স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর এখন অনেকেরই আগ্রহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। এ বিষয়ে সরব রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে তারা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এরই মধ্যে সরকারের তরফ থেকে আগামী বছরের শেষ অথবা পরের বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকেই নির্বাচনের রোডম্যাপ বা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন কমিশনে চলছে জোর প্রস্তুতি।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসিতে চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। তবে ভোট আয়োজনের দিনক্ষণের জন্য সরকারের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছে নাসিরের কমিশন।
গত ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোট, আর সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার। বর্তমানে ইসির ভাবমূর্তি ফেরাতে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে চলছে সংস্কার কমিশনের কাজ। সংস্কার কমিশন বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে শিগগিরই বেশ কিছু সুপারিশ জমা দেবে বলে জানা গেছে।
বিএনপিসহ প্রতিটি দল যৌক্তিক সময়ের মধ্য সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই যৌক্তিক সময়ের মধ্য নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। এখনও আগের অবস্থানেই আছি।’
সম্প্রতি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন অতি দ্রুত হওয়া দরকার। একটি নির্বাচিত সরকার তাড়াতাড়ি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্রবিষয়ক যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, সেসব নির্বাচিত সরকারের পক্ষে দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে। নির্বাচিত সংসদ ও সরকারের মাধ্যমে আমাদের এই কাজগুলো করতে হবে।
নির্বাচন আয়োজনের সময়কাল নিয়ে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ আমার দেশকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে আমরা দেড় থেকে দুই বছরের কথা বলেছি। তবে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কমবেশি হতে পারে। তাছাড়া নির্বাচন আর সংস্কার আলাদা কোনো বিষয় নয়, এটা হাতে হাত ধরে চলার ব্যাপার। সংস্কারের মাঝে নির্বাচন নিহিত রয়েছে, তাই প্রথম দফায় যে ছয়টি কমিশন গঠিত হয়েছে, তার মধ্যে একটি হল নির্বাচন বিষয়ক। এরই মধ্যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা পেলে পরে কমিশন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে। এ বিষয়ে সব অংশীজন নিয়মিত মতামত দিয়ে যাচ্ছেন।’
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ আমার দেশকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে সমসাময়িক সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যে আমরা আশাবাদী। আমরাও চাই অতিদ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে এটাও বলছি, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক উপসচিব জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা অনেক বড় আয়োজন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন চাইলে তা ছয় মাসে করা সম্ভব।
ছয় মাসের যুক্তি দেখিয়ে ওই উপসচিব জানান, মাত্র কয়েক মাস আগেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সবার অভিজ্ঞতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন চাইলেই নির্বাচন করতে পারে না। সরকারের গ্রিন সিগন্যালের প্রয়োজন আছে। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী আজকে বললে আগামী ছয় মাসের মধ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারব।
তার মতে, ভোটার তালিকা হালানাগাদ চূড়ান্ত হয়েছে। এখন ভোট আয়োজনে লাগবে সরঞ্জাম কেনাকাটা ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ। সরঞ্জাম কিনতে সময় লাগবে ২০ দিন ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসে প্রয়োজন এক মাস।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ আমার দেশকে বলেন, নির্বাচনের বিষয়টা সরকারের ওপর। সরকার যখন বলবে তখনই নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন এমনভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে যে সরকার যখন চাইবে তখন যেন আমরা নির্বাচন করতে পারি।
সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি চাইলে কমিশন নিতে পারে জানিয়ে আমার দেশকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক ধরনের থাকে। সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করলে সেটা আইনের বিষয়। নির্বাচননী আইন প্রয়োগ হয় তফসিল ঘোষণার পরে। ফলে সংস্কারের সঙ্গে চাইলেই কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে পারে।
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, আমরা জনস্মুখে কোন রোডম্যাপ দেওয়ার কথা ভাবছি না। তবে আমাদের নিজেদের জন্য রোডম্যাপ আছে কোন কাজটা আগে করব, কোনটায় গুরুত্ব দেব। আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত রোডম্যাপ আছে।
সম্পাদনা: ইলিয়াস

