মাছ রপ্তানি বেড়েছে হাজার কোটি টাকার

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ০৭

২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা সমমূল্যের ৯১ হাজার মেট্রিক টন মাছ বা মৎস্য-জাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭১,৪৭৭ মেট্রিক টন মাছ বা মৎস্য-জাত পণ্য এক্সপোর্ট করে ৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা আয় করে। সে হিসেবে আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মাছ রপ্তানি বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানিতেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, ফ্রান্স, আমেরিকা, জাপান, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানিসহ বিশ্বের ৫২ টি দেশে চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেল, কাঁকড়া, কুঁচিয়া, পাংগাস, পাবদা, তেলাপিয়া, শোল, কৈ, শিং, মাগুর ইত্যাদি প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, বিশ্বে স্বাদুপানি ও চাষের মাছ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ স্বাদু-পানির মাছ উৎপাদন করে ১৩ লাখ ২২ হাজার টন- যা বিশ্বের মোট মাছের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবদান ছিল ১১ শতাংশ। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত বিশ্বের সামগ্রিক মৎস্যসম্পদবিষয়ক প্রতিবেদনেও এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

মিঠা পানি ও বদ্ধ জলাশয়ের মাছ উৎপাদনেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় ও তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। তবে ইলিশ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ১ নম্বর অবস্থানে রয়েছে ।

মৎস্য অধিদপ্তরের জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী দেশে মাছের মোট উৎপাদন হয়েছে ৫০ দশমিক ১৮ লাখ মেট্রিক টন। দেশের ১৪ লাখ নারীসহ ২ কোটির বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য সেক্টরের সঙ্গে জড়িত। দেশের মোট জিডিপিতে মৎস্যখাতের অবদান প্রায় ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে এখাতের অবদান প্রায় ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ।

গত মঙ্গলবার জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে ‘মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন এবং সর্বোত্তম ব্যবহার’ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বলা হয়, বিদেশে মানসম্মত মৎস্যপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। তবে পণ্যের মান ধরে রাখতে না পারলে অথবা মাছে অপদ্রব্য মেশালে মৎস্য-জাত পণ্য রপ্তানির আন্তর্জাতিক বাজার হারাতে হবে। তাই মাছের পোনা সংগ্রহ, চাষ, আহরণ, বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ সব পর্যায়ে আদর্শমান ঠিক আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করা আবশ্যক।

এছাড়াও বলা হয়, দেশের মোট রপ্তানি আয়ে মৎস্যখাত এক সময় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখতো, এখন সেটা সপ্তম স্থানে নেমে এসেছে। ভালো মানের পোনা সরবরাহ নিশ্চিতে মৎস্য বিভাগ আরও সক্রিয় হবে বলে আশা করা যায়। কার্প জাতীয় মাছ চাষের পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় গৃহীত উদ্যোগগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।

এদিকে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ শুধু মাছ রপ্তানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মাছের শরীরের এমন কিছু মূল্যবান অংশ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার চেয়েও দামি। এই দামি অংশ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে প্রতি কেজি কোটি টাকায়। এই বিশেষ অংশটির নাম হচ্ছে পিটুইটারী গ্লান্ড।

পিটুইটারী গ্লান্ড হলো মাছের মস্তিষ্কের নিচের অংশে থাকা এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র গ্রন্থি, যা বিশেষ হরমোন নিঃসরণ করে। এই গ্লান্ড বিশেষ করে কার্প (Carp) ও ক্যাটফিশ (Catfish) জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বব্যাপী ফিশ হ্যাচারিগুলোতে প্রজনন কার্যক্রমে এই গ্লান্ড থেকে নির্যাস বের করে ব্যবহার করা হয়। এটি প্রজননক্ষমতা বাড়াতে এবং ডিম ছাড়ানোর কাজে ব্যবহার হয়, যাকে বলে Induced Breeding।

এছাড়াও ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে নানা ধরনের গবেষণায় এই গ্লান্ড ব্যবহৃত হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে পিটুইটারী গ্লান্ডের চাহিদা ও মূল্য : প্রতি কেজি ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা!

২০২৩ সালে শুধুমাত্র চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে এই গ্লান্ডের চাহিদা ছিল প্রায় ১০০ টন, যার বাজার মূল্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের নদী, খাল, বিল, হাওর ও সমুদ্র উপকূলে প্রচুর পরিমাণে কার্প ও ক্যাটফিশ জাতীয় মাছ পাওয়া যায়, যেগুলোর পিটুইটারী গ্লান্ড বিশ্বমানের মানসম্পন্ন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭.৫ টন পিটুইটারী গ্লান্ড রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডলার।

সরকারের সহযোগিতায় যদি পরিকল্পিত সংগ্রহ ও রপ্তানি করা যায়, তবে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত