জাতীয় নির্বাচনের আগে সব দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি

গাজী শাহনেওয়াজ
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ১৭

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা করবে কমিশন। দলগুলোর মতামত নেবে। কমিশন কী চায় সেগুলোও তাদের জানাবে।

সবার মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আগামী জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে সংলাপটি হবে। আগামী নির্বাচনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য তৈরি পথনকশায় সংলাপের ইস্যুটি রাখা হয়েছে। তবে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিশ্চিহ্ন আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত এ বছরের ডিসেম্বর ভিত্তি ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে কমিশন। এ লক্ষে আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করার জন্য নির্বাচনের পথনকশা তৈরি করেছে কমিশন। ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হয় সেনা-সমর্থিত এক-এগারো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গঠিত ড. শামসুল হুদা কমিশনের আমলে। এ সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে-১৯৭২ (আরপিও) ব্যাপক সংস্কার আনা হয়। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির মধ্যকার সংলাপে পাওয়া মতামত ও প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করে আইনে রূপ দেওয়া হয়।

নবম সংসদের পর আরও তিনটি (দশম, একাদশ ও দ্বাদশ) নির্বাচন হলেও সংলাপের ফলাফল ছিল নেতিবাচক। একতরফা নির্বাচন আয়োজনের জন্য রকিবউদ্দীন আহমেদ কমিশনকে ভর্ৎসনা করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। তারা পরবর্তী দুটি কমিশনের সংলাপ বর্জন করে।

বিএনপি আসবে এ কারণে সংলাপের পথেই হাঁটেনি কে এম নুরুল হুদার রাতের ভোটের কমিশন। সর্বশেষ কাজী হাবিবুল আউয়ালের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপ আহ্বান করলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশ নেয়নি। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি, সাবেক কমিশন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অনেকেই অংশ নিলেও সংলাপের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না পদত্যাগ করা হাবিবুল আউয়াল কমিশনও।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দলের অনেক নেতা কারাগারে। অনেকে আত্মগোপনে। নিষিদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগও। এই প্রেক্ষাপটে ইসি পুনর্গঠিত হয়। সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন এয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ চলছে। দলের নিবন্ধন, মালামাল কেনা ও সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাসের কাজটি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দেওয়া চূড়ান্ত সুপারিশ সরকার থেকে না আসায় অপেক্ষায় রয়েছে।

এরই মধ্যে একটি এয়োদশ সংসদ নির্বাচনের পথনকশা প্রণয়ন করেছে ইসি। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রাখা হয়েছে। সংলাপে দলগুলোর দেওয়া মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে অক্টোবরেই শেষ দিকে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করবে কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আমার দেশকে বলেন, সবাই চাইছে একটা ভালো নির্বাচন। আমরাও চাইছি ভালো নির্বাচন। তাই খারাপ নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনের একটা চেকলিস্ট তৈরি করেছি। কয়েকটি কাজ একত্রে করা হবে। নির্বাচনী পথনকশায় ইনোভেটিভ কিছু রেখেছি। যার মধ্যে একটি রাজনৈতিক সংলাপ। যখন নির্বাচনের পথনকশা অনুযায়ী শেষ পর্যায়ে আসব তখন নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসব। সেটা অক্টোবরের আগে। তিনি বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে আমরা কী করেছি, কী করতে চাইছি এগুলো নিয়ে আলোচনা করব। রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু চাওয়া থাকতে পারে, সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে পৌঁছানো হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সংসদ নির্বাচনের দুটি সময়সীমার কথা জানিয়েছেন। আমরা প্রথমটি অর্থাৎ ডিসেম্বরকে ভিত্তি ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত