নেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে বিকাল সাড়ে ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবন ও আনসার ক্যাম্পের সামনে যায়। ওই দিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাধা দেওয়ার সময় ভিডিও ধারণ করায় নজরুল হলে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা।

ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, মুমিনুন্নেছা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নীলফামারীর সৈয়দপুর, বগুড়া এবং নোয়াখালীর মাইজদীতেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন। বগুড়ায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সাতমাথা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। একই দিন বিকাল ৫টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা তা অবরোধ করেন। সেই সময় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগের একদল ক্যাডার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে এক শিক্ষার্থীকে হলে নিয়ে মারধর করে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ১২ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিনে পরিণত হয়েছিল, যেখানে দেশজুড়ে ছুটির দিনেও আন্দোলন থেমে থাকেনি।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন