নাগরিক সেবায় রুগ্ণদশা-শেষ

জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

এমরানা আহমেদ
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৫৯

দেশে বর্তমানে জন্মনিবন্ধনের হার শতকরা ৫০ ও মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ ভাগ। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার শতভাগ নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করলেও আইনি দুর্বলতা, প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও জনসচেতনতার অভাব তা অর্জনে বড় বাধা হয়ে আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব কারণে নিবন্ধনের বাইরে থেকে যাচ্ছে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী।

অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ, ভুটান ও শ্রীলঙ্কায় জন্মনিবন্ধনের হার প্রায় ১০০ শতাংশে পৌঁছেছে। ভারত ৮৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, নেপাল ৭৭ শতাংশ এবং মিয়ানমার ৮১ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞদের মতে, জনবল সংকট, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে নিবন্ধনের দায়িত্ব দেওয়া হলে এ বিষয়ে সফলতা আসতে বাধ্য। এর জন্য প্রয়োজন বিদ্যমান আইনের সংশোধন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সম্প্রতি কিছুটা সাফল্য অর্জন করলেও বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অগ্রগতির তুলনায় এখনো অনেকটাই পিছিয়ে। এটি একজন মানুষের নাগরিক অধিকার নয়, এটি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি। ব্যক্তির শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও ভোটাধিকারের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়ন, জনস্বাস্থ্য এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস আমার দেশকে বলেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সঠিক জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য তথ্য পরিকল্পনা, বাজেট, জনস্বাস্থ্য ও সুশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যমান আইনে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য প্রদানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পরিবারকে দেওয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের ভূমিকা ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু এখন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় হাসপাতালে জন্ম নিচ্ছে। আমাদের দেশে এখনো পরিবারকে গিয়ে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেকেই সচেতনতার অভাবে বা প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে নিবন্ধন করে না। ফলে জাতীয় পর্যায়ে পরিসংখ্যান বিকৃত হয়।

স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে দুর্বল সমন্বয় আইন বাস্তবায়নের পথে বড় অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করে মুহাম্মদ রুহুল কু্দ্দুস বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আইনগতভাবে নিবন্ধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাদের নিবন্ধনের দায়িত্ব দেওয়া হলে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় জন্মগ্রহণ করা শিশুরা নিশ্চিতভাবে নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। ব্যক্তির পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করলে নিবন্ধনের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বহু দেশ হাসপাতালভিত্তিক জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে শতভাগ বা তার কাছাকাছি নিবন্ধন হার অর্জন করেছে বলেও জানান মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। তিনি আরো বলেন, শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দ্রুত আইন সংশোধন করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে এর দায়িত্ব আইনগতভাবে দিতে হবে। একই সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা-জন্মনিবন্ধনসহ সবার জন্য বৈধ পরিচয়পত্র প্রদান অর্জনেও সহায়ক হবে বলেও মনে করেন তিনি।

ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর মো. নজরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থা ইউএনএসকাপ ঘোষিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকসের (সিআরভিএস) আওতায় বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ জন্য নিবন্ধন আইন ২০০৪ সংশোধন করতে হবে।

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, বিদ্যমান আইন সংশোধন না করলে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়ব। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনকে ঐচ্ছিক না রেখে আইনগত বাধ্যবাধকতা তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। বিশ্বজুড়ে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী ২০০০ সালে বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্মনিবন্ধনের হার ছিল শতকরা ৬০ ভাগ। ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ শতাংশে। তবে এখনো বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫০ মিলিয়ন শিশু অনিবন্ধিত অবস্থায় রয়েছে।

ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে প্রায় শতভাগ শিশু জন্মনিবন্ধনের আওতায় এসেছে।

ইউএনএসকাপের তথ্যানুযায়ী, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও গত এক দশকে জন্মনিবন্ধনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০১২ সালে যেখানে পাঁচ বছরের নিচে অনিবন্ধিত শিশুর সংখ্যা ছিল ১৩৫ মিলিয়ন, বর্তমানে তা কমে ৫১ মিলিয়নে নেমে এসেছে। তারপরও এখনো প্রতি বছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন শিশু জন্মের এক বছরের মধ্যে নিবন্ধিত হয় না। অন্যদিকে, মৃত্যু নিবন্ধনের ২০২৩ সালে বৈশ্বিক গড় হার ৭৪ শতাংশে পৌঁছেছে।

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের নেয়া হয়েছে ক্যান্টনমেন্টের অস্থায়ী কারাগারে

গাজায় স্বাস্থ্য সংকট কয়েক প্রজন্ম থাকবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

সেনা কর্মকর্তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল: আসামিপক্ষের আইনজীবী

দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান এরদোয়ানের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত