যাদের হাতে হয় সবার পশু জবাই, তাদেরই নেই কোরবানি

ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ ও হামিদুর রহমান
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৫, ২২: ১০
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৫, ২২: ২৮

পবিত্র ঈদুল আজহা। সারা বিশ্বের সামর্থ্যবান মুসলিমরা আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দিনটি উদযাপন করেন। এ দিনে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দের আমলই হচ্ছে তার নামে কোরবানি করা। ঈদের নামাজের পর মুসল্লিদের পশু কোরবানি করার জন্য মাঠে নেমে পড়েন প্রতিটি মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা। তারা শুধু অন্যের পশুই কোরবানি করেন না, বরং সবার কোরবানি যেন পরিপূর্ণভাবে আদায় হয়, সেই জন্য বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়েলও আলোচনা করেন।

বিজ্ঞাপন

এ ঈদের প্রধান উৎসবই হচ্ছে পশু কোরবানি করা। ঈদের নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় এ উৎসব। চারপাশ থেকে শোনা যায় গরু, ছাগলের ডাক। কোরবানির পশু জবাইকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয় নানা প্রস্তুতি। শিশুদের চোখে দেখা মেলে আনন্দ ও কৌতূহলের। কিন্তু ইমাম ও মুয়াজ্জিন যারা অন্যদের পশুগুলো কোরবানি করে দেন, তাদের নিজেদের অধিকাংশেরই থাকে না পশু কোরবানি। প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হওয়ার কারণে অনেক ইমাম-মুয়াজ্জিনের উপর কোরবানি ওয়াজিবই হয় না। তাই তারা অন্যদের পশু কোরবানি করলেও নিজেরা কোরবানি দিতে পারেন না। এমনকি তারা ঈদের দিনটা সন্তান ও পরিবারের সাথে কাটাতে পারেন না।

রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার বাইতুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম রাশেদ আহমেদ বলেন, 'প্রকৃতপক্ষে কোরবানির ঈদটা আমাদের জন্য অনেক বেদনার। রোজার ঈদে আমরা কিছু টাকা বোনাস পেলেও ঈদুল আজহায় কোনো বোনাস পাই না। আবার এ দিনে আমরা অন্যদের পশু কোরবানি করি, কিন্তু আমরা নিজেরা কোরবানি দিতে পারি না।'

একই এলাকার আল কুদ্দুস জামে মসজিদের ইমাম মাহমুদ হোসেন বলেন, 'আল্লাহপাক মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। আমার কাছে মনে হয় কোরবানির ঈদে আল্লাহ আমাদের বেশি পরীক্ষা করেন। আমরা অন্যদের পশু কোরবানি করে দিয়ে থাকি। তাদের সন্তানদের আনন্দ করতে দেখি। কিন্তু আমরা নিজেরা কোরবানি দিতে পারি না। আমাদের সন্তানদের নিয়ে কোরবানির আনন্দ করতে পারি না। আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের দুঃখের কথা বলি। আল্লাহই আমাদের উত্তম অভিভাবক।'

প্রতিবেদকের বাসায় কোরবানি করিয়ে দিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মগবাজার টিএনটি কলোনি জামে মসজিদের এক খাদেম বলেন, আমরা শুধু অন্যের শান্তি দেখে নিজেরা তৃপ্তি পাই। যে সামান্য বেতন পাই তা দিয়ে শুধু দিন যায়, কোরবানি করব সে সামর্থ তো থাকতে হবে।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম হেলাল উদ্দিন বলেন, ইমামগণ জাতির পথ প্রদর্শক। মানুষদের গোমরাহির পথ থেকে সিরাতল মুসতাকিমের পথে চলতে সহায়তা করেন। কিন্তু আমরা অনেক যায়গায় উপেক্ষিত। সমাজে আমাদের যে অবস্থান থাকার কথা তা নেই। আমাদের যে বেতন-ভাতা তা দিয়ে কোনো রকম দিনাতিপাত করি। আজ কোরবানি হচ্ছে; কিন্তু আমাদের অনেকেই অসচ্ছলতার কারণে অন্যের কোরবানি করিয়ে দিলেও নিজেদের কোরবানি দিতে পারি না। এটা অনেক কষ্টের। স্ত্রী-সন্তানদের কাছে নিজেদের অনেক ছোট মনে হয়।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মানোন্নয়ন ও তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন নিয়ে কাজ করে শানে সাহাবা জাতীয় খতিব ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীম মজুমদার বলেন, 'কোরবানির ঈদে অনেক ইমাম-মুয়াজ্জিনই নিজেদের পক্ষে কোরবানি করতে পারেন না। বিষয়টি সত্যিই বেদনার। সেই সঙ্গে দুঃখজনকও। এই ক্ষেত্রে আমি মসজিদ কমিটির লোকদের বলবো, আপনারা মসজিদের বাহ্যিক উন্নয়নের আগে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মান-সম্মত বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

সেই সঙ্গে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বলবো, আপনারা নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করুন। অনেক মসজিদের ইমামের বেতন বেশ ভালো। তারা যোগ্য, তাই তাদের বেতনও ভালো। তাই নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করুন। সেই সাথে ইমামতি ও মুয়াজ্জিনি করার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ব্যবসা করুন। তাহলে ভবিষ্যতে ঈদুল আজহার আনন্দের দিনে আমাদের বেদনা থাকবে না।'

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত