বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ধৈর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। তাঁর মৃত্যুতে জাতি এক মহান অভিভাবককে হারিয়েছে। এই গভীর শোকের মুহুর্তে আমি তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক সহকর্মী এবং অগণিত কর্মী-সমর্থকের প্রতি সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান আল্লাহর কাছে আমার প্রার্থনা—তিনি যেন আমাদের সবাইকে এই গভীর শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি দান করেন।
ড. ইউনূস বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক পরম মহিমান্বিত ব্যক্তিত্ব। গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর অসামান্য ভূমিকা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব বারবার জাতিকে গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে এবং মুক্তির প্রেরণা যুগিয়েছে। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর সমুজ্জ্বল অবদান জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে তাঁর অবিচল ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমন একজন মহান, দূরদর্শী ও নিখাদ দেশপ্রেমিক নেত্রীর শূন্যতা পূরণ হবার নয়।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং আগামীকাল তাঁর নামাজে জানাযার দিনে একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছি। নামাজে জানাযাসহ সব ধরনের শোক পালনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমি সবার প্রতি বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গত ২৩ নভেম্বর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর তার ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিলে কেবিন থেকে ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে’ স্থানান্তর করা হয়।
৮০ বছর বয়সি বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে রয়েছে লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস ও ইনফেকশনজনিত সমস্যা।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরামের শ্রীপুর গ্রামে। মা তৈয়বা বেগমের জন্ম পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ীতে। তাদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

