আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে প্রণীত আচরণবিধির কয়েকটি দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী প্রতিনিধি শিশির মনির। বিশেষ করে পোস্টার ব্যবহার, আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি আরোপের এখতিয়ার এবং নির্বাচনি অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্ধারণ না থাকায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব বিষয় তুলে ধরেন। তার বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির অসংগতিগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
পোস্টার ব্যবহারে ‘দ্বৈত নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন
আচরণবিধির ৭-এর ‘ক’ উপধারায় ‘কোনো প্রকার পোস্টার ব্যবহার করা যাইবে না’ উল্লেখ থাকার পরও ৭-এর ‘ঘ’ উপধারায় পোস্টারসহ অন্যান্য প্রচারসামগ্রী ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করায় ইসির দ্বৈত নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিশির মনির।
তিনি বলেন, আগে বলছেন পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। আবার পোস্টার সরাতে পারবে না, এই কথা বলছেন কেন?
নির্বাচনি ইশতেহার পাঠ বাধ্যতামূলক করার দাবি
প্রতীক বরাদ্দের পর পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রেখে নির্বাচনি প্রচারণার উদ্দেশে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক একই মঞ্চে সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে ইশতেহার পাঠ ও আচরণবিধি প্রতিপালনের ঘোষণা প্রদানের ব্যবস্থা ‘করতে পারবেন’ –এই বিধানকে ঐচ্ছিক না রেখে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান শিশির মনির।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় আপনাদের এখানে ইনডিসিশনে আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব মিন হচ্ছে ইলেকশন কমিশন ইন ইনডিসিশন। আপনারা একদিকে বলছেন করতে পারবেন... আমার বিবেচনায় সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য করা উচিত। এই আলোচনা নতুন প্রজন্মের কাছে একটি উদ্ভাবনী আইডিয়া দেবে এবং দেশের জন্য একটি গঠনমূলক সংস্কৃতি তৈরি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সময়সীমা আবশ্যক
নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ (আচরণবিধির ২৬) দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সময়সীমা নির্ধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই আইনজীবী।
শিশির মনির বলেন, আমি এখন গিয়ে দেখতে পেলাম আমার ইলেকশন হচ্ছে এক জায়গায় আমি আপনাকে কমপ্লেইন দিলাম। আপনাদের বাধ্যতা থাকা উচিত, আপনাদের সামনে তো কোনো স্টিক নাই। আমি কমপ্লেইন দিয়ে বসে থাকব, আপনারা ডিসপোজ করবেন না, আমার আর কিছু করার থাকবে না। সুতরাং ইউ টাইম লিমিট... এত ঘণ্টার মধ্যে, এত সময়ের ভেতরে ডিসপোজ করবেন। তিনি শত শত অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করা জরুরি বলেও মত দেন।
শাস্তি আরোপের এখতিয়ার নিয়ে ধোঁয়াশা
আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান থাকলেও কে এই শাস্তি আরোপ করবেন (হু উইল ইম্পোজ দ্য পানিশমেন্ট), সে বিষয়ে আচরণবিধিতে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় শিশির মনির ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আপনার এই আচরণবিধিতে তো নাই। বলতে হতো কোর্টটা কে নির্ধারণ করবে? আপনার এই বিধান পড়ে মনে হয় না যে, আপনি যে শাস্তিটা আরোপ করতে চাচ্ছেন কে শাস্তি আরোপ করবে এই মর্মে আচরণবিধিতে উল্লেখ থাকা উচিত ছিল। এ ছাড়া কোনো প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির অপরাধের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে শাস্তির আওতায় আনার বিধানেও তিনি অসংগতি তুলে ধরেন।
এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহসহ ১২ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপ করে ইসি।
পরে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি-(বিআরপি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) এর সঙ্গে মতবিনিময় করবে।


চমক আসছে জামায়াতের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায়