টানা বর্ষণ আর উজানের ঢল

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, চরাঞ্চল প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০৪

কয়েকদিনের টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে উত্তরাঞ্চলের নদনদীর পানি বেড়েছে। এরই মধ্যে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গাধর নদের পানি বেড়ে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় আমন ধান ও শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছেন, বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই; দ্রুত পানি নেমে যাবে।

সোমবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, তিস্তা নদী কাউনিয়া (রংপুর) পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে ভারি থেকে অভিভারি এবং উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয় প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে। আগামী ৩ দিন দেশের অভ্যন্তরে এবং সংলগ্ন উজানে ভারতের প্রদেশসমূহে মাঝারি থেকে মাঝারি-ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন হ্রাস পেতে পারে। এ সময়ে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত নদ-নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ২ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী ৩ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে; তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

গঙ্গা নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে; অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী ২ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে; তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

সুরমা নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘন্টায় স্থিতিশীল আছে; অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পেয়েছে। উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন হ্রাস পেতে পারে।

রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের আপার করতোয়া-আপার আত্রাই, টাঙ্গন, পুনর্ভবা, ঘাঘট, আত্রাই, যমুনেশ্বরি ও করতোয়া নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে; অপরদিকে মহানন্দা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ২ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ৩য় দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে; অপরদিকে গোমতী, মুহরী, সেলোনিয়া ও ফেনী নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেয়েছে; হালদা ও সাঙ্গু নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে পরবর্তী ২ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে।

ময়মনসিংহ বিভাগের জিজিয়াম, সোমেশ্বরী, দুগাই, কংস নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ১ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পরবর্তী ২ দিন হ্রাস পেতে পারে।

এদিকে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই তিন ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উজানের হঠাৎ বন্যার খবরে কেউ কেউ তিস্তার চর থেকে গৃহপালিত পশু ও শিশুদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।

ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গাধর নদের পানি বেড়ে চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় আমন ধান ও শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সোমবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি বেড়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে। তাই বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। দ্রুতই পানি নেমে যাবে বলে তিনি জানান।

লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সোমবার সকাল ৯টায় তিস্তার পানি কমে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে। এর আগে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সেখানে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছিল।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত