পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় জেলবন্দীদের মুক্তি ও চাকরিচ্যুত সকল বিডিআর সদস্যের সকল প্রকার ক্ষতিপূরণও সরকারি চাকরিতে পুনর্বহালসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবার।
মঙ্গলবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের আয়োজনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বিডিআর ও তাদের স্বজনেরা ‘জাস্টিস ফর বিডিআর’ কর্মসূচিতে এই দাবি জানান। আগে তাদের ছয় দফা দাবি ছিল।
বক্তব্য প্রদানকালে বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিডিআরদের আট দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। এসময় কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের কোনো চিহ্ন না দেখলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এসময় তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার।
তিনি বলেন, দাবির মুখে উপদেষ্টারা বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে। কমিশনের দুমাসের বেশি সময় পার হয়েছে, তবে মানুষ সেই কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানে না। তিনমাসের মধ্যে যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে সেখানে যদি ন্যায়বিচার ফুটে না উঠে তবে আন্দোলন অন্যদিকে মোড় নিবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা তো দূরের কথা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বা আইন উপদেষ্টার থেকে কোনো ন্যূনতম কোনো বার্তা পাইনি। এমনকি গঠিত কমিশনও আমাদের ডাকেনি। গতকাল মামলার শুনানি হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম সেখানে ন্যায়বিচারের প্রতিফলন থাকবে ও কিছু বিডিআর সদস্য মুক্তি পাবে- কিন্তু সেটি হয়নি।
বর্তমানে এই দাবির সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংযুক্ত হচ্ছে, যদি সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাবিগুলো মেনে না নেয় তাহলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে এবং উপদেষ্টাদের গদিতে টান পড়ে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এসময় বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপদেষ্টাদের উপরে কোনো চাপ আছে কিনা সেটি স্পষ্ট করার কথা বলে মাহিন আরো বলেন, তাদের পরিষ্কার করতে হবে তাদের ওপর বাইরের কোনো চাপ আছে কিনা, যার কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি স্বাধীন সার্বভৌম বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো বিচার প্রক্রিয়া হাসিনা আমলে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
তাদের ৮ দফা দাবিগুলো হলো
১) পিলখানার ভেতরে ও বাহিরে ১৮টি বিশেষ আদালত গঠন করে তৎকালীন প্রশিক্ষণার্থী ৭৬ তম ব্যাচসহ চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও তাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।
২) ইতোমধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ও সাজা শেষ হওয়া জেলবন্দী বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়া এবং বিস্ফোরক মামলা বাতিল করা।
৩) গঠিত কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত "ব্যতীত" শব্দ এবং কার্যপরিধি ২ এর (৬) নং ধারা বাদ দেওয়া। একই সাথে তদন্ত কমিশনের প্রধানকে আপিল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদা দেওয়া। স্বাধীন তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত সর্বপ্রকার নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি পাশাপাশি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ উদ্ঘাটন, মূল ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া।
৪) পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ হওয়া ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ১০ জন বিডিআর সদস্যসহ সর্বমোট ৭৪ জনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করা। একইসাথে জেলের ভেতর মারা যাওয়া প্রত্যেক বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উন্মোচন করা। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে দায়ী সকলকে বিচারের আওতায় আনা।
৫) পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন করা।
৬) শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের লাশ পুনঃতদন্তের মাধ্যমে সঠিকভাবে শনাক্ত করার ব্যবস্থা করা।
৭) স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী ‘বিডিআর’ নাম ফিরিয়ে আনা।
৮) পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে জাতীয় দিবস ঘোষণা ও শহীদ পরিবারের সর্বপ্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এমএস

