বিমানবন্দরে আগুনে ওষুধ শিল্পের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ০৮
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১২

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের শীর্ষ ৪৫টি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি)।

বিজ্ঞাপন

এতে দেশের ওপর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। তা সত্ত্বেও ওষুধের দাম বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন বাপির নেতারা।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান ও বাপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম মোসাদ্দেক হোসেন এবং ডেল্টা ফার্মার মহাব্যবস্থাপক ও বাপির মহাসচিব জাকির হোসেন।

জাকির হোসেন বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামাল ভস্ম হওয়ায় এ শিল্পখাতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানি থেকে প্রাথমিকভাবে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে শীর্ষ ৪৫টি কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পোড়ার তথ্য মিলেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

পুড়ে যাওয়া পণ্যের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিক, ক্যানসার জাতীয় ওষুধ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালও ছিল বলে জানান তিনি।

জাকির হোসেন বলেন, ‘এসব কাঁচামাল পুড়ে যাওয়ায় উল্লিখিত ওষুধ উৎপাদন ব্যাহত হবে। বেশ কিছু স্পেয়ার পার্টস ও মেশিনারিজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওষুধ প্রস্তুতকরণে পুনরায় আমদানিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ফলে এর সাথে সংযুক্ত উৎপাদন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হবে। একইসঙ্গে যে সব পণ্য অন্যান্য বিমানবন্দরে নামানো হয়েছে, সেসব পণ্য নিয়েও চিন্তিত আমরা। পুড়ে যাওয়া পণ্যের মধ্যে একটি বড় অংশ হলো নারকোটিস বিভাগ থেকে অনুমোদন নেওয়া পণ্য। এই পণ্যগুলো পুনরায় আনা যেমন জটিল, তেমনি সময়সাপেক্ষও। কেননা এখানে ধাপে ধাপে অনেক ধরনের অনুমোদন নেওয়া হয়। ফলে এখানেও বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’

তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওষুধের দাম বৃদ্ধি বা সংকট তৈরি হবে না বলে জানান বাপির মহাসচিব।

ওষুধ শিল্পখাতের সুরক্ষায় ১৪টি দাবি তুলে ধরেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ওষুধ শিল্পখাতের ঝুঁকি ও ভবিষ্যত সম্ভাব্য সংকট এড়াতে এবং এই খাতের সুরক্ষায় আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং এরই মধ্যে শুল্ক, ডিউটি, ট্যাক্স ও ভ্যাট দেওয়া পণ্যের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা, ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের এলসি সংক্রান্ত ব্যাংক চার্জ ও সুদ মওকুফ, পুনরায় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংক মার্জিন, চার্জ ও সুদ ছাড়াই সহজ শর্তে এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের বিপরীতে ধার্য কাস্টম ডিউটি, ভ্যাট, অগ্রিম আয়করসহ সব ধরনের চার্জ ও দণ্ড মওকুফ করতে হবে।

দাবিতে আরো বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের কারণে বিন লক না করে উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখতে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, নারকোটিকস অনুমোদিত পণ্য পুনরায় দ্রুত আমদানির অনুমতি, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, কাস্টমস, এনবিআর ও বিমান কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে জরুরি সভা ডেকে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া ওষুধ শিল্পের জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ও রাসায়নিকের জন্য আলাদা গুদাম করার দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

রেনেটা লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ও বাপির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ কায়সার কবীর, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও বাপির কোষাধ্যক্ষ মুহাম্সদ হালিমুজ্জামান ছাড়াও বাপির সদস্য নিপ্রো-জেএমআই ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, একমি ল্যাবরোটারিজ লিমিটেডের পরিচালক ফাহিম সিনহা, ওয়ান ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত