নিম্নচাপ সরে গেলেও ঝরছে বৃষ্টি, উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫৬
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২: ৫৯

নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে তিন ফুটের অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অনেক এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে জলোচ্ছ্বাসে বরিশালের উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ ডুবে গেছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপ ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বিকাল ৩ টা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অতিক্রম করে বর্তমানে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় (২২.২ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

বিজ্ঞাপন

এটি আরো পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল থেকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সাথে উপকূলীয় এলাকায় ৩ ফুটের অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আমার দেশকে বলেন, অমাবস্যা ও নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ১ থেকে ৩ ফুটের অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, যতদূর জেনেছি সন্ধ্যা নাগাদ স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসের কারণে বরিশালের উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাধ ডুবে গেছে।

নিম্নচাপটি বিকাল ৩টার দিকে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করলেও এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। সংস্থাটি বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে জানিয়েছে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায়, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৫১টি সেন্টার এলাকায় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড ও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিম্নচাপের দেশের সব এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ কক্সবাজারে ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।

এর আগে সকালে সংস্থাটি বিশেষ বুলেটিনে জানায়, শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে।

অতি ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়াও অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি কিছুটা সরে গিয়ে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিমবঙ্গ- উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে।

এটি শুক্রবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল এবং পরে বিকাল ৩টা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অতিক্রম করে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সংস্থাটি জুলাই মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে ১-৩টি লঘুচাপের আভাস দিয়ে বলেছিল, এর মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের আশপাশ এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এদিন ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত