আইসিএসপি লাইসেন্সের আওতায় আসছে আন্তর্জাতিক এসএমএসের বাজার

আল-আমিন
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ২১

আন্তর্জাতিক এসএমএসের বিশাল বাজার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নতুন ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি) লাইসেন্সের আওতায় আসছে। নতুন টেলিকম নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই খাতকে শৃঙ্খলায় এনে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং নীতি অনুযায়ী আইজিডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) লাইসেন্সগুলোর মেয়াদ আছে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। এরপর তাদের লাইসেন্স থাকবে না। আইজিডব্লিউ, আইআইজি এবং আইসিএক্সের মতো বর্তমান লাইসেন্সগুলো নতুন আইসিএসপি লাইসেন্সের অন্তর্ভুক্ত হবে।

বিজ্ঞাপন

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইসিএসপি একটি সমন্বিত লাইসেন্স যা আন্তর্জাতিক ভয়েস, ইন্টারনেট এবং ডেটা পরিষেবাগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে। নতুন নীতিমালার লক্ষ্য হলো মধ্যস্বত্বভোগীদের সরিয়ে একটি সহজ ও দক্ষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এতে সেবার মান উন্নত এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হবে।

নতুন নীতিমালায় চারটি ক্যাটাগরির লাইসেন্সের বিধান রাখা হয়েছে। টেলিযোগাযোগের আন্তর্জাতিক সংযুক্তির ব্যবসা যারা করতে চায় তাদের আইসিএসপি লাইসেন্সের আওতায় থাকতে হবে। সরকারের অনুমোদিত পলিসি মোতাবেক বিভিন্ন কমিটিতে ভাগ হয়ে গাইডলাইন প্রস্তুতের কাজ করছে বিটিআরসি।

আন্তর্জাতিক এসএমএস কী

আন্তর্জাতিক এসএমএস বলতে বোঝায় একটি দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে বিশ্বের অন্য কোনো দেশের মোবাইল নম্বরে বার্তা আদান-প্রদান। এটি প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে— এক. পার্সন-টু-পার্সন (পিটুপি) এসএমএস; একজন সাধারণ মোবাইল ব্যবহারকারী যখন তার প্রবাসী বা বিদেশি প্রিয়জনের কাছে ব্যক্তিগত বার্তা পাঠান। বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটররা সাধারণত তাদের গ্রাহকদের এই সুবিধা দিয়ে থাকে। দুই. অ্যাপ্লিকেশন-টু-পার্সন (এটুপি) এসএমএস; এটি আন্তর্জাতিক এসএমএসের সবচেয়ে বড় অংশ। এই সেবার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাদের ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায়। এর মধ্যে প্রধান হলো—ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি), মার্কেটিং বা প্রচারমূলক বার্তা।

দেশে আন্তর্জাতিক এসএমএসের বাজার

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাজার খুব একটা ছোট নয়। প্রতিদিন এক কোটিরও বেশি আন্তর্জাতিক এটুপি এসএমএস বাংলাদেশে আসে। এর মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বছরে এর পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার মতো।

আইজিডব্লিউদের কাছ থেকে পাওনা

আইজিডব্লিউর একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিটি বিদেশি মোবাইল অপারেটর বিদেশে অবস্থিত তাদের সহ-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একতরফা চুক্তি করে আন্তর্জাতিক এটুপি এসএমএস পরিচালনা করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিটিআরসি আন্তর্জাতিক এসএমএসের ট্যারিফ নির্ধারণ করে না। এ ক্ষেত্রে অপারেটরদের দেওয়া তথ্যের ওপরেই তাদের নির্ভর করতে হয়। ফলে, মোবাইল অপারেটররা কোন ট্যারিফে আন্তর্জাতিক এসএমএস বিক্রি করছে তার কোনো সঠিক রেকর্ড সরকারের কাছে থাকে না। এভাবে বিদেশি মোবাইল অপারেটরদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

বিটিআরসি জানিয়েছে, আইজিডব্লিউ অপারেটরদের কাছে বিটিআরসি ৬ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার টাকা পায়।

টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক এসএমএস একটি লাইসেন্সিং কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসার উদ্যোগ দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে একটি টেকসই ও স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। এত দিন এই সেবাটি প্রায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হওয়ায় সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছিল।

টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদ তানভীর জোহা আমার দেশকে জানান, এসএমএসের বাজার আবার বাড়ছে। কারণ ব্যাংক ও ডিজিটাল সেবাগুলো এখনো ভেরিফিকেশন ও নোটিফিকেশনের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে এসএমএসকেই ব্যবহার করছে।

এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী আমার দেশকে জানান, আমরা এসএমএসের লেয়ারগুলো ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল দুই ভাগে ভাগ করেছি। যারা ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের লাইসেন্স পাবে তারা সবাই ইন্টারন্যাশনাল এসএমএসের ব্যবসা করতে পারবে। যারা ন্যাশনাল লেভেলের লাইসেন্স পাবে তারা ন্যাশনাল এসএমএসের ব্যবসা করতে পারবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত