এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির বিবৃতি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৫১
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ০৫

বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত করতে পাঠ্যবইয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত গ্রাফিতি অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদেরকে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি দেয়ার প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করতে চেয়েছিল দেশি-বিদেশি একটি চক্র। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ববিরোধী এই গ্রাফিতিটি বাতিলের দাবিতে গত ৮ জানুয়ারি এনসিটিবির সামনে হামলার পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদুর রহমান যুক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি।

শনিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে পাঠানো স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদারের সই করা এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ জানুয়ারিতে কর্মসূচি চলাকালীন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব মজুমদার ও সভারেন্টির কর্মসূচিতে সংহতি জানানো জাতীয় নাগরিক কমিটির শাহাদাত ফরাজী সাকিবসহ ৬ জন প্রতিনিধিকে চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনার কথা বলে এনসিটিবি ভবনে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় (সম্ভবত ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ তলায়)। কিন্তু স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির প্রতিনিধি দল চেয়ারম্যানের পরিবর্তে পরিমার্জন কমিটির বহিরাগত সদস্য রাখাল রাহাকে দেখতে পায়। এতে সভারেন্টির প্রতিনিধিরা আপত্তি জানায়। বাইরে সভারেন্টি ও উপজাতি- উভয় পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান সহিংস ঘটনার জন্ম দিতে পারে– এমন আশঙ্কায় সভারেন্টির প্রতিনিধি দল এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আলোচনা দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছিল। এবং এটি রাখাল রাহাকেও একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করা হয়।

কিন্তু পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক উপজাতিদের মিছিল এনসিটিবিতে পৌঁছে সহিংসতা সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় আলোচনা দীর্ঘায়িত করে রাখাল রাহা সভারেন্টির প্রতিনিধিদলের সময়ক্ষেপণ করে এবং এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসতে বাধা দিতে থাকে।

'রাখাল রাহার উদ্দেশ্য ভালো নয়'– এমন ইঙ্গিত পেয়ে সভারেন্টির প্রতিনিধিদল রাখাল রাহাকে স্থান ত্যাগে অনুরোধ করে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসে। আলোচনা শুরুর ১ মিনিটের মাথায় পুলিশ বাইরের অবস্থা খারাপ বলে জানায় এবং আলোচনা দ্রুত শেষ করার পরামর্শ দেয়। সভারেন্টির প্রতিনিধি দল পুলিশের কাছে ৫ মিনিট সময় নেন যার মধ্যে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার জন্যে ৩ মিনিট এবং নিচে নেমে কর্মসূচি সমাপ্ত করার জন্যে ২ মিনিট। এবং সংঘর্ষ এড়াতে এই পাঁচ মিনিটের মধ্যে সভারেন্টির অবস্থানস্থলে উপজাতিদের মিছিলের অনুপ্রবেশ ঘটে কোনোরূপ সহিংস ঘটনার সৃষ্টি যাতে না হতে পারে, সেজন্যে তারা এতোটুকু সময়ের জন্য পুলিশের সহযোগিতা ও নিশ্চয়তা চান।

পুলিশি ব্যারিকেড তাই ৫ মিনিট উপজাতিদের মিছিলকে অপেক্ষা করতে অনুরোধ করে, পাশাপাশি সভারেন্টির অবস্থানস্থলে আসতে উপজাতিদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রাখাল রাহা নিচে নামার ২/৩ মিনিটের মাথায় আশ্চর্যজনকভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে যায়। বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিরা পুলিশের বাধাকে উপেক্ষা করে সভারেন্টির অবস্থানস্থলে এসে অতর্কিতভাবে হামলে পড়ে সংঘর্ষ বাধায়।

পুলিশ পুনরায় উপরে এসে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির প্রতিনিধিদলকে উপজাতিরা পুলিশের বাধাদানের চেষ্টা সত্ত্বেও চারস্তরের ব্যারিকেড ভেঙ্গে সভারেন্টির অবস্থানস্থলে ঢুকে পড়েছে এবং সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আলোচনা অনেকটা অসম্পূর্ণ রেখেই সভারেন্টির প্রতিনিধিদল সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে নিচে এসে দেখেন সংঘর্ষ শেষ। সভারেন্টির কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী আহত। একজনের মাথা ফাটা, রক্ত পড়ছিল।

উল্লেখ্য, কালের কণ্ঠের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমানের করা ভিডিওসহ একাধিক গণমাধ্যমের ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, ‘র’-এর এজেন্ট অলিক মৃ এবং ছাত্র ফেডারেশনের আরমানুল হক গংদের নেতৃত্বে ও রাখাল রাহা সিন্ডিকেটের যোগসাজশে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিদের মিছিলটি অত্যন্ত উগ্র কায়দায় পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী (ব্যারিকেড) ভেঙে সভারেন্টির পক্ষের লোকজনের ওপর হামলে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় সভারেন্টিরপক্ষের লোকজন আত্মরক্ষার্থে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে প্রথম হামলাকারী উপজাতি ও হামলা প্রতিহতকারী সভারেন্টি উভয় পক্ষের লোকজনই হতাহত হয়।

এর পরপরই পূর্ব পরিকল্পিত নতুন নাটক মঞ্চস্থ করা হয় - "সভারেন্টিকে নিপীড়ক সংগঠনের ভূমিকায় দেখিয়ে রাখাল রাহার অপসারণ দাবি থেকে দৃষ্টি সরানো এবং সভারেন্টি কর্তৃক দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে রাখাল রাহা ও তার উপজাতি-এনজিও সিন্ডিকেট অনলাইন-অফলাইনে ব্যাপক প্রোপাগান্ডা চালানো শুরু করে। নিজেদেরকে ভিকটিম হুড রোল প্লে করতে থাকে। সাময়িক সময়ের জন্য তারা সফলও হয়।

অথচ বাস্তবতা হচ্ছে- রাখাল রাহাদের যোগসাজশে প্রথমে সভারেন্টির উপর হামলা চালিয়ে উপজাতিরাই সহিংস ঘটনার জন্ম দিয়েছে এবং মূল দোষী তারাই। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত তাদের ভূমিকা অনেকটা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের মতোই। নিজেদেরকে তারা ভিকটিম দেখালেও প্রকৃত ভিকটিম স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি। কারণ-

প্রথমত: ওইদিন সকাল ১১টায় স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির সমাবেশ ছিল এনসিটিবির সামনে। অপরদিকে, একইদিন সকাল ১১টায় উপজাতিদের সমাবেশ ছিল টিএসসিতে, এনসিটিবির সামনে নয়। ওইদিন তাদের এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি থাকলেও সেটার সময় উল্লেখ ছিল না;

দ্বিতীয়ত: সভারেন্টি মিছিল নিয়ে উপজাতিদের অবস্থানস্থল টিএসসিতে গিয়ে হামলা কিংবা তাদের সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে যায়নি। কিন্তু উপজাতিরা মিছিল নিয়ে সভারেন্টির অবস্থানস্থল এনসিটিবির পাদদেশে এসে হামলে পড়ে, এরপরই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।

তৃতীয়ত: উপজাতিদের মিছিল যখন পুলিশের তিনটি ব্যারিকেড ভেঙ্গে এনসিটিবির কাছাকাছি সর্বশেষ পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে পড়ে উগ্রতা ছড়াচ্ছিল, তখনো কিন্তু সভারেন্টির পক্ষের লোকজন পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে উপজাতিদের উপর হামলা করেনি। বিপরীতে উপজাতিরাই পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ফেলে এবং সভারেন্টির উপর হামলে পড়ে সংঘর্ষ তৈরি করে; তাহলে এখানে দোষী কে?

এছাড়া সাংগঠনিকভাবে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার পক্ষে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কখনো কোন সংঘর্ষ কিংবা কারো ওপর সভারেন্টি হামলে পড়েছে এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না। কারণ 'স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' ইস্যু বেইসড ন্যারেটিভ কেন্দ্রিক একটি ছাত্র সংগঠন। যে কোন ধরনের সহিংসতা সভারেন্টির নীতিবিরুদ্ধ কাজ।

চতুর্থত: অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই দিনের সংঘর্ষের একপাক্ষিক ছবি পোস্ট করে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি ও রাখাল রাহা সিন্ডিকেটের পক্ষে অবস্থান নেয়ার ইঙ্গিত দেয়ায় সভারেন্টি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, চরম জুলুমের শিকার হচ্ছে। একইসাথে সভারেন্টির দেশপ্রেমিক শিক্ষার্থী ও তাদের সমর্থকদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে, গ্রেপ্তারের নামে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, জেলবন্দি করছে, রিমান্ডে নিচ্ছে, আদালত কোনো বন্দির জামিন দিচ্ছে না।

পঞ্চমত: উপদেষ্টাদের প্রকাশ্য একপাক্ষিক অবস্থানের কারণে উপজাতিরা প্রথমে হামলা চালালেও মামলা হয়েছে শুধু সভারেন্টির বিরুদ্ধে।

সভারেন্টির পক্ষ থেকে একাধিকবার চেষ্টা চালানো হলেও ‘উপরের নির্দেশের’ অযুহাত দেখিয়ে এখন পর্যন্ত থানা-পুলিশ কোনো মামলা নেয়নি। এখানে সভারেন্টি আইনের আশ্রয় নেয়ার মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। যা স্বৈরাচার হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন বন্দোবস্তে এক লজ্জাজনক ঘটনা এবং এটিকে স্বৈরাচার হাসিনার আমলের পুনরাবৃত্তি বললে অত্যুক্তি হয়ে যাবে না!

বিবৃতিতে বলা হয়- ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে যখন ভিপি নুরু-রাশেদরা টিএসসিতে কোনো প্রোগ্রাম দিত, তখন তাদের অবস্থানস্থলে এসে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ হামলা চালাত, কিন্তু মামলা হতো নুরু-রাশেদদের বিরুদ্ধেই। নুরু-রাশেদরা মামলা করতে গেলেও থানা পুলিশ মামলা নিত না। রাষ্ট্রযন্ত্র প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় নুরু রাশেদদের উপর ব্যাপক পুলিশি হয়রানি চলত, জেলে নিতো, রিমান্ডে নেওয়া হতো। অনেকটা ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির বেলায়ও।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত