রমজানে ঘটে মুসলিম সংস্কৃতির জাগরণ

রমজানে ইবাদতসহ ইতিবাচক কর্মকাণ্ড বাড়ে, কমে যায় অপরাধ প্রবণতা

ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৫, ১৭: ৫২

রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে আসে পবিত্র রমজান। সমাজে ঘটে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনটা হয় ইতিবাচক ধারায়। এই মাসে মসজিদে-মসজিদে বেড়ে যায় মুসল্লি। শিশুদের মধ্যেও বিরাজ করে অনাবিল আনন্দ। মসজিদগুলোয় বেড়ে যায় তাদের বিচরণ। প্রায় দেড় দশক দেশে এমন রমজান দেখেনি জনগণ। আওয়ামী জাহিলিয়াতের অবসান হওয়ায় এবার স্বস্তি ও অনাবিল সুখে রোজা পালন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

মুসল্লিরা বলছেন, চলতি বছর দেশের আইনশৃঙ্খা পরিস্থিতি স্বাভাবিক, নিত্যপণ্যের দামও অনেকটা নাগালের মধ্যে। বাধা দেওয়া হচ্ছে না ইফতার মাহলিসহ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আয়োজনে। পাঞ্জাবি-টুপি দেখলেই কাউকে করা হয় না হয়রানি। এই সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আবেগ ও ভালোবাসা দিয়ে আদায় করতে পারছেন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে তারাবি।

বিজ্ঞাপন

সমাজের সচেতন নাগরিকরা জানান, পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে সাহরি ও ইফতার করছেন। সাহরি খেয়ে বাবার হাত ধরে আজানের আগেই মসজিদে যাচ্ছে শিশুরা। ফুটে উঠছে বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতি। সেই সঙ্গে সমাজ থেকে কমেছে অপরাধ প্রবণতা। তবে রমজানের পরও এই ধারাটা ধরে রাখা জরুরি। একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে হলে বাড়াতে হবে পবিত্র কোরআনের চর্চা; মহান এই গ্রন্থের শিক্ষা ধারণ করে জীবন পরিচালনা করলেই প্রকৃত সুখ মিলবে।

ইফতার

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, রমজানে মুসলমানদের মাঝে ইবাদত করার প্রবণতা বেড়েছে। কমে গেছে অপরাধ প্রবণতা। ছোট-বড়, ধনী-গরিব সবার মাঝেইে এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। পাড়া-মহল্লার যে ছেলেগুলোকে মানুষ বখাটে ও উগ্র হিসেবে জানে তারাও রমজানে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করছে। ভোরে অলিগলি ঘুরে মধুর সুরে গান গেয়ে মুসল্লিদের সেহেরি খাওয়ার জন্য ডাকছে।

রমজান এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন থাকে সেই বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রমহানের সঙ্গে। তিনি আমার দেশকে বলেন, বছরের অন্য মাসের তুলনায় রমজানে অপরাধ কিছুটা কমে। ধর্মীয় কারণের পাশাপাশি মানুষের মুভমেন্ট তথা চলাফেরা যেমন সাহরি খাওয়ার জন্য মধ্যরাতে মানুষ ঘুম থেকে উঠে। হোটেল রেস্তোরাঁ গুলো খোলা থাকে। ইফতারির পর তারাবির নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেয়, সেখানেও মানুষের মুভমেন্ট থাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

অমুসলিম দেশে ইফতার

তিনি আরো বলেন, সব মিলিয়ে দিনে অফিস এবং মার্কেটে কেনাকাটা, রাতে তারাবি, সাহরিসহ সার্বিকভাবে বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে দিনে রাতে মানুষের চলাফেরা বেশি থাকাটাও অপরাধ কম হওয়ার অন্যতম কারণ। তবে রমজান শেষ হলেই ইবাদতের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যায়, সেই সঙ্গে বেড়ে যায় অপরাধ প্রবণতা।

রমজানের পর আবারো অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘রমজান আমাদের মাঝে আসে যেন আমরা পরিপূর্ণভাবে তাকওয়া অর্জন করতে পারি সেজন্য। রোজা আসলে আমরা অনেক বেশি আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ি। কিন্তু মাসটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সেই আবেগ শেষ হয়ে যায়। আমরা এর প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারলে ঈদের পরও সমাজে সুশৃঙ্খল পরিস্থিত বজায় থাকবে। একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে চাইলে প্রয়োজন রমজানের প্রকৃত শিক্ষা তাকওয়া অর্জন করা।

রমজানে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, হাদিসে স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে যে, রমজানে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। আর এ মাসে বিশেষভাবে রহমত বর্ষিত হয়। যার কারণে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো পরিলক্ষিত হয়। ধর্মীয় অনুভুতি থেকেই মানুষ ভালো কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, রমজান শেষে যখন শয়তান শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পায় এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যখন অন্যায় কাজের জন্য অনুকূল হয় তখন সেদিকে অধিকাংশ মানুষ ঝুঁকে যায়। খুব কম সংখ্যক মানুষ তাদের পূর্বাবস্থানে থাকতে পারে।

বিষয়:

রমজান
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত