অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের বিচার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ৪১

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে অগ্নিকাণ্ডে দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয় চুড়িহাট্টা। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে অঙ্গার হন ৭১ জন মানুষ । আহত হন শতাধিক। ঘটনায় পরদিন নিহত জুম্মনের ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তখন দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও ছয় বছরেও শেষ হয়নি বিচার। বিচার বিলম্বিত হওয়ায় জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতা অভাবকে দায়ী করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। গত দুই বছরে চার জনের সাক্ষ্য দেয়াকে দুঃখজনক বললেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি।

বিজ্ঞাপন

বছর ঘুরে চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির দিনটি এলে সবাই নড়ে চড়ে বসেন। তবে স্বজনহারা পরিবারগুলো ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশায় বুক বেঁধে আছেন তারা। এ ঘটনায় করা মামলার বাদী আসিফ আহমেদ বলেন, ন্যায় বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। তবে দৃশ্যমান কিছুই দেখছি না। অগ্নিকাণ্ডে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বুয়েটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওয়াহেদ ম্যানশন চালু না করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই বিল্ডিং দাঁড়িয়ে গেছে। সাবেক মেয়র তাপস নিজে অনুমোদন দিয়ে ওই ভবন চালু করেছেন। অথচ ছয় বছরেও ন্যায়বিচার তিনি দিতে পারেননি।

আসিফ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা সবসময় মজলুম। বলার কিছু নেই। বাদী হয়ে কোনো লাভবান হইনি। উল্টো হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছি। অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩০ কোটি টাকা দিয়েছিল। আজ ক্ষতিপূরণের একটি টাকাও পায়নি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতি অনুরোধ, মামলার বিচারটা যেন সুষ্ঠু হয়। কিছুই তো হলো না। না পেলাম বাবাকে, না পেলাম বিচার। এখন যেন ন্যায় বিচারটা পাই।

সেদিন অগ্নিকাণ্ডে নিহত ওয়াশি উদ্দিনের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাউকে কোনো অনুদান দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা হওয়া সেই টাকা কোথায় গেল আমরা জানি না।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আলোচিত এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক মামলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এ মামলার বিচার নিয়ে তাদের কোনো মনোযোগ ছিল না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা আন্তরিক। সাক্ষীদের দ্রুত আদালতে হাজিরের মাধ্যমে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে।

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক আসামিদের নির্দোষ দাবি করে তারিয়ক পরে অথচ রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজি করতে পারেনা। এ মামলার দীর্ঘসূত্রতার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ দায়ী। বিচার বিলম্ববিত হওয়ায় আসামিরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

চুড়িহাট্টার ট্র্যাজেডির দায়ের করা মামলা তদন্ত শেষে তিন বছর পর ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল কাইউম। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার কাজ শুরু করে আদালত। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শিহাবুল ইসলামের আদালতে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিন আসিফ উদ্দিন সিয়াম নামে এক ব্যক্তি সাক্ষ্য দেন। আগামি ১৩ এপ্রিল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে। এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষে ১৬৭ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ৭১ জন নিহত হন। দগ্ধ ও আহত হন অনেকে। এই ঘটনায় চকবাজার মডেল থানায় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে সোহেল ওরফে শহীদ ও হাসানসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আসিফ।

মামলার আসামিরা হলেন, ভবনের মালিক দুই ছেলে হাসান ওরফে হাসান সুলতান ও সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল ইকবাল, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতিক, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ। আসামিরা সবাই জামিনে রয়েছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত