ড. ইউনূসের সঙ্গে জামায়াত-এনসিপির বৈঠক

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার আদেশ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ৩০

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিশেষ আদেশ রাষ্ট্রপতি নয়, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারি করার কথা বলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

বুধবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব দিয়েছেন দল দুটির নেতারা। এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্ব চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। পরে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠক করে।

বিজ্ঞাপন

বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, আইনের ব্যত্যয় না হলে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করবেন প্রধান উপদেষ্টা। রাষ্ট্রপতি বিশেষ আদেশ দিতে পারেন না।

তিনি বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন, সে সঙ্গে নির্বাচনের আগে যে সংস্কারগুলো জরুরি- তা সম্পন্ন করার জন্য সরকারকে জানিয়েছি। সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমরা বলেছি এটি আদেশ আকারে জারি করার জন্য। কারণ, অধ্যাদেশ খুবই দুর্বল। এ বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বসা হচ্ছে। আমরা বসেছি, সরকারও বসেছে। সবাই আদেশের কথা বলছে। আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে আমরা একটি সাংবিধানিক আদেশের কথা বলছি। যে আদেশটি ড. ইউনূস প্রধান হিসেবে জারি করবেন। এর অধিকার রাষ্ট্রপতির নেই।

তিনি বলেন, আদেশটি প্রধান উপদেষ্টাই জারি করবেন। কারণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের যে সার্বভৌম ক্ষমতা, তার একমাত্র বৈধতা ড. ইউনূসের আছে- সেটা রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের নেই। পরে সাংবিধানিক আদেশ, যেটা সংবিধানবহির্ভূত হিসেবে দিতে হবে, সেটা কোনোভাবেই রাষ্ট্রপতি দিতে পারবেন না। সেটা ড. ইউনূসকে দিতে হবে। এর আইনি এবং রাজনৈতিক কারণ আমরা তার সামনে তুলে ধরেছি।

গণভোটের বিষয়ে ডা. তাহের বলেন, এ ব্যাপারে বিএনপি কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিল না। আমরা এটাতে জোর দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত বিএনপি রাজি হয়েছে। তারা জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে চায়। অথচ গণভোট আর জাতীয় ভোট আলাদা। গণভোটের মাধ্যমে রিফর্ম (সংস্কার) কমিটি আলাদা হবে। আর জাতীয় ভোটের মাধ্যমে দেশ চলবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণভোট দিতে হবে।

৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী একটি দলের আনুগত্য করছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারি অফিস, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী একটি দলের আনুগত্য করছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলেছি, এসব জায়গায় বদলি বা পদায়নের মাধ্যমে ভারসাম্য আনতে হবে। নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।

জামায়াতের প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর এনসিপি স্বাক্ষর করবে জানিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান সরকারের কাছে তুলে ধরেছি। ঐকমত্য কমিশনকেও জানিয়েছি।

সনদে থাকা নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, নোট অব ডিসেন্টের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। সবাই এ বিষয়গুলোতে একমত হয়েছে। জুলাই সনদ যে বিষয়গুলোর ওপর রচিত হয়েছে, সেটা পুরোটা গণভোটে যাবে এবং গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হলে পরে জাতীয় সংসদের একটি গঠনিক ক্ষমতা থাকবে, যার ফলে তারা একটি সংস্কার করা নতুন সংবিধান তৈরি করবে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় যদি ঐকমত্য কমিশন কোনো সুপারিশ দেয়, সরকার সে অনুযায়ী কী সিদ্ধান্ত নেয়- তার ওপর নির্ভর করে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়টি বিবেচনা করব।

নাহিদ আরো বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং অভিযোগের কারণে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে আদালতে আনা হয়েছে। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছি। সরকার ও ট্রাইব্যুনালকে ধন্যবাদ জানাই যে, ন্যায়বিচারের একটি ধাপ আমরা অতিক্রম করেছি। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি সারা দেশে যেসব মামলা হয়েছে জুলাই শহীদ পরিবারদের পক্ষ থেকে এবং আহতদের পক্ষ থেকে, সেই মামলাগুলোর বিষয়ে সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে?

নির্বাচন কমিশন নিয়ে উদ্বেগ জানানোর কথা উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, নির্বাচন কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া ও তাদের আচরণ নিরপেক্ষ মনে হচ্ছে না। কিছু কিছু দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখা যাচ্ছে। তারা কোনো কোনো দলের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণও করছে। নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে না পারে, এর দায় সরকারের ওপরও আসবে। নির্বাচন কমিশন এ মুহূর্তে পুনর্গঠন হওয়া প্রয়োজন।

এনসিপি ‘শাপলা’ প্রতীক ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও মন্তব্য করেন দলটির আহ্বায়ক।

জনপ্রশাসন ও উপদেষ্টা পরিষদ বিষয়ে তিনি বলেন, জনপ্রশাসনে যেভাবে বদলি-পদায়নগুলো হচ্ছে, সেটা আসলে কীসের ভিত্তিতে হচ্ছে? সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন হচ্ছে কী? কারণ, আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি যে, প্রশাসনে বিভিন্ন স্তরে ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে যারা পরিচিত- তাদের মধ্যে। তারা নিজেদের মধ্যে এসপি, ডিসি এগুলো ভাগবাটোয়ারা করছে এবং নির্বাচনের জন্য তারা সেই তালিকা করছে; সরকারকে সেগুলো দিচ্ছে এবং উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকেও সেই দলগুলোর সঙ্গে এসব ব্যাপারে সহায়তা করছে। এভাবে চললে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা যারা বলছেন, তাদের দূরভিসন্ধি আছে বলে অভিযোগ করেন নাহিদ। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি জুলাই সনদের আওতাধীন। সে বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হয়েছে এটি কীভাবে গঠিত হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় গঠিত হবে। সেখানে নোট অব ডিসেন্টের বিষয়টি আছে। ফলে বিষয়টি জুলাই সনদে আসবে। গণভোটের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত হওয়া সম্ভব। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে এ কথা যদি কেউ বলে থাকেন, তাদের দূরভিসন্ধি রয়েছে।

এনসিপির প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত