ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী
অনেক কষ্টে পাওয়া বাংলাদেশ। অনেক দামে কেনা। কিন্তু বিকিয়ে গেল কি বিনামূল্যে? এ প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে এ জন্য যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হাজারো মাইলাই ম্যাসাকার পেরিয়ে লাখ শহীদের ত্যাগ এবং ২০২৪ সালের নজিরবিহীন ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ও বিশাল কোরবানির পরও আমরা যেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছি না।
বাধার পারাবার যেন আমাদের সম্মুখে। অনেক সূর্যের আশা নিয়ে আমরা এক হাজার বছর পথ হেঁটে, তারপর আরও চব্বিশ বছর পেরিয়ে এবং সবশেষে আরও তেপ্পান্ন বছরের ঊষর জীবন পেরিয়ে বরফগলা নদী পার হয়ে শেষ বিকালে এক নতুন ভোরের প্রত্যাশায় ছিলাম। কিন্তু কোথায় সেই ভোর? কোথায় সেই রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতেই হবে।
ইতিহাস পাঠে দেখা যায়, ইতালি ও জার্মানির দুই ক্ল্যাসিক্যাল ফ্যাসিবাদ শেষা পর্যন্ত ধ্বংস, শাস্তিপ্রাপ্ত এবং নিশ্চিহ্ন হয়েছে। একইভাবে পর্তুগালে ১৯৩২-৬৮ এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত কোনোভাবে টিকে থাকা অ্যান্টোনিও ডি অলিভেরিয়া সালাজারের ফ্যাসিবাদী শাসনকে জনসহায়তায় উৎখাত করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। যে সালাজার ইতালির মুসোলিনির ফ্যান ছিল, তাকে প্রচণ্ড ঘৃণাভরে উৎখাত করা হয়েছে এবং তার সমর্থকরাও উচ্ছেদপ্রাপ্ত হয়েছে আর তার সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে।
জুয়ান কার্লোসকে সীমিত সাংবিধানিক মোনার্কি দিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। রাশিয়ার জার নিকোলাস ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উৎখাতপ্রাপ্ত হয়ে ১৯১৮ সালে এক্সিকিউশন বা হত্যার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। তার মোনার্কি পার্টি বাতিল হয়েছে এবং রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলশেভিকদের মাধ্যমে। এর পরপর মোনার্কি পার্টি জুলিয়াস পারটা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। সে বিদেশে মরেছে এবং তার পার্টি নিষিদ্ধ হয়েছে।
কেরেনস্কির মেনশেভিক পার্টি তাকে উৎখাতের পর নিষিদ্ধ হয়েছে বলশেভিক পার্টির সরকার দ্বারা। ইরানের রেজা শাহ পাহলভি রাজতন্ত্র ইসলামি বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়েছে ১৯৭৯ সালে। এর মাধ্যমে এককচ্ছত্র রাজতন্ত্রের অবসান হয় এবং সাভাক নিষিদ্ধ হয়। শাহ বিদেশে পালিয়ে যায় এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। তার সমর্থক ও সংগঠন উৎপাটিত হয়। ইরান হয় ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান। চীনের সম্রাট পুয়ির শাসন পাপেট শাসনে পরিবর্তিত হয় কুইয়িং ডায়নেস্টির সমাপ্তির মধ্য দিয়ে। এরপর ১৯৪৯ সালে চিয়াংকাই শেক ও তার ন্যাশনালিস্ট পার্টিকে (কুয়োমিংÑকেএমটি) উৎখাত করে মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে। চিয়াংকাই শেক ফরমোজায় পালিয়ে যায় এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করে।
ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস ওয়ানকে সিভিল ওয়ারের মাধ্যমে, গণঅভ্যুত্থানের মুখে উৎখাত করা হয়। তার চরম রাজতন্ত্র নিষিদ্ধ হয় এবং ৩০ জানুয়ারি ১৬৪৯ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে শেষ করা হয়। এরপর সীমিত সাংবিধানিক মোনার্কির মাধ্যমে ব্রিটেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। ফ্রান্সে জনগণ লুই দি সিক্সটিন্থকে নজিরবিহীন গণবিপ্লবের মুখে ক্ষমতাচ্যুত করে।
২১ জানুয়ারি ১৭৯৩ সালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। একইভাবে বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে এবং ফ্রান্সে রাজতন্ত্র নিষিদ্ধ করে রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়। চিলিতে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সালে সালভাদর আন্দোলকে হত্যা করে অগাস্টো পিনোশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে। তার বন্দনা-পূজার জন্য ‘মাই জেনারেল অগাস্টো পিনোশে’ নামক সংগীত তখন সারা চিলিবাসীকে গেলানো হয়। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশেও ১৯৭২-১৯৭৫ পর্যায়ে ব্যক্তি শেখ মুজিবের বন্দনাকে পূজার পর্যায়ে নেওয়া হয়েছিল এবং তাকে সার্বভৌম ও চিরঞ্জীব আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
যেটি চলেছে তার কন্যার আমলেও। অগাস্টো পিনোশে ও তার সাঙ্গপাঙ্গকে ১৯৮০ সালে উৎখাত করা হয়। সে মৃত্যুবরণ করে আরও পরে। লক্ষণীয় যে, চিলিতে পিনোশের ফ্যাসিবাদী বাহিনী যেমন হেলিকপ্টার থেকে ছুড়ে ফেলে বিরোধীদের মেরেছিল, তেমনি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট বাহিনী এপিসি কার থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে মেরেছে আন্দোলনরত তরুণ ছাত্রকে। একইভাবে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে বিরোধীদের এবং নিরীহ শিশুসহ জনগণকে হত্যা করেছে।
এদিকে বুচার অব উগান্ডা নামে কুখ্যাত উগান্ডার মিলিটারি ডিকটেটর ইদি আমিনকে কামপালার মসনদ থেকে জনসমর্থনে উৎখাত করা হয় ১৯৭৯ সালে তানজানিয়ার সামরিক বাহিনীর সাহায্যে। সে পালিয়ে যায় বিদেশে এবং ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করে। পানামার ফ্যাসিবাদী ম্যানুয়েল নরিয়েগা উৎখাতপ্রাপ্ত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ১৯৮৯ সালে।
তাকে ধরে নিয়ে যায় সিআইএ। আবার কিউবার ফ্যাসিস্ট সামরিক একনায়ক ফুলজেনশিও বাতিস্তাকে ফিদেল কাস্ত্রো জনসমর্থন পেয়ে উৎখাত করেন। নিষিদ্ধ করা হয় বাতিস্তার নিউ ইউনাইটেড অ্যাকশন পার্টিকে। তার সাঙ্গপাঙ্গদের দুই মাসের মধ্যে বিচার করে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। বাতিস্তা বিদেশে পালিয়ে যায় এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করে। ভিয়েতনামে ট্রম ট্রং কিমকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে ভিয়েতনাম ওয়ার্কার্স পার্টি এবং হো চি মিন প্রেসিডেন্ট হন।
ক্যাম্বোডিয়ার খেমাররুজ পলপটকে উৎখাত করা হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে। পলপটকে বন্দি করা হয়। ১৯৯৮ সালে গৃহবন্দি অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়। রোমানিয়ার ফ্যাসিস্ট নিকোলাই চসেস্কু সুইফট রিভোলিউশনের মাধ্যমে ১৯৮৯ সালে উৎখাতপ্রাপ্ত হয় এবং তার কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়। সে এবং তার স্ত্রী রোমানিয়ার রাজধানী থেকে পালিয়ে যায়, কিন্তু অন্য এক শহরে ধরা পড়ে। তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ওপরে সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন মহাদেশে ও অঞ্চলে সংঘটিত ইতিহাস থেকে শিক্ষণীয় যে, সব দেশেই ফ্যাসিবাদী শাসককে বলপ্রয়োগে উৎখাত করা হয়েছে জনসমর্থন নিয়ে জনগণেরই অভ্যুত্থানের পরিণতিতে। সব ক্ষেত্রেই উৎখাতপ্রাপ্ত ফ্যাসিবাদী শাসককে হয় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, নতুবা তারা বিদেশে পালিয়ে গেছে এবং সেখানে মরেছে।
আর শুধু দু-একটি ক্ষেত্রে দেশে বন্দি থাকা অবস্থায় ফ্যাসিবাদী শাসকের মৃত্যু হয়েছে। সব ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের চিন্তা ও দর্শন, শাসন, সংবিধান, দল-সংগঠন, সমর্থকরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের বাংলাদেশে ২০২৪-এর ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্টের বর্ষা বিপ্লবের মতো নজিরবিহীন ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাতপ্রাপ্ত ফ্যাসিস্ট মাফিয়া রানি খুনি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর করণীয় কী? প্রথমত, আমাদের কাজ হচ্ছে ২০১৩ সালের শাহবাগী আওয়ামী-বাকশালী ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিক্যবাদী এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদী হিন্দুত্বের বয়ানকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া।
আমাদের দায় হচ্ছে ২০২৪ সালের বর্ষাবিপ্লবের মাধ্যমে সামনে আসা শতকরা ৯২ দশমিক ৫০ ভাগ মানুষের জীবনবোধকে ও বাংলাদেশি সত্তাকে সামনে আনা এবং ভারতীয় আধিপত্যমুক্ত রিয়্যাল ন্যারেটিভকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, ভারতের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা এবং সেখান থেকে সব ধরনের অপতৎপরতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনাকারী খুনি শেখ হাসিনাকে তারই দ্বারা কৃত এক্সট্রাডিশন চুক্তি অনুযায়ী ফেরত এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা।
এ ছাড়া এই দিল্লিদাসী হাসিনাই তার প্রভু ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে ফোন করে ঢাকা অ্যাটাক করতে বলেছিলেনÑ এই নিষ্ঠুর সত্যকে আমাদের জনগণের কালেকটিভ মেমোরিতে গেঁথে রাখা। তৃতীয়ত, ফ্যাসিবাদী বাকশালী আওয়ামী লীগকে দেশঘাতী, রাষ্ট্রঘাতী, জনঘাতী, দিনঘাতী, সভ্যতাঘাতী হিসেবে চিরতরে নিষিদ্ধ করা।
চতুর্থত, নিয়ন্ত্রণাধীন হাইকোর্ট কর্তৃক সব ধরনে ফতোয়া নিষিদ্ধ করে রায় দেওয়ার প্রতিবাদে আওয়ামী বাকশালী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০০১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলিমদের গণহত্যা (যেখানে তাৎক্ষণিকভাবে ৬ জনের মৃত্যু এবং অসংখ্য আহত হয়); ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ বিডিআর হত্যা; কয়েক হাজার আলেম, শিশুসহ হেফাজত হত্যা; ২০২৪ সালের দুই হাজারের বেশি গণহত্যা ও ৫০ হাজারের ওপরে আহত করার অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে।
এরা গুম, খুন, আয়নাঘর, লুটতরাজ, পাচার, ভোটাধিকার হরণ, শপথভঙ্গ, সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকরণ, অসংখ্য হামলা-মামলা, জঙ্গি-সন্ত্রাস নাটকÑ এসব করেছে, যা কোনোভাবেই কোনো পর্যায়ই ক্ষমার যোগ্য নয়। তাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দলের সব গণশত্রু ও অঙ্গসংগঠন ও ফ্যাসিস্ট বাহিনীকে সর্বতোভাবে স্থায়ী ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। তাদের রাজনীতি ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
আর সেই সঙ্গে তাদের দ্বারা লুটকৃত সম্পদ ফিরিয়ে আনা, বাজেয়াপ্তকরণ এবং দোষী সবাইকে তাদের কৃত যাবতীয় অপরাধের জন্য দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলকভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী কাঠামোয় নিতান্তই দাসের অবস্থানে চলে যাওয়া যাবতীয় লুটের দ্বিতীয় সিংহভাগ আত্মসাৎকারী এবং ক্ষমতার অপব্যবহারকারী পায়াভারী আমলাতন্ত্র ও পুলিশকে ছাঁটাই ও বরখাস্ত করতে হবে, খোলনলচে সংস্কার করতে হবে, বদলে দিতে হবে।
আশঙ্কার কালো মেঘ এখন বাংলাদেশের দিগন্তজুড়ে। এখনো বিভিন্ন মহল সেই ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে যেভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে এবং আশ্রিত ৬২৬ জনসহ আরো ফ্যাসিবাদের লুটেরা-খুনি সাঙাতদের এমনকি ধরা পড়ার পরও পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে, তাদের বিষয় তদন্ত করা দরকার। উপযুক্ত মামলা ও বাস্তবে কৃত অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার মোতাবেক তাদের আদালতে এনে প্রকৃত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ সংঘটনে কেউ বা কোনো মহল দুঃসাহস না করে।
বাংলাদেশে মনসুন রিভোলিউশন, জুলাই বিপ্লব, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান, যা-ই বলুন, তাতে নিহত দুই হাজার মানুষ এবং আহত হওয়া ৫০ হাজার মানুষের প্রতি আমাদের কি কোনো দায় নেই? ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ, লেজুড় দল, সংগঠন, পত্রিকা, সাংবাদিক, ব্যক্তি, গোষ্ঠী, উপদেষ্টা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল- এরা কোন অধিকারে ১৬ বছর ধরে দেশ লুট করার, মানুষকে দাস বানানোর, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী আধিপত্যবাদের কাছে কলোনি বানিয়ে দেওয়া, ভারতের সঙ্গে অসম গোপন চুক্তি করা, অসম বাণিজ্য চালানো, করিডর দেওয়া, পানি সন্ত্রাস চালাতে দেওয়া, সীমান্ত হত্যা চালাতে দেওয়া, দিল্লি দাসদের আইনের আওতায় আনতে বাধা দিচ্ছে? এক্ষণে কেউ কেউ কীভাবে ফ্যাসিস্ট মাফিয়াকে, তার সংগঠনকে, তাদের দলকে, তাদের ষন্ডা-গুন্ডা-ডাকাত-খুনি বাহিনীকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে নির্লজ্জের মতো ওকালতি করে, বিবৃতি দেয়, টকশো করে, পত্র-পত্রিকায় লেখে, ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে তস্করের সাঙাত হয়ে মন্তব্য করে? এমন ভূমিকায় যে বা যারা নেমেছে, তাদের পরাজিত ও ফ্যাসিস্টদের দোসর ভাবলে মোটেও কি ভুল করা হবে? আসল কথা হচ্ছে, দেশ, রাষ্ট্র, সমাজ কারো বাপের তালুক নয়। এসব জনগণের মালিকানাধীন এবং তারাই বেসিক কনস্টিটুয়েন্সি। সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত জনগণের স্পষ্ট ব্যক্ত সম্মতি।
এই যে চার মাসের কিঞ্চিৎ অধিককাল আগে ভারতে পালিয়ে যাওয়া দিল্লিদাসী খুনি হাসিনা ও তার সাঙাতরা যে অন্তর্ঘাত করছে, বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে, সেটা কি চলতে দেওয়া হবে? তারা জুডিশিয়াল ক্যুর অপচেষ্টা চালিয়েছে। আনসার লীগ বিদ্রোহ করেছে। তারা হিন্দু কার্ড খেলেছে। এখনো দেশের সর্বত্র অন্তর্ঘাত ও বিশৃঙ্খলা করছে।
গোপালগঞ্জে তারা তাণ্ডব করেছে। তারা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করেছে। তারা ইসকনকে দুষ্কর্মে উসকে দিয়ে গন্ডগোল লাগিয়েছে। তারা আলিফকে হত্যা করেছে। গোপালগঞ্জে দুজন হুফ্ফাজ আল কোরআনকে হত্যা করেছে। তারা চিন্ময়কে দিয়ে ঘৃণ্য নাটক করেছে। তারা বাংলাদেশের পতাকার ওপর গেরুয়া রঙের ইসকনি পতাকা উড়িয়েছে।
তারা জয় শ্রীরাম বলে অখণ্ড ভারতের স্লোগান দিয়েছে। তারা ঢাকা ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছে। তারা চট্টগ্রাম দখলের হুমকি দিয়েছে। তারা বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে স্বাধীন বঙ্গভূমিসহ হিন্দুদের কয়েকটি স্বাধীন দেশ বানানোর হুমকি দিয়েছে।
এখনো তারা বিভিন্ন বাহিনী ও আমলাতন্ত্রের ভেতর সর্বত্র ঘাপটি মেরে বসে থেকে অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে। এসব কি আমরা আন-চ্যালেঞ্জ যেতে দেব? লক্ষণীয় যে, এখনো ১৬ বছরের দলদাস আমলাদের, ডিসিদের বিরাট অংশ প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসছে। নিতান্তই অন্যায্য, সংকীর্ণ, লাভের-লোভের বিবেচনায় এবং তা আদায়ও করে ফেলেছে।
এখনো আওয়ামী সাঙাতরা সমন্বয়কদের কাউকে কাউকে হত্যা করছে। এখনো তারা সারজিস-হাসনাতকে হত্যার টার্গেট করছে। এখনো উপদেষ্টা নাহিদ-আসিফের মন্ত্রণালয়দ্বয়কে টার্গেট করে দুই পাশের দুই মন্ত্রণালয়ে আগুন লাগিয়ে নিজেদের আগেরকার দুর্নীতির নথি শেষ করেছে এবং এই দুই উপদেষ্টাকে শাসাচ্ছে। সচিবালয়ে এই দুই মন্ত্রণালয়ে আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার সোহানকে পেছন থেকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করেছে।
এত কিছুর পরও ফ্যাসিস্ট দানবী হাসিনার এবং তার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষে, তাদের নিষিদ্ধ না করার পক্ষে, তাদের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার পক্ষে যারা প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে, তারা নিজেদের গণশত্রু অবস্থানের পরিচয়ই তুলে ধরছে। তাদের ইতিহাস পাঠ নেই। তারা লেনদেন, মালকড়ি, সংকীর্ণ স্বার্থ, ইতর সংযোগÑ এসবের সূত্রেই এহেন কুকর্ম ও ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানবিরোধী কাজ করছে বলে নিশ্চিত ধারণা হয়।
দল-সংগঠনগুলো ও কোনো কোনো ব্যক্তিনেতা পতিত ও বিতাড়িত অসভ্য ফ্যাসিবাদের পক্ষে তাদের ষন্ডা-গুন্ডা-খুনি-ডাকাত দলের পক্ষে কীভাবে নখ্রামি করে? কীভাবে তারা ভুলে যায় ২০২৪ সালের এত হাজার গণহত্যা, এত হাজার আহত হওয়া লড়াকু ভাইবোনকে? তারা কি বেঈমানি করছে না বর্ষা বিপ্লবের সঙ্গে? তারা কি বিশ্বাসঘাতকতা করছে না শহীদদের, আহতদের এবং বিজয়ী জনগণের সঙ্গে? তারা কীভাবে ১৯৭২-১৯, ১৯৯৬-০১, ২০০৭-০৮ এবং বিশেষত ২০০৯-২৪ পর্যায়ের দিল্লির দাসত্ব, ভারতের আধিপত্য এবং বাংলাদেশের উপনিবেশকরণকে বিস্মৃত হচ্ছে? তারা কী করে ভুলে যাচ্ছে আমাদের বোন সীমান্তে কাঁটাতারে ঝোলানো ফেলানীকে? তারা কী করে ভুলে যাচ্ছে মুগ্ধ, আবু সাঈদ ও ওয়াসিমকে? এসব তো একই ফ্যাসিবাদী শাসনেরই সৃষ্ট ফসল ও অনিবার্য পরিণতি।
তাই প্রকৃত ফ্যাসিস্টদের, ফ্যাসিবাদী দল ও তাদের সমর্থক বাহিনীগুলো এবং গোদ্ভারী আমলাতন্ত্রের মীরজাফরদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি অন্যায়, অনাচার, দুষ্কৃতি ও দুর্নীতির যথার্থ বিচার করতে হবে আইসিটির ও আদালতের মাধ্যমে। তা না হলে জনগণের এত বড় ত্যাগ ব্যর্থ হয়ে যাবে। ফ্যাসিবাদী সিক্যুয়াল, লেগেসি রাখা যাবে না। ফ্যাসিবাদের খোঁয়াড়ের লোকজন এবং তাদের সগোত্রীয় দলভারী করার মতলব-অন্ধ শকুনদের রুখতেই হবে। ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের, তারুণ্যের স্পিরিটকে বুঝতেই হবে। নতুন রাষ্ট্র ও শাসন বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষাকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, বিষধর সাপ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী-বাকশালীদের পায়ে পাড়া দিয়ে ছেড়ে দিলে কেউ বাঁচবেন না। সাপের ছোবল খেতেই হবে। তারা সবাইকে কামড়ে দিয়ে বিষে বিষে নীল করে দেবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের সঙ্গেই মানুষের সম্পর্ক হয় সভ্যতার ভিত্তিতে-নীতিতে। কিন্তু আপনি হায়েনার সঙ্গে, বিষাক্ত সাপের সঙ্গে, নরখাদক জানোয়ারের সঙ্গে মিল-মহব্বত করতে পারেন না। সমাজের সব পর্যায়ে কিছু ধান্ধাবাজ, টাউট-ট্যান্ডলকে জনগণ ফ্যাসিস্ট খুনি-ডাকাত-লুটেরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘পিরীতি’ করার অধিকার দেয়নি।
তাই দানবী ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন খুনি হাসিনা ও তার দলকে চিরতরে বাতিল করতে হবে। রাজনৈতিক টাউট ও কুশীলদের ‘পরকীয়া’ রুখতেই হবে যেকোনো মূল্যে। বাংলাদেশের কোটি জনতা এদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করুন। আর নিজেদের কালেকটিভ মেমোরিতে এসব রেখে ভবিষ্যতে ভোটদানকালে এদের কঙ্কুবাইন কুটিল রাজনীতির উপযুক্ত জবাব দেবেন। ভুলে যাবেন না ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ এবং এদের পক্ষে দালালি করা টাউটরা আপনাদের কতখানি অপমান করেছে, কত বেশি আঘাত করেছে।
লেখক : প্রফেসর (অব:), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অনেক কষ্টে পাওয়া বাংলাদেশ। অনেক দামে কেনা। কিন্তু বিকিয়ে গেল কি বিনামূল্যে? এ প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে এ জন্য যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হাজারো মাইলাই ম্যাসাকার পেরিয়ে লাখ শহীদের ত্যাগ এবং ২০২৪ সালের নজিরবিহীন ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ও বিশাল কোরবানির পরও আমরা যেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছি না।
বাধার পারাবার যেন আমাদের সম্মুখে। অনেক সূর্যের আশা নিয়ে আমরা এক হাজার বছর পথ হেঁটে, তারপর আরও চব্বিশ বছর পেরিয়ে এবং সবশেষে আরও তেপ্পান্ন বছরের ঊষর জীবন পেরিয়ে বরফগলা নদী পার হয়ে শেষ বিকালে এক নতুন ভোরের প্রত্যাশায় ছিলাম। কিন্তু কোথায় সেই ভোর? কোথায় সেই রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতেই হবে।
ইতিহাস পাঠে দেখা যায়, ইতালি ও জার্মানির দুই ক্ল্যাসিক্যাল ফ্যাসিবাদ শেষা পর্যন্ত ধ্বংস, শাস্তিপ্রাপ্ত এবং নিশ্চিহ্ন হয়েছে। একইভাবে পর্তুগালে ১৯৩২-৬৮ এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত কোনোভাবে টিকে থাকা অ্যান্টোনিও ডি অলিভেরিয়া সালাজারের ফ্যাসিবাদী শাসনকে জনসহায়তায় উৎখাত করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। যে সালাজার ইতালির মুসোলিনির ফ্যান ছিল, তাকে প্রচণ্ড ঘৃণাভরে উৎখাত করা হয়েছে এবং তার সমর্থকরাও উচ্ছেদপ্রাপ্ত হয়েছে আর তার সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে।
জুয়ান কার্লোসকে সীমিত সাংবিধানিক মোনার্কি দিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। রাশিয়ার জার নিকোলাস ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উৎখাতপ্রাপ্ত হয়ে ১৯১৮ সালে এক্সিকিউশন বা হত্যার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। তার মোনার্কি পার্টি বাতিল হয়েছে এবং রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলশেভিকদের মাধ্যমে। এর পরপর মোনার্কি পার্টি জুলিয়াস পারটা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। সে বিদেশে মরেছে এবং তার পার্টি নিষিদ্ধ হয়েছে।
কেরেনস্কির মেনশেভিক পার্টি তাকে উৎখাতের পর নিষিদ্ধ হয়েছে বলশেভিক পার্টির সরকার দ্বারা। ইরানের রেজা শাহ পাহলভি রাজতন্ত্র ইসলামি বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়েছে ১৯৭৯ সালে। এর মাধ্যমে এককচ্ছত্র রাজতন্ত্রের অবসান হয় এবং সাভাক নিষিদ্ধ হয়। শাহ বিদেশে পালিয়ে যায় এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। তার সমর্থক ও সংগঠন উৎপাটিত হয়। ইরান হয় ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান। চীনের সম্রাট পুয়ির শাসন পাপেট শাসনে পরিবর্তিত হয় কুইয়িং ডায়নেস্টির সমাপ্তির মধ্য দিয়ে। এরপর ১৯৪৯ সালে চিয়াংকাই শেক ও তার ন্যাশনালিস্ট পার্টিকে (কুয়োমিংÑকেএমটি) উৎখাত করে মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে। চিয়াংকাই শেক ফরমোজায় পালিয়ে যায় এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করে।
ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস ওয়ানকে সিভিল ওয়ারের মাধ্যমে, গণঅভ্যুত্থানের মুখে উৎখাত করা হয়। তার চরম রাজতন্ত্র নিষিদ্ধ হয় এবং ৩০ জানুয়ারি ১৬৪৯ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে শেষ করা হয়। এরপর সীমিত সাংবিধানিক মোনার্কির মাধ্যমে ব্রিটেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। ফ্রান্সে জনগণ লুই দি সিক্সটিন্থকে নজিরবিহীন গণবিপ্লবের মুখে ক্ষমতাচ্যুত করে।
২১ জানুয়ারি ১৭৯৩ সালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। একইভাবে বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে এবং ফ্রান্সে রাজতন্ত্র নিষিদ্ধ করে রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়। চিলিতে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সালে সালভাদর আন্দোলকে হত্যা করে অগাস্টো পিনোশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে। তার বন্দনা-পূজার জন্য ‘মাই জেনারেল অগাস্টো পিনোশে’ নামক সংগীত তখন সারা চিলিবাসীকে গেলানো হয়। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশেও ১৯৭২-১৯৭৫ পর্যায়ে ব্যক্তি শেখ মুজিবের বন্দনাকে পূজার পর্যায়ে নেওয়া হয়েছিল এবং তাকে সার্বভৌম ও চিরঞ্জীব আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
যেটি চলেছে তার কন্যার আমলেও। অগাস্টো পিনোশে ও তার সাঙ্গপাঙ্গকে ১৯৮০ সালে উৎখাত করা হয়। সে মৃত্যুবরণ করে আরও পরে। লক্ষণীয় যে, চিলিতে পিনোশের ফ্যাসিবাদী বাহিনী যেমন হেলিকপ্টার থেকে ছুড়ে ফেলে বিরোধীদের মেরেছিল, তেমনি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট বাহিনী এপিসি কার থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে মেরেছে আন্দোলনরত তরুণ ছাত্রকে। একইভাবে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে বিরোধীদের এবং নিরীহ শিশুসহ জনগণকে হত্যা করেছে।
এদিকে বুচার অব উগান্ডা নামে কুখ্যাত উগান্ডার মিলিটারি ডিকটেটর ইদি আমিনকে কামপালার মসনদ থেকে জনসমর্থনে উৎখাত করা হয় ১৯৭৯ সালে তানজানিয়ার সামরিক বাহিনীর সাহায্যে। সে পালিয়ে যায় বিদেশে এবং ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করে। পানামার ফ্যাসিবাদী ম্যানুয়েল নরিয়েগা উৎখাতপ্রাপ্ত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ১৯৮৯ সালে।
তাকে ধরে নিয়ে যায় সিআইএ। আবার কিউবার ফ্যাসিস্ট সামরিক একনায়ক ফুলজেনশিও বাতিস্তাকে ফিদেল কাস্ত্রো জনসমর্থন পেয়ে উৎখাত করেন। নিষিদ্ধ করা হয় বাতিস্তার নিউ ইউনাইটেড অ্যাকশন পার্টিকে। তার সাঙ্গপাঙ্গদের দুই মাসের মধ্যে বিচার করে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। বাতিস্তা বিদেশে পালিয়ে যায় এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করে। ভিয়েতনামে ট্রম ট্রং কিমকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে ভিয়েতনাম ওয়ার্কার্স পার্টি এবং হো চি মিন প্রেসিডেন্ট হন।
ক্যাম্বোডিয়ার খেমাররুজ পলপটকে উৎখাত করা হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে। পলপটকে বন্দি করা হয়। ১৯৯৮ সালে গৃহবন্দি অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়। রোমানিয়ার ফ্যাসিস্ট নিকোলাই চসেস্কু সুইফট রিভোলিউশনের মাধ্যমে ১৯৮৯ সালে উৎখাতপ্রাপ্ত হয় এবং তার কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়। সে এবং তার স্ত্রী রোমানিয়ার রাজধানী থেকে পালিয়ে যায়, কিন্তু অন্য এক শহরে ধরা পড়ে। তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ওপরে সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন মহাদেশে ও অঞ্চলে সংঘটিত ইতিহাস থেকে শিক্ষণীয় যে, সব দেশেই ফ্যাসিবাদী শাসককে বলপ্রয়োগে উৎখাত করা হয়েছে জনসমর্থন নিয়ে জনগণেরই অভ্যুত্থানের পরিণতিতে। সব ক্ষেত্রেই উৎখাতপ্রাপ্ত ফ্যাসিবাদী শাসককে হয় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, নতুবা তারা বিদেশে পালিয়ে গেছে এবং সেখানে মরেছে।
আর শুধু দু-একটি ক্ষেত্রে দেশে বন্দি থাকা অবস্থায় ফ্যাসিবাদী শাসকের মৃত্যু হয়েছে। সব ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের চিন্তা ও দর্শন, শাসন, সংবিধান, দল-সংগঠন, সমর্থকরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের বাংলাদেশে ২০২৪-এর ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্টের বর্ষা বিপ্লবের মতো নজিরবিহীন ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাতপ্রাপ্ত ফ্যাসিস্ট মাফিয়া রানি খুনি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর করণীয় কী? প্রথমত, আমাদের কাজ হচ্ছে ২০১৩ সালের শাহবাগী আওয়ামী-বাকশালী ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিক্যবাদী এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদী হিন্দুত্বের বয়ানকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া।
আমাদের দায় হচ্ছে ২০২৪ সালের বর্ষাবিপ্লবের মাধ্যমে সামনে আসা শতকরা ৯২ দশমিক ৫০ ভাগ মানুষের জীবনবোধকে ও বাংলাদেশি সত্তাকে সামনে আনা এবং ভারতীয় আধিপত্যমুক্ত রিয়্যাল ন্যারেটিভকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, ভারতের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা এবং সেখান থেকে সব ধরনের অপতৎপরতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনাকারী খুনি শেখ হাসিনাকে তারই দ্বারা কৃত এক্সট্রাডিশন চুক্তি অনুযায়ী ফেরত এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা।
এ ছাড়া এই দিল্লিদাসী হাসিনাই তার প্রভু ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে ফোন করে ঢাকা অ্যাটাক করতে বলেছিলেনÑ এই নিষ্ঠুর সত্যকে আমাদের জনগণের কালেকটিভ মেমোরিতে গেঁথে রাখা। তৃতীয়ত, ফ্যাসিবাদী বাকশালী আওয়ামী লীগকে দেশঘাতী, রাষ্ট্রঘাতী, জনঘাতী, দিনঘাতী, সভ্যতাঘাতী হিসেবে চিরতরে নিষিদ্ধ করা।
চতুর্থত, নিয়ন্ত্রণাধীন হাইকোর্ট কর্তৃক সব ধরনে ফতোয়া নিষিদ্ধ করে রায় দেওয়ার প্রতিবাদে আওয়ামী বাকশালী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০০১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলিমদের গণহত্যা (যেখানে তাৎক্ষণিকভাবে ৬ জনের মৃত্যু এবং অসংখ্য আহত হয়); ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ বিডিআর হত্যা; কয়েক হাজার আলেম, শিশুসহ হেফাজত হত্যা; ২০২৪ সালের দুই হাজারের বেশি গণহত্যা ও ৫০ হাজারের ওপরে আহত করার অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে।
এরা গুম, খুন, আয়নাঘর, লুটতরাজ, পাচার, ভোটাধিকার হরণ, শপথভঙ্গ, সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকরণ, অসংখ্য হামলা-মামলা, জঙ্গি-সন্ত্রাস নাটকÑ এসব করেছে, যা কোনোভাবেই কোনো পর্যায়ই ক্ষমার যোগ্য নয়। তাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দলের সব গণশত্রু ও অঙ্গসংগঠন ও ফ্যাসিস্ট বাহিনীকে সর্বতোভাবে স্থায়ী ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। তাদের রাজনীতি ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
আর সেই সঙ্গে তাদের দ্বারা লুটকৃত সম্পদ ফিরিয়ে আনা, বাজেয়াপ্তকরণ এবং দোষী সবাইকে তাদের কৃত যাবতীয় অপরাধের জন্য দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলকভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী কাঠামোয় নিতান্তই দাসের অবস্থানে চলে যাওয়া যাবতীয় লুটের দ্বিতীয় সিংহভাগ আত্মসাৎকারী এবং ক্ষমতার অপব্যবহারকারী পায়াভারী আমলাতন্ত্র ও পুলিশকে ছাঁটাই ও বরখাস্ত করতে হবে, খোলনলচে সংস্কার করতে হবে, বদলে দিতে হবে।
আশঙ্কার কালো মেঘ এখন বাংলাদেশের দিগন্তজুড়ে। এখনো বিভিন্ন মহল সেই ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে যেভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে এবং আশ্রিত ৬২৬ জনসহ আরো ফ্যাসিবাদের লুটেরা-খুনি সাঙাতদের এমনকি ধরা পড়ার পরও পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে, তাদের বিষয় তদন্ত করা দরকার। উপযুক্ত মামলা ও বাস্তবে কৃত অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার মোতাবেক তাদের আদালতে এনে প্রকৃত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ সংঘটনে কেউ বা কোনো মহল দুঃসাহস না করে।
বাংলাদেশে মনসুন রিভোলিউশন, জুলাই বিপ্লব, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান, যা-ই বলুন, তাতে নিহত দুই হাজার মানুষ এবং আহত হওয়া ৫০ হাজার মানুষের প্রতি আমাদের কি কোনো দায় নেই? ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ, লেজুড় দল, সংগঠন, পত্রিকা, সাংবাদিক, ব্যক্তি, গোষ্ঠী, উপদেষ্টা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল- এরা কোন অধিকারে ১৬ বছর ধরে দেশ লুট করার, মানুষকে দাস বানানোর, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী আধিপত্যবাদের কাছে কলোনি বানিয়ে দেওয়া, ভারতের সঙ্গে অসম গোপন চুক্তি করা, অসম বাণিজ্য চালানো, করিডর দেওয়া, পানি সন্ত্রাস চালাতে দেওয়া, সীমান্ত হত্যা চালাতে দেওয়া, দিল্লি দাসদের আইনের আওতায় আনতে বাধা দিচ্ছে? এক্ষণে কেউ কেউ কীভাবে ফ্যাসিস্ট মাফিয়াকে, তার সংগঠনকে, তাদের দলকে, তাদের ষন্ডা-গুন্ডা-ডাকাত-খুনি বাহিনীকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে নির্লজ্জের মতো ওকালতি করে, বিবৃতি দেয়, টকশো করে, পত্র-পত্রিকায় লেখে, ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে তস্করের সাঙাত হয়ে মন্তব্য করে? এমন ভূমিকায় যে বা যারা নেমেছে, তাদের পরাজিত ও ফ্যাসিস্টদের দোসর ভাবলে মোটেও কি ভুল করা হবে? আসল কথা হচ্ছে, দেশ, রাষ্ট্র, সমাজ কারো বাপের তালুক নয়। এসব জনগণের মালিকানাধীন এবং তারাই বেসিক কনস্টিটুয়েন্সি। সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত জনগণের স্পষ্ট ব্যক্ত সম্মতি।
এই যে চার মাসের কিঞ্চিৎ অধিককাল আগে ভারতে পালিয়ে যাওয়া দিল্লিদাসী খুনি হাসিনা ও তার সাঙাতরা যে অন্তর্ঘাত করছে, বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে, সেটা কি চলতে দেওয়া হবে? তারা জুডিশিয়াল ক্যুর অপচেষ্টা চালিয়েছে। আনসার লীগ বিদ্রোহ করেছে। তারা হিন্দু কার্ড খেলেছে। এখনো দেশের সর্বত্র অন্তর্ঘাত ও বিশৃঙ্খলা করছে।
গোপালগঞ্জে তারা তাণ্ডব করেছে। তারা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করেছে। তারা ইসকনকে দুষ্কর্মে উসকে দিয়ে গন্ডগোল লাগিয়েছে। তারা আলিফকে হত্যা করেছে। গোপালগঞ্জে দুজন হুফ্ফাজ আল কোরআনকে হত্যা করেছে। তারা চিন্ময়কে দিয়ে ঘৃণ্য নাটক করেছে। তারা বাংলাদেশের পতাকার ওপর গেরুয়া রঙের ইসকনি পতাকা উড়িয়েছে।
তারা জয় শ্রীরাম বলে অখণ্ড ভারতের স্লোগান দিয়েছে। তারা ঢাকা ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছে। তারা চট্টগ্রাম দখলের হুমকি দিয়েছে। তারা বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে স্বাধীন বঙ্গভূমিসহ হিন্দুদের কয়েকটি স্বাধীন দেশ বানানোর হুমকি দিয়েছে।
এখনো তারা বিভিন্ন বাহিনী ও আমলাতন্ত্রের ভেতর সর্বত্র ঘাপটি মেরে বসে থেকে অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে। এসব কি আমরা আন-চ্যালেঞ্জ যেতে দেব? লক্ষণীয় যে, এখনো ১৬ বছরের দলদাস আমলাদের, ডিসিদের বিরাট অংশ প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসছে। নিতান্তই অন্যায্য, সংকীর্ণ, লাভের-লোভের বিবেচনায় এবং তা আদায়ও করে ফেলেছে।
এখনো আওয়ামী সাঙাতরা সমন্বয়কদের কাউকে কাউকে হত্যা করছে। এখনো তারা সারজিস-হাসনাতকে হত্যার টার্গেট করছে। এখনো উপদেষ্টা নাহিদ-আসিফের মন্ত্রণালয়দ্বয়কে টার্গেট করে দুই পাশের দুই মন্ত্রণালয়ে আগুন লাগিয়ে নিজেদের আগেরকার দুর্নীতির নথি শেষ করেছে এবং এই দুই উপদেষ্টাকে শাসাচ্ছে। সচিবালয়ে এই দুই মন্ত্রণালয়ে আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার সোহানকে পেছন থেকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করেছে।
এত কিছুর পরও ফ্যাসিস্ট দানবী হাসিনার এবং তার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষে, তাদের নিষিদ্ধ না করার পক্ষে, তাদের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার পক্ষে যারা প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে, তারা নিজেদের গণশত্রু অবস্থানের পরিচয়ই তুলে ধরছে। তাদের ইতিহাস পাঠ নেই। তারা লেনদেন, মালকড়ি, সংকীর্ণ স্বার্থ, ইতর সংযোগÑ এসবের সূত্রেই এহেন কুকর্ম ও ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানবিরোধী কাজ করছে বলে নিশ্চিত ধারণা হয়।
দল-সংগঠনগুলো ও কোনো কোনো ব্যক্তিনেতা পতিত ও বিতাড়িত অসভ্য ফ্যাসিবাদের পক্ষে তাদের ষন্ডা-গুন্ডা-খুনি-ডাকাত দলের পক্ষে কীভাবে নখ্রামি করে? কীভাবে তারা ভুলে যায় ২০২৪ সালের এত হাজার গণহত্যা, এত হাজার আহত হওয়া লড়াকু ভাইবোনকে? তারা কি বেঈমানি করছে না বর্ষা বিপ্লবের সঙ্গে? তারা কি বিশ্বাসঘাতকতা করছে না শহীদদের, আহতদের এবং বিজয়ী জনগণের সঙ্গে? তারা কীভাবে ১৯৭২-১৯, ১৯৯৬-০১, ২০০৭-০৮ এবং বিশেষত ২০০৯-২৪ পর্যায়ের দিল্লির দাসত্ব, ভারতের আধিপত্য এবং বাংলাদেশের উপনিবেশকরণকে বিস্মৃত হচ্ছে? তারা কী করে ভুলে যাচ্ছে আমাদের বোন সীমান্তে কাঁটাতারে ঝোলানো ফেলানীকে? তারা কী করে ভুলে যাচ্ছে মুগ্ধ, আবু সাঈদ ও ওয়াসিমকে? এসব তো একই ফ্যাসিবাদী শাসনেরই সৃষ্ট ফসল ও অনিবার্য পরিণতি।
তাই প্রকৃত ফ্যাসিস্টদের, ফ্যাসিবাদী দল ও তাদের সমর্থক বাহিনীগুলো এবং গোদ্ভারী আমলাতন্ত্রের মীরজাফরদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি অন্যায়, অনাচার, দুষ্কৃতি ও দুর্নীতির যথার্থ বিচার করতে হবে আইসিটির ও আদালতের মাধ্যমে। তা না হলে জনগণের এত বড় ত্যাগ ব্যর্থ হয়ে যাবে। ফ্যাসিবাদী সিক্যুয়াল, লেগেসি রাখা যাবে না। ফ্যাসিবাদের খোঁয়াড়ের লোকজন এবং তাদের সগোত্রীয় দলভারী করার মতলব-অন্ধ শকুনদের রুখতেই হবে। ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের, তারুণ্যের স্পিরিটকে বুঝতেই হবে। নতুন রাষ্ট্র ও শাসন বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষাকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, বিষধর সাপ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী-বাকশালীদের পায়ে পাড়া দিয়ে ছেড়ে দিলে কেউ বাঁচবেন না। সাপের ছোবল খেতেই হবে। তারা সবাইকে কামড়ে দিয়ে বিষে বিষে নীল করে দেবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের সঙ্গেই মানুষের সম্পর্ক হয় সভ্যতার ভিত্তিতে-নীতিতে। কিন্তু আপনি হায়েনার সঙ্গে, বিষাক্ত সাপের সঙ্গে, নরখাদক জানোয়ারের সঙ্গে মিল-মহব্বত করতে পারেন না। সমাজের সব পর্যায়ে কিছু ধান্ধাবাজ, টাউট-ট্যান্ডলকে জনগণ ফ্যাসিস্ট খুনি-ডাকাত-লুটেরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘পিরীতি’ করার অধিকার দেয়নি।
তাই দানবী ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন খুনি হাসিনা ও তার দলকে চিরতরে বাতিল করতে হবে। রাজনৈতিক টাউট ও কুশীলদের ‘পরকীয়া’ রুখতেই হবে যেকোনো মূল্যে। বাংলাদেশের কোটি জনতা এদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করুন। আর নিজেদের কালেকটিভ মেমোরিতে এসব রেখে ভবিষ্যতে ভোটদানকালে এদের কঙ্কুবাইন কুটিল রাজনীতির উপযুক্ত জবাব দেবেন। ভুলে যাবেন না ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ এবং এদের পক্ষে দালালি করা টাউটরা আপনাদের কতখানি অপমান করেছে, কত বেশি আঘাত করেছে।
লেখক : প্রফেসর (অব:), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৪ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৪ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে