দিনকে রাত করা ছাড়া ইসি সব পারে: বদিউল আলম মজুমদার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ২৫
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৪৫

দিনকে রাত ও রাতকে দিন করা ছাড়া নির্বাচন কমিশন সব কিছু করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।

বিজ্ঞাপন

শনিবার দুপরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত 'আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই প্রধান' শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের অগাধ ক্ষমতা। এটি ব্যবহার করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সারা দেশ থেকে এজেন্টদের পাঠানো ফলাফল যদি নির্বাচন কমিশন গেজেট করে দেয়, তাহলে কমিশনের কোনো দায় থাকে না।

তিনি বলেন, আমি মনে করি আগের এই নিয়ম থেকে বেরিয়ে নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের উচিত নির্বাচন কেমন হয়েছে এটি জানানো। যদি এভাবে নির্বাচন কমিশন দায় নেয় তাহলেই সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করা সহজ হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এনিয়ম চালু করলে সরকার, রাজনৈতিক দল ও পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যে কেউ যদি সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত, বিতর্কিত, পক্ষপাতমূলক করে তাহলে নির্বাচন কমিশন চাইলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে দেশবাসীকে জানিয়ে দিতে পারবে। কাদের জন্য তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারেনি সেটিও জানিয়ে দিতে পারবে। ফলে সবার উপর চাপ থাকবে, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করা সহজ হবে।

এসময় 'আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দিব' স্লোগানটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই স্লোগান না দিয়ে আমরা নতুন স্লোগান দিতে পারি -'আমার ভোট আমি দেব, জেনে শুনে বুঝে দিব। সৎ লোককে দেব। যোগ্য লোককে দেব। সঠিক ব্যক্তি বুঝে দিব'।

বিতর্ক প্রতিযোগিতাটিতে ১ নম্বরের ব্যবধানে বিজয়ী হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকগণ। পরাজিত হন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকগণ।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, নির্বাচনের প্রধান স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। নির্বাচনের সময় ঘোষণা হলেও জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়নি। সনাতন না পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে এখনো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় জুলাই সনদে স্বাক্ষরসহ আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নতুনভাবে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত সময় অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচন করা সম্ভব না হলে দেশ এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। তাই গণতন্ত্র, দেশ ও জাতির স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলকে যার যার অবস্থান থেকে ছাড় দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের গতিকে বেগবান করা উচিত। তবে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটারসহ সকল অংশীজনের সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

কিরণ আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে স্বৈরাচার বিরোধী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির অপসংস্কৃতি বন্ধ করা উচিত। পাল্টাপাল্টি দোষারোপের রাজনীতি বর্জন করে নেতাদের বক্তব্যে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে কোন বিভেদ তৈরি করা যাবে না।

তিনি বলেন, যদি আগামী নির্বাচন আয়োজন নিয়ে এই বিভেদ ও মতবিরোধ বাড়তে থাকে তাহলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বিভেদের সুযোগ নিয়ে পরাজিত শক্তি দেশে অরাজকতা তৈরি করতে পারে। তবে কেউ কেউ দেশে ১/১১ ও গৃহযুদ্ধের যে জুজুর ভয় দেখাচ্ছে তা অমূলক। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও ফ্যাসিবাদ ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দল ও শক্তি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে প্রতিযোগিতাটিতে বিচারক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক সাইদুর রহমান, সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন ও সাংবাদিক মো. হুমায়ুন কবীর।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত