আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

আগামী ৩ দিন কেমন থাকবে আবহাওয়া, যা জানা গেলো

স্টাফ রিপোর্টার

আগামী ৩ দিন কেমন থাকবে আবহাওয়া, যা জানা গেলো

এমন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আরো দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে দেশের অধিকাংশ এলাকা কুয়াশাচ্ছন্ন থাকার কারণে শীতের অনুভূতিও অব্যাহত থাকতে পারে। তবে দেশের অধিকাংশ এলাকায় আগামীকাল বুধবার থেকে তাপমাত্রা বেড়ে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাতে আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশিদ আমার দেশকে বলেন, এমন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এর আগে কখনো দেখা যায়নি। সাধারণত শীতের মৌসুমে একাধারে ২-৩ দিন ঘনকুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, পরে তা কেটে যায়। ২-৩ দিন এমন ঘনকুয়াশাচ্ছন্ন থাকলে মানুষ তেমন টের পায় না। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন; উত্তরাঞ্চলে ৭-৮ দিন এবং ঢাকায় ৪-৫ দিন ধরে একই ধরনের অবস্থা বিরাজ করছে। দীর্ঘ সময় ধরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মতো ঘনকুয়াশা পড়ায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যও কমে যাওয়ায় কুলিং হচ্ছ; শীতের অনুভূতি অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এতে সারাদেশের মানুষ থর থর করে কাঁপছে।

বিজ্ঞাপন

তবে আশার দিক হলো মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আগের কয়েকদিন যেখানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গিয়েছিল তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উভয় বেড়েছে; সেইসঙ্গে পার্থক্যও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এছাড়া বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাপমাত্রার উন্নতি হয়েছে। ওই এলাকায় কোথাও কোথাও ক্ষণিকের জন্য হলেও সুর্যের দেখাও মিলেছে। এতে ওইসব এলাকায় শীতের অনুভূতিও কিছুটা কমেছে। যদিও ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় এ চিত্র ছিল ভিন্ন।

আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশিদ বলেন, বুধবার রাজধানীসহ সারাদেশের আবহাওয়া পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিন রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় ক্ষণিকের জন্য হলেও সুর্যের দেখা মিলতে পারে। আশা করা যায়, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে ঘুনকুয়াশা কেটে যেতে পারে। তবে শীতের দাপট জানুয়ারি মাসজুড়েই থাকবে।

আজ মঙ্গলবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলীতে, ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগের দুইদিনও এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মঙ্গলবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কক্সবাজারের টেকনাফে ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৫ এবং সর্বোচ্চ ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া মঙ্গলবার দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। সবমিলেই দেশের বেশির ভাগ এলাকায় দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

এদিকে আগের কয়েকদিনের ন্যায় মঙ্গলবারও উত্তরের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশায় কনকনে শীতে সারাদেশে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দেশের অনেক এলাকায় দেখা মেলেনি সূর্যের। চলতি মৌসুমের সবচেয়ে বেশি শীত জেঁকে বসেছে রাজধানীতেও। আরও দুই-তিন দিন দেশে এমন অবস্থা বিরাজ করতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এরফলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। দেশে এখন কোনো শৈত্যপ্রবাহ বইছে না । তবে শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হলে শীতের অনুভূতি যেমন থাকে, তেমন শীত অনুভূত হচ্ছে।

এদিকে ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কনকনে ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। শীতের প্রভাবে রাজধানীতেও রাস্তায় লোকজনের চলাচল কম। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতে শীতের পোশাক কেনাকাটা বেড়েছে। বিশেষ করে গুলিস্তান এলাকায় রাস্তার উপর শীতের পোশাকের দোকান বসিয়েছে হকাররা। কেনাকাটাও বেশ জমে উঠেছে। তবে নাফিসা ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, শীতের দাপট বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের শীতের কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে। দুই-তিন শো টাকার জেকেট-হুডি এখন বিক্রি হচ্ছে সাতশো থেকে আটশো টাকায়।

অন্যদিকে শীতের তীব্রতায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের অধিকাংশ শীতজনিত রোগ অর্থাৎ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...