অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল

মানবাধিকার নিশ্চিত করাকে সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে

প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৬: ১০

মানবাধিকার শুধু আইনি বিষয় হিসেবে নয়, এটিকে সাংস্কৃতিক চর্চা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে হিউম্যান রাইটস সার্পোট সোসাইটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত ১১তম মানবাধিকার সম্মেলন-২০২৫-এ তিনি এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

ড. আসিফ নজরুল বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে শুধুমাত্র আইন পরিবর্তন যথেষ্ট নয়। সবার মধ্যে মানবাধিকার সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি, আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন। যখন আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি এই মানবিক পরিবর্তন ঘটবে, তখনই সত্যিকারের পরিবর্তন আসবে।

রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান অঙ্গ- নির্বাহী, আইন এবং বিচার বিভাগে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তিনি বলেন, এই তিনটি অঙ্গ সংস্কার না করে শুধু তথ্য কমিশন বা মানবাধিকার কমিশন তৈরি করে কোনো লাভ হবে না। সমস্যার মূল শিকড়ে হাত দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পশ্চিমা বিশ্বে মানবাধিকার বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত থাকলেও, তারা অন্য দেশে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়, অস্ত্র বিক্রি করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী শাসকদের সহযোগিতা করে। ফলে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এখনো এক বড় চ্যালেঞ্জ।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের দিকে ইঙ্গিত করে ড. নজরুল বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয় চলে গেলে সরকার দানবে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট আমলে হাজারো ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে, অনেকেই পঙ্গু হয়েছে। এই মূল্য বুঝে আমাদের নতুনভাবে ভাবতে হবে।

সেমিনারে আইন অনুষদের ডিন ড. মুহম্মদ একরামুল হক বলেন, সংবিধানে যত ভালো কথাই লেখা থাকুক না কেন, যদি আদালতকে স্বৈরশাসনের অংশ বানিয়ে ফেলা হয়, তবে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে মানবাধিকার রক্ষা অসম্ভব।

তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তাদের দলীয় অনুগত না হয়ে সংবিধান অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

২০২৪ সালের ক্ষমতান্তরকে একটি ‘বিরল মোমেন্টাম’ আখ্যা দিয়ে ড. একরামুল হক বলেন, এখনই সময় গভর্নেন্সে জবাবদিহিতা ও সংস্কার আনার।

সেমিনারে আওয়ামী শাসনামলে গুম হওয়া আইনজীবী আহমেদ বিন কাশেম ও মানবাধিকারকর্মী মাইকেল চাকমার পরিবারের সদস্যরা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতিনিধিরা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

শহীদ শাহরিয়ার খানের মা সানজিদা খান বলেন, আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলিতে আমার সন্তান নিহত হয়েছে। দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীই আজ আমার সন্তানের ঘাতক।

গুমের শিকার মাইকেল চাকমা বলেন, আমার পরিবার এক পর্যায়ে আমার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছিল। এ থেকেই বোঝা যায় তারা কতটা ভেঙে পড়েছিল। আমি ফিরে এলেও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে।

অনুষ্ঠানে মানবাধিকার অলিম্পিয়াডে বিজয়ী দশজন শিক্ষার্থীকে ব্যাগ, সম্মাননা সনদ, স্মারক ও অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত