অক্সিজেন সামিট অনুষ্ঠানে বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর

উপজেলা হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহে কাজ করছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৪৭

দেশের ১৮ কোটি মানুষের মাঝে নিরাপদ অক্সিজেন পৌঁছাতে বিভাগীয় ও জেলা সদর হাসপাতালের পাশাপাশি উপজেলা হাসপাতালেও অক্সিজেন সরবরাহে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সারাদেশের হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা দেশের সব হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতে কাজ করছি। দেশেই যাতে অক্সিজেন তৈরি হয়, তাতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। শুধু অক্সিজেন নয়, যেগুলো রাষ্ট্র ও প্রাণকে ঝুঁকিতে ফেলে তা কিভাবে দেশেই তৈরি করা যায় সেখানেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ, যেকোনো খাতের ব্যর্থতার পেছনেও স্বাস্থ্য চলে আসে। আমরা ১৮ কোটি মানুষের কাছে আমরা নিরাপদ অক্সিজেন পৌঁছে দিতে তাই, এটি নিশ্চিত হলেই কেবল এই অনুষ্ঠান সার্থক হবে।'

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত বাংলাদেশ অক্সিজেন সামিট ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এই সামিটের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান, আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.মো. নাজমুল হোসেন অংশ নেন।

বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, একটি জাতীয় অক্সিজেন নেটওয়ার্ক (ন্যাশনাল অক্সিজেন নেটওয়ার্ক) গড়ে তোলা প্রয়োজন। অক্সিজেনকে এমনভাবে সহজলভ্য করতে হবে, যেন এটি ওষুধের মতো সহজে পাওয়া যায়। বর্তমানে হাসপাতালভেদে অক্সিজেনের দাম ভিন্ন। তাই আমরা এটিকে জরুরি ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছি, যার দাম সরকার নির্ধারণ করবে। ন্যাশনাল অক্সিজেন সিস্টেম গড়ে তুলে সারাদেশে সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ডিপিপি প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি অক্সিজেন ডিভাইসের মান নিয়ন্ত্রণও করা হবে। আমরা দেশে অক্সিজেন, ভ্যাকসিন, অ্যান্টিভেনম ও অ্যান্টিরেবিস উৎপাদনের উদ্যোগ নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো খাতে এমন ব্যর্থতা, যা জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে, সেগুলো মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে।

এ সময় স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমান বলেন, আমরা যারা বয়স্ক তারা অক্সিজেনের গুরুত্ব বুঝি কোভিড মহামারিতে। হাসপাতালে না গেলে এটি আসলে বুঝা যায়না। এখনও দেশের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। কোভিড সময়ে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম কিন্তু অনেকগুলোতে সেটি ধরে রাখা যায়নি। যেসব হাসপাতালে এখনও পর্যাপ্ত সরবরাহ করা যায়নি, সেখানে যাতে দ্রুত যায় সেই দায় নিয়েই আমরা কাজ করছি।

অক্সিজেন সামিটে বাংলাদেশের অক্সিজেন চাহিদা, প্রাপ্যতা, নীতিমালা, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও গবেষণার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশকেন্দ্রিক গবেষণা উপস্থাপনার পাশাপাশি ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ কমিশন অন মেডিকেল অক্সিজেন সিকিউরিটি-এর প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত বৈশ্বিক তথ্য, প্রমাণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও তুলে ধরা হয়।

আয়োজকদের মতে, মেডিকেল অক্সিজেন একটি অপরিহার্য জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, কিন্তু এর নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সকল বয়সী মানুষের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তবুও এই জীবনরক্ষাকারী উপকরণের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ও বৈষম্য রয়ে গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসাক্ষেত্রে অক্সিজেনের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, কিন্তু সরবরাহ এখনো অপর্যাপ্ত। তাই বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং অক্সিজেন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।

ল্যানসেট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রোগী ও স্বজনদের সাক্ষ্য থেকে বোঝা যায় অক্সিজেন সেবা ও পালস অক্সিমিটার ব্যবহারে এখনো বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত ব্যয় বহন করতে হয়। তাই সরকারগুলোকে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় পালস অক্সিমেট্রি ও অক্সিজেন সেবা অন্তর্ভুক্ত করা এবং ব্যবহার ফি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত