স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, হাদি হত্যার আসামি ফয়সাল দেশেও থাকতে পারে আবার দেশের বাহিরেও যেতে পারে। আমাদের কাছে এক্সাক্ট কোনো তথ্য নেই। সোমবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির ১৮তম সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, হাদির হত্যা পরিকল্পনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে যে সকল বাহিনী কাজ করছে গতকাল তারা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন। আমার কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই।
প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়াও আসন্ন নির্বাচন, বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সরকার।
সভায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ–২ এর অগ্রগতি, শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও গ্রেপ্তার পরিস্থিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন, বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান আরো জোরদার করতে ১৩ ডিসেম্বর থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ–২ চালু করা হয়েছে। এ অভিযানের মাধ্যমে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা ও ওয়ারেন্টমূলে গ্রেপ্তারসহ মোট গ্রেপ্তার দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫০৫ জনে। অভিযানে ৫৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৩৭ রাউন্ড গুলি, ১৩৭ রাউন্ড কার্তুজ, ৬২টি দেশিয় অস্ত্র, গ্রেনেড, মর্টারের গোলা, গান পাউডার, আতশবাজি, বোমা তৈরির উপকরণ, ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে দুই হাজার চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ঘটনায় এরইমধ্যে ১০ জনকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ফয়সাল করিমের স্ত্রী, মা, বাবা, শ্যালকসহ একাধিক সহযোগী রয়েছে। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, ২টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ৪১ রাউন্ড গোলাবারুদ ও ১টি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
মূল হোতা ফয়সাল করিম মাসুদকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে মোটিভসহ বিস্তারিত প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দালাল চক্র ফিলিপের সহযোগী পাঁচজনকে (স্ত্রী ও শ্বশুরসহ) আটক করে বিজিবি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি যৌথ এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে মিডিয়াকে বিস্তারিত অবহিত করেছে।
সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এর আগে ঢাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। একইভাবে জকসু নির্বাচনও নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো ধরনের আতশবাজি করা যাবে না এবং রাস্তা অবরোধ করে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিষিদ্ধ থাকবে। প্রতিটি গির্জা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। গুলশান, বনানীসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং ট্রাফিক স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
তিনি আরো জানান, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনায় ডিএমপি ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পত্রিকা দুটির সম্পাদকদের নিরাপত্তায় গানম্যান দেয়া হয়েছে এবং বাসভবনে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ময়মনসিংহে পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়ও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণের বড় অংশ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সহিংসতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও উসকানিমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


বিএনপির একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
জামায়াত কর্মী যমজ সন্তানের নাম রাখলেন ওসমান ও হাদি