ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেছেন, ইউপিডিএফ সব সময় একটা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার উপর শ্রদ্ধাশীল, একটা মানবিক কল্যাণকর অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র কায়েমে সব সময় লক্ষ রাখে।

শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন মাইকেল চাকমা।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রামের নিপীড়িত জাতি ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছি। দীর্ঘ পট পরিক্রমায় আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানেও আমাদের দল অংশগ্রহণ করে। আমাদের সংগঠন শুরু থেকে অন্যায়, অত্যাচার আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, যে অন্যায় শাসন পার্বত্য চট্টগ্রামে চলেছে, তার অবসানের লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বিগত দিনগুলোতে অন্যায় অত্যাচারের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে মাইকেল চাকমা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেশে যত রাজনৈতিক সংগঠন আছে, তারা যতনা নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার চাইতে আমাদের দল ইউপিডিএফ অনেক বেশি শিকার আমরা হয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম এই বাংলাদেশ একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশ হোক, এই দেশে সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল জাতি সত্তার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজের রাজনৈতিক অধিকার ভাষা সংস্কৃতির অধিকার ভোগ করে একটা সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ আমরা গড়বো। কিন্তু বিগত সময়ে ইউপিডিএফের উপরে যেভাবে দমন পীড়ন চালানো হয়েছিল, ইউপিডিএফ সেই রেজিউমের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।

মাইকেল চাকমা বলেন, সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৭টি ভোটকেন্দ্রে শুন্য ভোটের মাধ্যমে প্রথম যে হাসিনা রেজিউমের পতনের সূচনা শুরু হয়। সেই রায় ছিলো গণরায়, ইউপিডিএফের নেতৃত্বে জনগণ লালকার্ড দেখিয়েছিল। সেই লালকার্ড দেখানো থেকে শুরু করে, সর্বশেষ ছাত্র জনতার প্রতিবাদ প্রতিরোধ উত্থান হয়, সেই উত্থানের মধ্য দিয়ে সবশেষ শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়, অত্যন্ত খারাপ অবস্থায়।

বর্তমান সসরকারের প্রতি হতাশা ব্যক্ত করে মাইকেল চাকমা বলেন, '২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর ড. ইউনূরের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে, এই সরকারের থেকে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ অনেক কিছু আশা করেছিলাম। ভেবেছিলাম অতীতের সমস্ত দমন পীড়ন কিছুটা হলেও অবসান হবে এবং এই নতুন বাংলা দেশে আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেকটা স্বস্তিতে ভালো অবস্থায় থাকতে পারবো। 

তিনি বলেন, কিন্তু ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতে  হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এটা কখনও প্রত্যাশিত ছিল না। রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই তদন্ত কমিটি আজ পর্যন্ত যারা সেই হত্যার সাথে জড়িত ছিল, সেই রিপোর্ট প্রকাশ করেনি, আমরা জানতে পারি নি। 

তিনি বলেন, তাছাড়াও এখনও পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অবস্থা রয়েছে সেই ক্ষেত্র বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যে কার্যক্রম এর প্রতি আমরা কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করতেই পারি। অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের সবার জন্য মঙ্গলজনক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধশালী অন্তর্ভুক্তি মুলক বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারি।

মাইকেল চাকমার নেতৃত্ব চার সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেন। তারা হলেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ইউপিডিএফের সদস্য জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ সদস্য সুনয়ন চাকমা।

এমবি