কিবরিয়া হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সালমান, ধামাচাপা দেন হাসিনা

এম এ নোমান
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৪৭
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫, ২২: ৫২

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করিয়েছেন সালমান এফ রহমান। তিনিই বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড। হবিগঞ্জের তৎকালীন দুই এমপির সহযোগিতায় কিলিং গ্রুপ ভাড়া করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। বিষয়টি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান ড. রেজা কিবরিয়া। পরে বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করে তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাবও দেন শেখ হাসিনা।

শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া সম্প্রতি আমার দেশকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসভবনে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে ড. রেজা আইএমএফের উচ্চ বেতনের চাকরি ও বিদেশের বিলাসি জীবন ছেড়ে দেশে আসার কারণ, বাবার হত্যার বিচারের দাবিতে তার পরিবারের দীর্ঘ সংগ্রাম, শেখ হাসিনার সঙ্গে বিরোধ, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, শেখ হাসিনার খুনি হয়ে ওঠা ও শান্তিময় বাংলাদেশ গঠনে তার বিচারের অপরিহার্যতা তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বর্তমানে চলা বিচার কাজ একটি ভুয়া তদন্তের ভিত্তিতে হচ্ছে বলে সাক্ষাৎকারে দাবি করেন ড. রেজা কিবরিয়। সেই সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত কমিটি হলে সেখানে কিবরিয়া পরিবার এ সংক্রান্ত নথি ও তথ্যপ্রমাণ হাজির করবে বলেও জানানো হয়।

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ছিলেন একজন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ কিংবা সালমান এফ রহমান কেন তার মতো একজন বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে হত্যা করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. রেজা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেনÑ গত সাড়ে ১৫ বছরে খুনি হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের সময়ে সালমান এফ রহমান ও তার সহযোগীরা কীভাবে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এতেও শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ হাত ছিল। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমার বাবা (শাহ এ এম এস কিবরিয়া) অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময়ও সালমান এফ রহমান দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু দেশের প্রতি বাবার দায়বদ্ধতা ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে সালমান এফ রহমান ব্যর্থ হন। মূলত ওই সময় থেকেই বাবাকে হত্যার জন্য সালমান ও তার সহযোগীরা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক কারণে চেষ্টা করে আসছিলেন।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে শাহ এ এম এস কিবরিয়ার অনন্য অবদানে সালমান এফ রহমানসহ আওয়ামী লীগের একটি দুষ্টচক্র ঈর্ষান্বিত ছিল উল্লেখ করে ড. রেজা বলেন, ‘কৃষকদের বিনা জামানতে ঋণ দেওয়ার ফলে দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠেছিল। কৃষকদের দেওয়া ঋণের প্রায় পুরোটাই আদায় হয়েছে। অথচ সালমান এফ রহমান ও তার সহযোগীরা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে ফেলেছেন। এ কারণেই তারা বাবার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিল।’

শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার বিষয়ে ড. রেজা বলেন, শেখ হাসিনা আসলে একজন খুনি। অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে তিনি অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছেন। তার হাতে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ লেগে আছে। কাজেই একজন খুনি কখনোই আরেকটি খুনের সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বিচার করতে পারবে না।

বিচারের দাবিতে এক সময় আপনার মা বিরতিহীন সংগ্রাম করেছেন। এখন আপনিও এ মর্মান্তিক হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে কখনো বিচারের দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা জানি যে তদন্তের ভিত্তিতে আমার বাবার হত্যার বিচার চলছে, সেটা ভুয়া। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে এমন কিছু ব্যক্তিকে জড়ানো হয়েছে, যেটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি। আমরা চেয়েছিলাম, একটি স্বাধীন, স্বচ্ছ ও প্রভাবমুক্ত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। এ কথাটি আমি আওয়ামী লীগের পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বলতে গিয়েছি। তিনি (শেখ হাসিনা) আমাকে এ বিষয়টি নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি না করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে বলেন। আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিরে আসি। এরপরও একাধিকবার তিনি আমার কাছে লোক পাঠিয়ে একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি কোনোভাবেই আমার বাবার রক্তের ওপর দিয়ে মন্ত্রিত্ব নিতে পারি নাÑ এ বিষয়টি তাদের জানিয়ে দিয়েছি।’

গত ১৫-১৬ বছরে শেখ হাসিনা সচেতনভাবে সালমান এফ রহমানসহ প্রকৃত খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন উল্লেখ করে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা বেশ ভালোভাবেই জানতেন আমার বাবার খুনি কারা; কারা এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটাবার জন্য মদত দিয়েছেন ও অর্থ দিয়েছেন। এ কারণেই তিনি তাদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। কারণ এদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।’

সালমান এফ রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে জানিয়ে ড. রেজা বলেন, সালমান এফ রহমান অর্থের জোগান দিয়েছেন। কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন ওই এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) আবু জাহির ও বানিয়াচংয়ের এমপি মজিদ খান। হাসিনা গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে এসব খুনিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন।’

একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে ড. রেজা বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। দেশ ক্রমেই স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। একটি স্বাধীন ও প্রভাবমুক্ত তদন্ত কমিটি গঠন হলে আশা করছি প্রকৃত খুনিদের মুখোশ উন্মোচন হবে। আমার কাছে থাকা তথ্য-প্রমাণ ওই কমিটির কাছে পেশ করব।’

বর্তমান সরকারের কাছে দেশবাসীর অনেক প্রত্যাশা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ভয়াবহ দুঃশাসন আর দুর্নীতির কারণে দেশের নাভিশ্বাস অবস্থা ছিল। পতন ও পলায়নের আগে তিনি হাজারও নিরস্ত্র মানুষকে খুন করেছেন। এখন তার বিচারই অগ্রাধিকার বলে মনে করছি। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এ প্রত্যাশা থেকেই মানুষ অনেক কিছু দাবি জানিয়ে আসছে, যা গত ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে করা সম্ভব হয়নি।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, শেখ হাসিনার পতন কিংবা আওয়ামী লীগের পতন ঘটানো বিএনপি কিংবা অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে সম্ভব ছিল না, যদি দেশের সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা সম্মিলিতভাবে এ গণঅভ্যুত্থানে যুক্ত না হতেন। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে শেখ হাসিনার অতিমাত্রার দাম্ভিকতা, খুনি মানসিকতা ও দানবীয় মনোবৃত্তি। তার হাতে হাজারো মানুষের রক্ত লেগে আছে। এ দেশে আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতি করবে, সেটা দেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না।

জৈন্তাপুরে ‘বিজিবির’ গুলিতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ

নির্বাচনের আগে উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান জরুরি

দুদিনব্যাপী মেহেদী উৎসব ইবি ‘ছাত্রী সংস্থা’র প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু

বার্ষিক পরীক্ষার আগেই স্কুল-কলেজ ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের দাবি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদকে ধুয়ে দিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত