গণভোটের জন্য হবে পৃথক অধ্যাদেশ

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৫৫

সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশ তৈরির সুপারিশ করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি আদেশ হলেও তা হবে আইনের আদলে। ওই আদেশে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারির বিষয় যুক্ত করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এর ধারা-উপধারায় কোন কোন বিষয় যুক্ত করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি কমিশন।

সনদ বাস্তবায়নে একটি আদেশের খসড়া নিয়ে বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনের ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ৩টায় শুরু হওয়া বৈঠকে বাস্তবায়ন আদেশের ড্রাফট তৈরি করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আবারও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। এর আগে সকালে তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবে।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে উপস্থিত এক বিশেষজ্ঞ বলেন, আদেশটা কী রকম হবে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কারণ, সেখানে অনেক খুঁটিনাটি আছে। কী কী থাকবে, সেগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কমিশন বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চায় বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গতকালের আলোচনায় এটি মোটামুটি ঠিক হয়েছে, সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মূল ভিত্তি হবে গণঅভ্যুত্থান। প্রাথমিক খসড়া অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে প্রথমে একটি আদেশ জারি করা হবে। ওই আদেশের অধীন অধ্যাদেশের ভিত্তিতে হবে গণভোট।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে গিয়ে নতুন ইস্যু সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভিত্তি কী হবে তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে।

বৈঠকে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়া হবে। সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হবে। সংসদ সদস্যরা একই সঙ্গে সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু সংসদ নির্বাচন হবে কীসের ভিত্তিতেÑসে বিষয়ে জুলাই সনদে কিছু বলা হয়নি। আমরা কীসের ভিত্তিতে নির্বাচন করব। আদেশে বিষয়টি যুক্ত করার প্রয়োজন পড়বে কি না। কারণ, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতোমধ্যে সে সময়সীমা পার হয়ে গেছে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো সংবিধানের এই বিধান অনুসরণ করে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কোন বিধানমতে নির্বাচন হবে বা নির্বাচনের বৈধতা কী হবে, সে বিষয়ে সুপারিশ করার এখতিয়ার ঐকমত্য কমিশনের আছে কি না। এসব নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া সংস্কার পরিষদের কাজ কী হবে সেটাও উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। এটি নিয়ে প্রশ্ন এলেও আলোচনা এগোয়নি।

গণভোটের প্রশ্ন কী হবে, সেটা নিয়েও গতকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। এক বিশেষজ্ঞ বলেন, গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে আরো আলাপ-আলোচনা করতে হবে। অন্যদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশে সনদে থাকা আপত্তিগুলোর (নোট অব ডিসেন্ট) কোন প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে, সেটিও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।

সূত্রে জানা গেছে, আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা তথা সংবিধান সংস্কার পরিষদের ৯ মাস অর্থাৎ ২৭০ দিনের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের পর গঠিত সংসদকে এ সময়সীমার মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এরপর সংসদ তার স্বাভাবিক আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে ফিরে যাবে। কমিশনের মতে, তারা এমন একটি প্রস্তাব দিতে চায়, যাতে নির্বাচিত সরকার এ দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে না পারে।

গতকাল কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতিসম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সভায় সনদ বাস্তবায়নের বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরামর্শ নিয়েও সুদীর্ঘ আলোচনা হয়। এসব বিষয়ে কমিশন বৃহস্পতিবার (আজ) সকালে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে দুপুর ২টায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবে।

জাতীয় সংসদ ভবনের কমিশন কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন এবং ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক এতে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেনÑসহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন এবং ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। এছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষর করে বিএনপি-জামায়াতসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। এনসিপি ও চারটি বাম দল এ সনদে সই করেনি। সনদের আইনি ভিত্তি না দেওয়া এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না হওয়ায় এনসিপি এতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়। বিষয়টির সুরাহা হলে তারা সই করবে বলে জানিয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরো ১৫ দিন বৃদ্ধি করে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নির্ধারিত হওয়ায় তারা এ সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছে।

এদিকে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্ট হলেই তারা সনদে সই করবেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত