জাতীয় গড়ের তুলনায় আদিবাসীদের দারিদ্র্য অনেক বেশি হলেও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তাদের পর্যাপ্ত অগ্রাধিকার নেই বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। সংস্থাটির গবেষণা বলছে, আইন ও নীতিমালায় আদিবাসীবান্ধব নির্দেশনার অভাব, আবেদন ও প্রমাণপত্রের জটিলতা, নীতি-প্রণয়ন ও বাজেট প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের অনুপস্থিতি, তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা এবং অভিযোগ ব্যবস্থায় অনীহা- সব মিলিয়ে তাদের অন্তর্ভুক্তি কম। সমতলের আদিবাসীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার প্রচারণা সীমিত, জনপ্রতিনিধিত্ব দুর্বল এবং শিক্ষা-প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ঘাটতি বড় বাধা। অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলে আলাদা কর্মসূচির অভাব, ভৌগোলিক দূরত্ব, ভাষাগত সমস্যা, তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সক্ষমতার ঘাটতি অন্তর্ভুক্তিকে আরও কমিয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেকোনো অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত হলো- বৈষম্য কমিয়ে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা। গবেষণায় যে তথ্য এসেছে, তা দেখায় সেখানে ন্যায্যতা নিশ্চিত হয়নি। ফলে অস্থিতিশীলতা ও অসন্তোষ থাকা স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন, দুর্নীতি ও অনিয়ম— সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও এ ধরনের সমস্যা রয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। আদিবাসীদের ক্ষেত্রে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা প্রান্তিকের মধ্যেও প্রান্তিক।
এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি বাংলাদেশের কোনো সরকারের হাতে না, পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল চাবি কাঠি; আমি মনে করি আমাদের সেনাবাহিনীর হাতে। তারাই পারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।
গবেষণায় দেখা যায়, পাঁচটি কর্মসূচির মধ্যে বয়স্কভাতায় আবেদনকারী ৫২.১ শতাংশ হলেও নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ২১.২ শতাংশ। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতায় আবেদন ৩৩.৩ শতাংশ, নির্বাচিত ১২ শতাংশ। প্রতিবন্ধী ভাতা/উপবৃত্তিতে আবেদন ৫৭.৫ শতাংশ এবং নির্বাচিত ৩১.৬ শতাংশ। মা–শিশু সহায়তা ভাতায় আবেদন ৩০.৫ শতাংশ ও নির্বাচিত ২১.৫ শতাংশ। আর ভিডব্লিউবি কার্ডে আবেদন ২৫.১ শতাংশ এবং নির্বাচিত মাত্র ১২.৪ শতাংশ।
আরও জানা যায়, দেশের পাঁচটি প্রধান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যোগ্য আদিবাসীদের মধ্যে আবেদনকারী ও নির্বাচিতদের গড় হার মাত্র ১৯.৭ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন যোগ্য আদিবাসীর মধ্যে মাত্র একজন তালিকাভুক্ত হয়েছেন। দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী হিসেবে আদিবাসীদের অগ্রাধিকার না দেওয়া—সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্তির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষণা দলের প্রধান রাজিয়া সুলতানা। সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক ও গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

