আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে আজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ১০

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের অর্থছাড় বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তিতে পাওয়ার কথা ছিল ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অর্থছাড় দেয়নি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি। বেশ কিছু শর্তের বেড়াজালে আটকে আছে ঋণছাড়ের বিষয়টি। শর্তপূরণের সে অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে দুই সপ্তাহের সফরে আজ ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল।

বিজ্ঞাপন

আইএমএফের দলটির সঙ্গে অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে ১৭ এপ্রিল প্রেস ব্রিফিং করবে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের শুরুতে ৩০টিরও বেশি সংস্কারের শর্তে আইএমএফের সঙ্গে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে পতিত হাসিনা সরকার। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন খাতে সরকারের ভর্তুকি কমানো, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায় ও এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করা।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএমএফকে জানানো হয়েছে, এসব শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এটির বাস্তবায়ন হয়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো হলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশংকা থাকায় এ বিষয়ে সরকার খুব একটা আগ্রহী নয়। অপরদিকে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হচ্ছে, যার কারণে হঠাৎ ডলারের দাম খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

এ পদ্ধতিতে ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল আছে। অপরদিকে আইএমএফের শর্ত পূরণে গত জানুয়ারিতে বহু পণ্য ও সেবার ওপর অতিরিক্তি শুল্ক আরোপ করেছিল এনবিআর। অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু বড় ধরনের সমালোচনার মুখে অধিকাংশ পণ্য ও সেবার ওপর থেকে বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফলে আইএমএফের শর্ত পূরণে এনবিআরও পিছিয়ে রয়েছে।

তবে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে নতুন কৌশল নেওয়ার কথা বলছে এনবিআর। আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে হলে এনবিআরকে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে। কিন্তু এটিকে অসম্ভব বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এমন পরিস্থিতিতেও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ আগামী জুন মাসে একত্রে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। কারণ রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

এরপরও আইএমএফের ঋণছাড় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আইএমএফ যদি ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখে তাহলে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোও তাদের বাজেট সহায়তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসতে পারে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত