প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আইনি নোটিশ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ২৩: ০৫

বিশ্বের ১২৬টি দেশ প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশি প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকারের দাবি করে আসলেও তা ঝুলে রয়েছে। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ১৭টি দেশে থাকা ২০ জন প্রবাসী। বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশ পাওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা নোটিশে বলা হয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ২০ জন প্রবাসী বাংলাদেশির পক্ষে এ নোটিশ পাঠান আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

বিজ্ঞাপন

নোটিশে বলা হয়, নোটিশ দাতা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক এবং রেমিট্যান্স যোদ্ধা। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। অভিবাসী পাঠানোয় বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। বিশ্বের প্রায় ১৭৬টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীরা বসবাস করছে। রেমিট্যান্স আয়ের দিক থেকে ২০২৪ সালে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের আয়ের অবদান ৬ থেকে ৭ শতাংশ। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে প্রবাসীরা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়নক হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সের (আইডিইএ) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১২৬টি দেশ তাদের প্রবাসে অবস্থানরত নাগরিকদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণামূলক জার্নালের সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ১৪১টি দেশ নন-রেসিডেন্ট নাগরিকদের ভোটাধিকার দেওয়ার সুযোগ রেখেছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, মেক্সিকো, ইতালি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, পর্তুগালসহ বিশ্বের অনেক দেশেই প্রবাসীরা ডাকযোগে, ই-মেইলে, প্রতিনিধি বা দূতাবাসের মাধ্যমে ভোট দিতে পারেন। সম্প্রতি ভারত, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ডসহ অনেক দেশ প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের বিদ্যমান কাঠামোতে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে সংশোধনীর প্রয়োজন নেই। ১৯৮২ সালের একটি অর্ডিন্যান্সের ধারা ৮-এর কঠোর ব্যাখ্যার কারণে প্রবাসীরা ভোটদান থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। উল্লিখিত বিধানের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৭ সালে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট মামলা করা হয়। ওই মামলার রায়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটদানের পথ উন্মুক্ত হয়। পরে সরকার ২০০৯ সালে ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশটি বাতিল করে। ২০১৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সংসদে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করা হবে মর্মে আশ্বাস দেন। কিন্তু সেই সংশোধন প্রবাসীদের ভোটাধিকারের উদ্দেশে করা হয়নি। ফলে বিষয়টি আবারও উপেক্ষিত হয়।

যদিও ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ২৭ এ বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের ডাকযোগে ভোট দেওয়ার অধিকার দেয়, তবে বিদ্যমান জটিল প্রক্রিয়া ও তথ্যের অভাবে তা সম্ভব হয় না। নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আউট-অব-কান্ট্রি ভোটিংয়ের বিধান চালু করলেও আবেদন, ব্যালট গ্রহণ এবং ফেরত পাঠানোর জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া এটিকে বাস্তবে অসম্ভব করে তোলে। এমনকি নির্বাচন কমিশন ২০২০ সালে মালয়েশিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন শুরু করলেও তা করোনা মহামারির কারণে স্থগিত হয়ে যায়।

নোটিশে আরো বলা হয়, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস গ্রহণে অনীহা, জনবলের অভাব, তহবিল স্বল্পতা, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা সর্বোপরি অহেতুক রাজনৈতিক বিতর্ক বিদ্যমান সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে। তাই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরিভিত্তিতে গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত