দণ্ডিতদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধান বাতিলের সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১: ৩২

বিচারপ্রার্থীদের জন্য দ্রুত ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে দেশের সব বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ গঠন ও স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসের প্রস্তাব করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। ফৌজদারি মামলার তদন্তে পৃথক সংস্থা গঠন ও দণ্ডিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার এখতিয়ারের বিধান পরিমার্জনের কথাও বলা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।

বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে এ প্রতিবেদন তুলে দেন কমিশন প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। উচ্চ আদালতে দক্ষ ও যোগ্যদের বিচারপতি নিয়োগ নিশ্চিত করতে সুপ্রিম জডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। এতে বিচার বিভাগে বিরাজমান সমস্যা, সংবিধানে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত বিধান, সংশ্লিষ্ট আইন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, জনবল, আর্থিক এবং ভৌত ও লজিস্টিক বিষয়াদি আধুনিকায়নের বিষয়ে সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন পেশ করার সময় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাসহ সংস্কার কমিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। সুপারিশে রয়েছে, বর্তমানে প্রচলিত চূড়ান্ত দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক একচ্ছত্রভাবে ক্ষমা করে দেওয়ার বিধান রহিত করা। সুপারিশে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির এ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বোর্ড প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার সুপারিশের ভিত্তিতে অপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।

এছাড়া ঢাকার বাইরে বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ স্থাপনের পাশাপাশি জেলা, উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের কার্যক্রম সম্প্রসারণ, প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারক নিয়োগে পৃথক কমিশন গঠন, বিচারক নিয়োগে বয়স পুনর্নির্ধারণ, পৃথক বিচার বিভাগ সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের খসড়া এ প্রস্তাবে।

হাসিনার পতনের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে আট সদস্যের বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয় গত ৩ অক্টোবর। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে প্রধান করে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনটি গঠন করা হয়। সুপারিশে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি করার রীতি প্রচলিত থাকলেও রাজনৈতিক সরকারগুলো বেশিরভাগ সময়ই তা মানেনি। কোনো কোনো সময় জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে এ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। কমিশন তাদের খসড়া সুপারিশে প্রবীণতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি পদে রাখার প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারকদের নিয়োগে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে ।

বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত প্রধান বিচারপতির একক পরামর্শ প্রদান পদ্ধতির পরিবর্তে একটি সম্মিলিত এবং প্রতিনিধিত্বশীল সুপারিশ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা ‘যৌক্তিক এবং বাঞ্ছনীয়’ বলে কমিশন মনে করে।

এছাড়া হাই কোর্টে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ৪৮ বছর নির্ধারণের আলোকে কমিশন সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের অবসরের বয়স ৭০ বছর পুনঃনির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে। বিদ্যমান সংবিধানে প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর নির্ধারণ করা আছে। সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে বিচার বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে প্রতি তিন বছর পরপর সুপ্রিম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ এবং তা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।

ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পত্তির বিবরণীও। নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সমন্বয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্তে অভিযুক্ত বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা বা অন্যবিধ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত