বিচার বিভাগ সংস্কার শিগগিরই: উপদেষ্টা রিজওয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ৩০

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বাস্তবায়ন শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জানান, বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিদ্যমান সিআরপিসিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হবে। অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের বিষয়ে জানাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। এতে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান জানান, বিচার বিভাগ সংস্কারের অংশ হিসেবে টেলিফোনে বা খুদে বার্তাসহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সমন জারি হবে, মামলায় সময় নেওয়ার ক্ষেত্রেও কয়বার হবে, সেটিও বলে দেওয়া হবে এবং রায়ের মধ্যেই এক্সিকিউশনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ যেটা আছে, ১৯৭৪ সালের একটা আইন ছিল। সেই আইনের অতিরিক্ত হিসেবে, সম্পূরক হিসেবে এই অধ্যাদেশ আজকে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে— অডিটের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কিছু মান আছে। সেই মান এবং চর্চা যেন বাংলাদেশের কম্পট্রলার এবং অডিটর জেনারেল মেনে চলেন। যাতে করে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যয় আমরা নিশ্চিত করতে পারি, স্বচ্ছতা আমরা নিশ্চিত করতে পারি।

বন উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, একটা শিল্পগোষ্ঠী কীভাবে কয়েকটা ব্যাংকে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, কত টাকা এ দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই জিনিসটা ভবিষ্যতে যাতে না হতে পারে, সেই জন্য করপোরেট সেক্টরে, ব্যাংক সেক্টরের শৃঙ্খলা আনার জন্য, জবাবদিহির জন্য আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য, ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ আজকে আমরা অনুমোদন দিয়েছি।

আমরা আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনায় আমাদের সাধারণ আমানতকারীদের আর পড়তে না হয়, সেজন্য এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা কীভাবে আনা যায়— বাংলাদেশ ব্যাংককে কতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হবে, সে কোন পর্যায় গিয়ে হস্তক্ষেপ করবে, এগুলো আইনে স্পষ্ট ছিল না। এখন এগুলো স্পষ্ট করা হলো।

তিনি বলেন, রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটা সুপারিশ ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই অধ্যাদেশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন— রাজস্ব সংগ্রহ এবং রাজস্ব সংক্রান্ত নীতি করার জন্য দুটি আলাদা কর্তৃপক্ষ হবে। সেই মোতাবেক রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশে আমরা দুটি কাজকে আলাদা করছি।

গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে সংশোধনী আনার কথা জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের সুবিধাভোগীদের জন্য ৯০ শতাংশ রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম বা অর্থনৈতিক অপরাধ যে গোষ্ঠীগুলো করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটা কমিটি গঠন করা হচ্ছে। প্রাথমিক কাজগুলো হয়েছে। এখন ফিন্যান্সিয়াল অপরাধে যারা জড়িত ছিলেন তাদের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করতে আলাদা কমিটি গঠন করেছি।

দেওয়ানী মামলার আইন ‘দ্য কোড অব সিভিল প্রসিডিউর - ১৯০৮’ (সিপিসি) তে বেশ কিছু সংশোধনী এনে আধুনিক করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। উপদেষ্টা রিজওয়ানা জানান, মামলায় কতবার সময় নেওয়া যাবে এমন বিষয় সংশোধন করা হয়েছে। লিস্টে পূর্ণ শুনানি ও আংশিক শুনানির মামলা কতবার আসবে সেগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া অনেকাংশেই সেকেলে রয়ে গেছে।

বিচার প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়নের কথা বলা হয়েছে। এখন থেকে সমন জারি টেলিফোন, এসএমএস ও আধুনিক ডিভাইসের মাধ্যমে করা যাবে বলে জানান তিনি। এছাড়া ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য যেসব মামলা করা হয় তার শাস্তি আগে ২০ হাজার টাকা ছিল। এখন সেটি পরিবর্তন করে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অভিন্ন জলরাশির পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুইটা আইন রয়েছে। এর একটিতে বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে প্রধান করে এই কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। চলতি বছরের গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিচার বিভাগের সংস্কারের জন্য ২৮ দফা সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত