ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস আজ

* বাঁধ চালুর কয়েক মাসেই ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত

* লংমার্চ ছিল পদ্মাকে পানিশূন্য করার ভারতের নীলনকশার বিরুদ্ধে

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ০৮: ৪৭
আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, ০৯: ২৬
ছবি: সংগৃহীত

ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস আজ। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ফারাক্কা ব্যারাজ অভিমুখে লংমার্চ করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাড়া ফেলেছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। লংমার্চ পরিচালিত হয়েছিল ফারাক্কায় বাঁধ দিয়ে ভারতের একতরফাভাবে পদ্মার (ভারতে গঙ্গা) পানি প্রত্যাহারের মাধ্যমে নদীটিকে পানিশূন্য করার নীলনকশার বিরুদ্ধে।

১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল এ বাঁধ চালুর কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে এর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। দেশের পরিবেশে ফারাক্কা বাঁধের সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে মওলানা ভাসানী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য জাতির প্রতি আহ্বান জানান।

এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখী এ অভিযাত্রা শুরু করা হয়। যদিও মওলানা ভাসানী সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে ফারাক্কা পর্যন্ত পদযাত্রার ঘোষণা দিয়েছিলেন তবে তৎকালীন সরকারের আপত্তির কারণে এ পদযাত্রা ১৭ মে বিকালে ভারতীয় সীমান্তের কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে শেষ করা হয়।

নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এমন সোচ্চার জনমত ফারাক্কা লংমার্চের আগেও দেখা যায়নি, পরেও নয়। ৯৫ বছরের শারীরিক অসুস্থতা বা রাজনৈতিক চাপ দমাতে পারেনি লংমার্চের প্রধান সংগঠক মওলানা ভাসানীকে।

পদ্মার (গঙ্গা) পানি বণ্টন নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে পাকিস্তান আমলে ১৯৫২ সাল থেকে। তখন থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেয়নি, ফলে ভারত তার মতো কাজ করে গেছে। একবারই তারা গুরুত্বসহকারে নিয়েছে যখন ভাসানী ফারাক্কা লংমার্চ করে।

ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে ভারত ১৯৭৫ সালে পরীক্ষামূলক অল্প কদিনের কথা বলে পানি প্রত্যাহার শুরু করে, পরে তা আর বন্ধ হয়নি। এর ফল হয়েছে ৫০ বছর ধরে ফারাক্কা ব্যারাজের প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানির হাহাকার।

পরে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি হলেও ন্যায্য হিস্যার পানি নিশ্চিত করতে পারেনি। এ চুক্তির মেয়াদও শেষ হচ্ছে আর এক বছর পর। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেবে ভারত। কিন্তু সেটি কখনো দেয়নি দেশটি। বিগত দিনে এ নিয়ে তেমন প্রতিবাদও করেনি বাংলাদেশ সরকার।

ফারাক্কা ব্যারাজের মাধ্যমে নদীর পানি সরানোয় বাংলাদেশে খরা, আকস্মিক বন্যা, নদীভাঙনে প্রতি বছর ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে বহু মানুষ। আন্তঃসীমান্ত নদীর গতিপথে এ বাঁধ বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের পদ্মাসহ এর শাখা নদ-নদীর ওপর। ভারতে ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি সরিয়ে নেওয়ার কারণে পাঁচ দশকে বাংলাদেশের পদ্মায় চর জেগেছে, শুকিয়ে মরে গেছে পদ্মার উৎস থেকে সৃষ্ট বেশকিছু নদনদী।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত