তাপপ্রবাহ কমে ঝরবে ভারী বৃষ্টি, থাকতে পারে কয়েকদিন

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৪: ৩৭
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৪৬

কয়েকদিনের মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের প্রভাবে অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে মানুষ যখন অতিষ্ঠ ঠিক সেমুহূর্তে দেশজুড়ে বৃষ্টির পরশ অন্যরকম প্রশান্তি এনে দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টি হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে চলা দেশের বৈরি আবহাওয়ার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যাপসা গরমে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়ে স্বস্তি ফিরেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় আগের ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৫১টি সেন্টার এলাকায় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড ও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম, খুলনা বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ফেনীতে ১৬৮, কুমিল্লায় ১১৪, ভোলায় ১০১, মানিকগঞ্জে ৮৫ ও বরিশালে ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। তবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু এলাকায় যতসামান্য বৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে গতকাল বুধবার দেশের কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এছাড়া বেশিরভাগ এলাকায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিংবা এর উপরে ছিল তাপমাত্রা। এর আগের কয়েকদিনেও মৃদু থেকে মাঝারি তাপমাত্রা অব্যাহত ছিল। তবে আজ বৃহস্পতিবার বিকাল নাগাদ সারদেশে ভ্যাপসা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নাগাদ আবহাওয়ার বেশ পরিবর্তন আসতে পারে।

এ অবস্থার উন্নতির খবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আজ সকালে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে আজ বিকেল ৫টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা দেশের চার বিভাগে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

সংস্থাটি জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরো ঘণীভূত হতে পারে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপর সক্রিয় এবং দেশের অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দুপুরে আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির বলেন, গতকাল বুধবার চট্টগ্রামসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের দিকে আকাশে যে মেঘমালার তৈরি হয়েছিল সেটা রাতে বৃষ্টি ঝড়িয়ে উত্তরের দিকে চলে গেছে। তবে সকালের দিকেই উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা আরো সুস্পষ্ট হয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি ঝড়াতে পারে। পরে তা ধীরে ধীরে মধ্য ও অন্যান্য অঞ্চলের দিকে সরে আসতে পারে।

এতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের প্রভাবে দেশজুড়ে চলমান ভ্যাপসা গরম কমে আসবে। শুক্রবার থেকে দেশজুড়ে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকেই সাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এরপ্রভাবে শুক্রবার থেকে সারাদেশেই বৃষ্টি হবে, তবে উপকূলীয় এলাকায় বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টানা বৃষ্টি ২৮ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, উত্তর-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হতে পারে।

সংস্থাটি জানায়, ধেঁয়ে আসছে দেশের দিকে প্রবল মৌসুমি বৃষ্টি বলয় ধারা। এরই মধ্যে বৃষ্টি বলয় ধারা দেশের মধ্য ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। এটি আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে দেশের ৬০-৭০ শতাংশ এলাকায় প্রথম ধাপে সক্রিয় হতে পারে। এরপর ২৬ জুলাই দক্ষিণাঞ্চল ব্যতীত বাকি এলাকায় বৃষ্টি অনেকটা কম থাকতে পারে। এরপর ২৬ জুলাই রাত থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় বৃষ্টি বলয় ধারা পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বৃষ্টি বলয়, মানে এই বৃষ্টি বলয়ে দেশের সকল এলাকায় যথেষ্ট বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এবং এই বৃষ্টি বলয়টি দেশের ১০০ শতাংশ এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হতে পারে।

এটি চলতি বছরের ৯তম বৃষ্টি বলয় ও ৫ম মৌসূমী বৃষ্টি বলয়, যা আজ ২৪ শে জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগ হয়ে দেশের প্রবেশ করেছে ও ২ রা অগাস্ট রংপুর হয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে সেটিকে বলা হয়ে থাকে অতিভারি বৃষ্টিপাত।

অন্যদিকে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত