আজ ৬ ডিসেম্বর, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ভাদুরিয়া দুর্গ পতনের মধ্য দিয়ে নবাবগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়। টানা লড়াই, বীরত্ব ও আত্মোৎসর্গের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের আহবায়ক দবিরুল ইসলাম দৈনিক আমার দেশকে বলেন, নবাবগঞ্জের ভাদুরিয়া দুর্গ পতনের ঐতিহাসিক দিন মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহরে ১ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ডাঙ্গাপাড়া, বিরামপুর, ফুলবাড়ী ও নবাবগঞ্জের ছোট ছোট ঘাঁটি গুটিয়ে ভাদুরিয়া বাজারে একটি বড় ও শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করে। ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে এ ঘাঁটিতে আক্রমণ চালালে তীব্র লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়। প্রতিরোধ গড়ে তুললেও সেদিন ৫-৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর ৫৫ জন সদস্য বীরত্বের সঙ্গে জীবন উৎসর্গ করেন। পরদিন ৬ ডিসেম্বর ভোররাতে যৌথবাহিনী দ্বিতীয় দফায় সর্বাত্মক আক্রমণ চালালে পাকবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে ৮২ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ধ্বংস হয় তাদের ৮টি ট্যাংক। ভাদুরিয়া দুর্গ পতনের মধ্য দিয়েই নবাবগঞ্জ পুরোপুরি হানাদারমুক্ত হয়।
নবাবগঞ্জে চারটি নির্মম গণহত্যা চালায় পাকসেনারা। এর মধ্যে ২৩ এপ্রিল চকদলু গণহত্যা, যেখানে ১৯ জন শহীদ হয়। ২০ জুলাই খয়েরগনি গণহত্যায় প্রায় অর্ধশত শহীদ হয়। ১৫ সেপ্টেম্বরন কাতলমারী গণহত্যায় ১৯৫ জন শহীদ হয়। ১০ অক্টোবর চড়ারহাট আন্দলগ্রাম গণহত্যায় শতাধিক শহীদ হয়।
উপজেলায় দুটি গণকবর রয়েছে- চকদলু গণকবর ও চড়ারহাট গণকবর। সংশ্লিষ্ট গণহত্যার শহীদদের এখানে সমাহিত করা হয়। কাতালমারীর শহীদদের যেসব কূপে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো পরবর্তীতে ভরাট করা হলেও ইতিহাসের নির্মমতা মনে করিয়ে দেয় প্রতিনিয়ত।
সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে কাটলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের আব্দুল খালেক ডাঙ্গাপাড়ায় অবস্থিত পাকসেনাদের ক্যাম্প আক্রমণ করতে গিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। তিনি উপজেলার ভাদুরিয়া ইউনিয়নের শাল্টিমুরাদপুর (পুঁটিহার) গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
নভেম্বর মাসের ৫ তারিখ শালখুরিয়া গ্রামের বছির উদ্দিনের পুত্র মুক্তিযোদ্ধা বহরুল্লাহ ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গোপনে গ্রামে আসেন। কিন্তু শান্তি কমিটির লোকেরা এ খবর পেয়ে তাকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি সেক্টর কমান্ডার নূরুজ্জামানের অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন। একই দিনে বেড়ামালিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য কেরামত মাস্টারকেও হত্যা করা হয়।
৬ ডিসেম্বর ভাদুরিয়া বাজারে ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী দ্বিতীয় দফায় সর্বাত্মক আক্রমণ চালালে পাকবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে ৮২ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ধ্বংস হয় তাদের ৮টি ট্যাংক। ভাদুরিয়া দুর্গ পতনের মধ্য দিয়েই নবাবগঞ্জ পুরোপুরি হানাদারমুক্ত হয়। এদিনের যুদ্ধটা ছিল স্বাধীনতার আলোকময় পথে নবাবগঞ্জের অগ্রযাত্রা। শহীদদের রক্তস্নাত এই ইতিহাস আজও শ্রদ্ধা, বেদনাবোধ ও গর্বে এখনো নবাবগঞ্জবাসীকে উদ্দীপ্ত করে।
উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশ গ্রহণে আজ শোভাযাত্রা,আলোচনা সভা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে।


প্রণব মুখার্জির কাছে কেন গিয়েছিলেন জেনারেল মইন, জানা গেল কারণ