পাস করা প্রকৌশলীদের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চালকের সমান বেতন ‘অফার’ দেয়: বুয়েট উপাচার্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫, ১৬: ৫৯
আপডেট : ০৩ মে ২০২৫, ১৭: ২২

শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দিকে অভিযোগ তুলে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেছেন, আমাদের ছাত্ররা বের হওয়ার পর আপনারা একজন ড্রাইভারের সমান বেতন অফার করেন তাহলে বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোচ্চ শিক্ষা যারা পেয়েছে তাদেরকে ধরে রাখতে পারবেন না। হয়তো তারা সাময়িক সময়ের জন্য থাকবে। এখান থেকে আপনাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

শনিবার জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) সভাকক্ষে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বুয়েটের ছাত্ররা যখন বেরিয়ে আসে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অধিকাংশ বিদেশ চলে যায়। কেউ ব্যাংকে বা বিসিএসে চলে যাচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বলে, এমন ইঞ্জিনিয়ার আপনারা তৈরি করেন যেটা আমাদের কাজে লাগে না। আমরা শিল্পগুলোর আইডিয়া নিয়েই কারিকুলা তৈরি করি। আমরা বলছি, সবাই সব বিষয় শিখে আসে না। চাকরি নিয়েও অনেক বিষয় শেখার আছে।

এ সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, অভ্যুত্থানের পর আমরা জিরো থেকে শুরু করেছি। শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি এমন পর্যায়ে ঠেকেছিল, একেকটা কলেজে শিক্ষকদের সাত-আটটা গ্রুপ, প্রত্যেক প্রিন্সিপালদের ভেতরে সাংঘাতিক ভয়ানক অবস্থা সারা দেশে, খুন হওয়ার মতো পরিস্থিতি-যে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল। এরকম অবস্থার ভেতরে আড়াই হাজার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণে আনা, এসব প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বদলে ফেলা, সেখানে ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোয় পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লেগেছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলেন, কিন্তু যে দেশে প্রথম শিল্প বিপ্লবই হয়নি, সেখানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা করা অনেক কঠিন ব্যাপার। আমাদের সিলেবাস গুলো ব্রিটিশ আমলের, এটি পরিবর্তন করতে দেয় না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তারপরও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালেয়ে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পেরেছি। এ সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য সারা দেশে আমরা কয়েকটি কমিটি করে দিয়েছি। সিলেবাস যতই পরিবর্তন করি, যত্রতত্র অনার্স মাস্টার্স খুলে এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছে এজন্য আমরা আর অনার্স অনুমোদন দিচ্ছি না।

কলেজগুলো রাজনৈতিক পাওয়ার হাউজ হয়ে গেছে উল্লেখ করে এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা হয়ে পড়েছেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে। কোনো অধ্যক্ষের বেতন ১ লাখ, কারো দুই লাখ, কারো আড়াই লাখ কারো আবার ৫০ হাজার। আমরা এক কাঠামোর বেতনে যখন মনিটর করার চিন্তা করি, তারা মনিটরিংয়ে বাধা দিচ্ছে। অধ্যক্ষদের কারণে কলেজগুলো হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতির পাওয়ার হাউজ হিসেবে।

শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন শর্ট কোর্স, প্রফেশনাল কোর্স, কর্মক্ষেত্রে উপযোগী দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পৃথক চুক্তি করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)।

এ চার বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ২০২৪ সালের ৪ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও পৃথক দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

শনিবার এনএসডিএর সভাকক্ষে এ চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। এনএসডিএর নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ডিন এএসই অধ্যাপক মো. আব্দুল কাদের জিলানী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত