স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর

কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধের সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ০৫

কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের অধিকাংশই প্রায় বন্ধ। এগুলো বন্ধ করে সব জনবল, সেবা, সরঞ্জাম এবং সরবরাহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কমিশনের যুক্তি হচ্ছে, এ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সরকারি ব্যয় না বাড়িয়েই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সচল করা যাবে। তবে প্রয়োজনীয় জনবল সরকারকে দিতে হবে।

গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ড. তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের পরিচালক ড. মাহফুজ কবির, নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাসুদা খাতুন শেফালী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তারিকুল ইসলাম, ইলিরা দেওয়ান, অধ্যাপক ডা. কাজী মারুফুল ইসলাম, এ কে তরিকুল আলম, হেলেনা পারভীন ও মোজবাহ উদ্দিন খান। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন তার প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দলীয় লোকজনকে নিয়োগ, স্বাস্থ্যকর্মীর অফিস না করাসহ নানা অনিয়মের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ওই বন্ধ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিল।

প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আসুন দেরি না করি; যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ সংস্কারগুলো কাগজ থেকে অনুশীলনে যেতে হবে।

প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্বচ্ছতা এবং জনসাধারণের সম্পৃক্ততার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি জনসমক্ষে প্রকাশ করব যাতে নাগরিক, বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডাররা প্রস্তাবিত সংস্কারগুলি তাদের হাতের নাগালে পেতে পারে এবং বুঝতে পারে। প্রকৃতপক্ষে আমি বিশ্বাস করি, এই সংস্কারগুলো অল্প বয়স থেকেই নাগরিক সচেতনতা তৈরির জন্য স্কুলগুলোতে পাঠ্য হওয়া উচিত।

প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, মৌলিক সংস্কার না করে নির্বাচন করলে কোনো লাভ হবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক, এটা আমরাও চাই। কিন্তু নির্বাচনের প্রশ্ন এলে আগে সংস্কার না করে কোনো নির্বাচন করলে কোনো লাভ হবে না। সেজন্য আমরা সংস্কারকে প্রাধান্য দিয়েছি। সংস্কার করার পর নির্বাচন করলে কোনো অসুবিধা নেই।

এদিকে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন তার সুপারিশে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে একটি সমন্বিত আইনে একীভূত করার সুপারিশ করেছে। কমিশন মনে করে একীভূত আইন হলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব হবে। এতে নির্বাচনের জনবল কম লাগবে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ২২৫ দিনের পরিবর্তে ৪৫ দিনে নেমে আসবে। কমিশনের সুপারিশে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদে ওয়ার্ড সংখ্যা সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ৩৯-এ উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়।

কমিশন আগামী অর্থবছরে স্থানীয় সরকার পরিষদের বাজেট দ্বিগুণ করার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া সামাজিকনিরাপত্তা কর্মসূচির সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক কর্তৃত্ব স্থানীয় সরকার পরিষদগুলোর ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করে। পার্বত্য অঞ্চলের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভাকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়। দ্রুত পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়।

কমিশন তার সুপারিশে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদকে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা তত্ত্বাবধানের অধিকারপ্রাপ্ত হতে পারে। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রাণসঞ্চার হবে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন সিনিয়র সহকারী জজ পদায়নের মাধ্যমে এডিআর আদালত স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। এতে মামলার জট কমবে।

তোফায়েল বলেন, এখন ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ ও এ ধরনের স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের হাতে অধিকাংশ ক্ষমতা থাকে। সদস্যদের হাতে তেমন ক্ষমতা থাকে না। সেজন্য নির্বাচন থেকে চেয়ারম্যান পথ বাদ দিতে বলেছি।

স্থানীয় সরকারের অর্থায়ন পদ্ধতিতে সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, নিজস্ব সম্পদ বৃদ্ধি ও ব্যয়ের খাত বাড়ানোর পরিকল্পনা করতে হবে। অর্থায়নের একটা বড় অংশ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার এখন মোট জাতীয় বাজেটের দশমিক ৫ শতাংশের কম ব্যয় করে স্থানীয় সরকারের পেছনে, এটা বাড়াতে হবে।

এ ছাড়া স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বলেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য দ্বিস্তর বিশিষ্ট মহানগর সরকার (সিটি গভর্নমেন্ট) তৈরি করতে বলা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত