রাষ্ট্রীয় একুশে পদক প্রদান

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের অবিনাশী স্মারক : ড. ইউনূস

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ২৮
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৫০

শিল্প-সাহিত্য-সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নারী ফুটবল দলকে চলতি বছরের একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে দেশের অন্যতম সেরা এই পদক তুলে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্ম ঘুণেধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে স্বপ্নের নতুন সভ্যতা গড়তে চায়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তরুণদের এই স্বপ্নের আশু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে।

তরুণ প্রজন্মের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা ঘুণেধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে তাদের স্বপ্নের নতুন সভ্যতা গড়তে চায়। যে সভ্যতার মূল লক্ষ্য থাকবে পৃথিবীর সব সম্পদের ওপর প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা, প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন দেখার এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সব সুযোগ নিশ্চিত করা, মানুষের জীবনযাত্রাকে এমনভাবে গড়ে তোলা, যাতে করে পৃথিবীর অস্তিত্ব কোনোরকমে বিঘ্নিত না হয় এবং পৃথিবীর ওপর বসবাসরত সব প্রাণীর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকা কোনোক্রমেই বিঘ্নিত না হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, উদ্যমী ও সৃজনশীল। আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন অতীতের যে কোনো প্রজন্মের স্বপ্নের চেয়ে দুঃসাহসী। তারা নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চায়। তারা তেমনি একই আত্মবিশ্বাসে নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে চায়। নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে তারা নেতৃত্ব দিতে চায়। সে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত। ছেলেরাও প্রস্তুত, মেয়েরাও প্রস্তুত।

একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের অবিনাশী স্মারক উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের স্বাধিকার চেতনার প্রাণপ্রবাহ একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রসমাজ। ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধিকার চেতনার এক অবিশ্বাস্য জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের পক্ষ থেকে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও সহ-অধিনায়ক মারিয়া মান্দা পদক গ্রহণ করেন। পরে নারী ফুটবল দলের সব সদস্য মঞ্চে ওঠেন। পদক গ্রহণ শেষে পদকপ্রাপ্ত ও পরিবারের সদস্যরা নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

এবারের একুশে পদকপ্রাপ্তরা হলেন— চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) ও ফেরদৌস আরা, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন ও চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা, সাংবাদিকতায় মাহ্ফুজ উল্লাহ (মরণোত্তর), গবেষণায় মঈদুল হাসান, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহদী হাসান খান (দলনেতা), রিফাত নবী (দলগত), মো. তানবিন ইসলাম সিয়াম (দলগত), শাবাব মুস্তাফা (দলগত), সমাজসেবায় মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্যে হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) ও শহীদুল জহির (মো. শহিদুল হক) (মরণোত্তর)। সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ড. শহিদুল আলম এবং ক্রীড়ায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।

প্রয়াত কবি হেলাল হাফিজের পক্ষে তার বড় ভাই দুলাল আবদুল হাফিজ পদক গ্রহণ করেন। পরে অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি। দুলাল আবদুল হাফিজ বলেন, জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা প্রাপ্তি যে কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের জন্য একদিকে যেমন গৌরব ও আনন্দের অনুভূতি, তেমনি মরণোত্তর পদক ও সম্মাননা গৌরব এবং আনন্দের পাশাপাশি অনেকটা বেদনাবিধুর অনুভূতিও বটে। ছোট ভাইয়ের পদক গ্রহণ বেদনাবিধুর পরিস্থিতির শিকার বলে মনে করে তিনি।

উন্নত দেশে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান বিরল উল্লেখ করে আবদুল হাফিজ বলেন, উন্নয়নশীল দেশে এ সংস্কৃতি বেশ চালু রয়েছে, যা থেকে আশু নিষ্কৃতির প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তিনি মরণোত্তর সম্মাননার বিকল্প চিন্তা করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, নির্মোহ ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন গুণীজনের জীবদ্দশায় বাধ্যতামূলক করা যায় কী না ভেবে দেখতে হবে।।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। বক্তব্য দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, ভাষাসৈনিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখা ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত