দেশে প্রতি ৪ জন নারীর ৩ জনই সহিংসতার শিকার: বিবিএস

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫৪

বাংলাদেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজন জীবনে অন্তত একবার হলও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জীবদ্দশায় ৭৬ শতাংশ নারী কখনও না কখনও জীবনসঙ্গী বা স্বামীর দ্বারা শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গত এক বছরে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৯ শতাংশ নারী। ৬২ শতাংশ নারী কখনও এটি প্রকাশ করেননি। ছ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) যৌথভাবে পরিচালিত 'নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪-এর চ’ড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক সিনাক্ষী বিশ্বাস এবং বক্তব্য দেন বিবিএস-এর ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক এমদাদুল হক।

জরিপে আরও উঠে এসেছে, স্বামীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৫৪ শতাংশ নারী। যৌন সহিংসতার শিকারদের ৬০ শতাংশই গত এক বছরে একাধিকবার একই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। গর্ভাবস্থায় ৭.২ শতাংশ নারী শারীরিক এবং ৫.৩ শতাংশ নারী যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি। জরিপে দেখা গেছে, অভিযোগ জানানোর পথ সম্পর্কে কেবল ৪৮.৫ শতাংশ নারী অবহিত, আর মাত্র ১২.৩ শতাংশ নারী হেল্পলাইন "১০৯" এর বিষয়ে জানেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতা সত্ত্বে¡ও বেশির ভাগ নারী চিকিৎসা বা আইনি সহায়তা নিতে আগ্রহী নন; অনেকে সামাজিক লজ্জা বা সম্মানহানির ভয়ে নীরব থাকেন।

সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে জরিপে উঠে এসেছে যৌতুক প্রথা, স্বামীর মাদকাসক্তি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে স্বামী উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।

বিবিএস জানিয়েছে, জরিপে জাতিসংঘ নির্ধারিত সহিংসতার ধরন ছাড়াও বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক আচরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলাফল অনুযায়ী, ১৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে ১৫ শতাংশ নন-পার্টনার বা স্বামী ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন এবং ২.২ শতাংশ নন-পার্টনার কর্তৃক যৌন সহিংসতার শিকার।

অনুষ্ঠানে বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন,এটি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্তৃত এক জরিপ। এর মাধ্যমে সহিংসতার পরিমাণ, প্রভাব ও প্রবণতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়েছি, যা নীতি প্রণয়নে কাজে লাগবে। তিনি জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহে বিবিএসের সক্ষমতা আরও জোরদার করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. কায়েম আরা বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মুস্তারি। উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।

অনুষ্ঠানে আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান শিরীন হক, এসপিবিএনের ডিআইজি ড. শোবে রিয়াজ আলম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আক্তার অংশ নেন। বক্তারা প্রমাণ-ভিত্তিক নীতি প্রণয়ন ও নারী-কন্যাশিশুর জন্য সুরক্ষিত সমাজ গঠনের ওপর জোর দেন।

ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের নারীদের বাস্তব চিত্র প্রকাশ করে। হাজারো নারী সাহস করে তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেছেন। এগুলো নীতি প্রণয়নের দৃঢ় ভিত্তি। এখন প্রয়োজন সহিংসতা প্রতিরোধ, সার্ভাইভারদের সহায়তা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার কার্যকর পদ¶েপ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত