বশীর আহমেদ
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ব্যাপারে রীতিমতো দ্বিচারিতায় লিপ্ত হয়েছে দিল্লি। একদিকে মুখে সুসম্পর্ক গড়ার কথা বলছে, অন্যদিকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে যা কিছু করার, তার সবই করছে মোদি প্রশাসন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে উৎখাত হওয়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে তার মাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করার পরও তা আমলে নেয়নি দিল্লি। উল্টো বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতির ব্যাপারে দিল্লির কোনো দায় নেই। আমরা এখানে কোনো ভূমিকা পালন করছি না। শেখ হাসিনা যা কিছু করছেন, তা তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগেই করছেন। আমরা শেখ হাসিনাকে কোনো প্ল্যাটফর্ম দিইনি।
দিল্লির এই দ্বিমুখী আচরণকে ভণ্ডামি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলে মিথ্যাচার করছে। তারা আসলে সবাইকে বিভ্রান্ত করতে চায়। ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে শত্রুরাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে। ড. ইউনূস সরকারকে তারা উৎখাত করতে চায়। শেখ হাসিনা পুরোপুরি ভারতীয় গোয়েন্দাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছেন। দিল্লির আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনা কী বলতে পারবেন আর কী বলতে পারবেন না, তা অবশ্যই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাই নির্ধারণ করে থাকে।
গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের পর মোদি প্রশাসন শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়, যদিও এই রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে কখনো স্বীকার করেনি সাউথ ব্লক, কারণ শেখ হাসিনা গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি।
মূলত দিল্লির প্রকাশ্য মদতে দীর্ঘ ১৫ বছর বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছিলেন শেখ হাসিনা। জুলাই বিপ্লবে তার পতন যতটা না ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা, তার চেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল ভারতের ডিপ স্টেটের ব্যর্থতা। ভারতের ইতিহাসে তার ডিপ স্টেটের এমন ব্যর্থতা আর কখনো চোখে পড়েনি। শেখ হাসিনার পতনকে কোনোভাবেই মানতে পারেনি ভারত। তাই হাসিনার পতনের পর থেকেই বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় নামে মোদি প্রশাসন। প্রথমেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের কল্পিত কাহিনি তৈরি করে চারদিকে শোরগোল তৈরির চেষ্টা করে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা কাহিনি প্রচারে ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম পর্যন্ত মাঠে নামে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘু ব্যানারে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উসকানিমূলক বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চালায় ভারত। সংখ্যালঘু ইস্যুর পাশাপাশি ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কুমার দাসের গ্রেপ্তারে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কল্পকাহিনি তৈরি, সীমান্তে হত্যা, বেআইনি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের মাধ্যমে সীমান্ত উত্তেজনা তৈরিসহ নানা ইস্যুকে সামনে এনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয় দিল্লির পক্ষ থেকে।
ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা ও কূটনীতিক এবং বিভিন্ন থিংকট্যাংক একযোগে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য রেখেছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরে আসবে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর। তবে ভারতের সেনাপ্রধান মন্তব্য করেন, দুই দেশের সেনা নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক অটুট রয়েছে। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের ঘটনার সময় বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। সেই যোগাযোগ এখনো অব্যাহত আছে।’ ভারতের সেনাপ্রধান তার বক্তব্যের মাধ্যমে একদিকে ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে ভারতের এক ধরনের অনাস্থার কথা জানিয়েছেন, অন্যদিকে সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরির অপচেষ্টা করেছেন।
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে মোদি প্রশাসন সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে খোদ শেখ হাসিনাকেই ব্যবহার করছে। শেখ হাসিনার বিভিন্ন অডিও বার্তা এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনালাপের অডিও রেকর্ড ধারাবাহিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। এসব অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত গণহত্যার দায় ড. মুহম্মদ ইউনূসের ওপর চাপান। তিনি তার নেতাকর্মীদের মাঠে নামার উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগবিরোধীদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ারও নির্দেশ দেন এবং আমলা, পুলিশসহ সেনাকর্মকর্তাদের নানাভাবে উসকানোর চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনার ধারাবাহিক মিথ্যাচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পাশাপাশি ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার ভারতকে জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ ধরনের বিবৃতি দেওয়া থেকে শেখ হাসিনাকে বিরত রাখতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
এদিকে আগাম ঘোষণা দিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক লাইভে এসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার ওই ভাষণ ছিল মিথ্যায় পরিপূর্ণ এবং চরম উসকানিমূলক। দুই হাজারের বেশি মানুষ খুনের নির্দেশদাতা হয়েও শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন—তার অপরাধ কী! শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ছাত্র-জনতার মাঝে। ফলস্বরূপ মাটিতে মিশে যায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ভবন।
ঘটনাটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ হলেও কোনো ধরনের বিলম্ব না করেই এর নিন্দা জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, ধানমন্ডির ৩২নং ভবনটি গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের প্রতীক। এ বিষয়ে আমাদের সবার নিন্দা জানানো উচিত।
৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার পবন বাধেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে শেখ হাসিনার মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্যের ব্যাপারে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। ভারতীয় দূতকে দেওয়া প্রোটেস্ট নোটে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে আপনারা থামান। তার দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতি শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকেই অস্থিতিশীল করছে না, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বলেন, আমরা বারবার ভারতকে বলছি, শেখ হাসিনাকে থামান। তিনি দিল্লিতে বসে যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তা মিথ্যা ও চরম উসকানিমূলক। ধানমন্ডি ৩২-এর ঘটনা শেখ হাসিনার উসকানিরই ফল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য বাংলাদেশে যেমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে সহায়তা করছে, তেমনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। শেখ হাসিনাকে থামাতে ভারতের কাছ থেকে আমরা কোনো সাড়া পাচ্ছি না। বিচারের জন্য আমরা শেখ হাাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। তারও কোনো জবাব এখনো পাইনি।
এদিকে ঢাকায় ভারতীয় দূতকে তলবের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো. নুরাল ইসলামকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতির বিষয়ে ভারত সরকারের কোনো দায় বা ভূমিকা নেই। মুখপাত্র উল্টো বাংলাদেশের ওপর দায় চাপিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকার যেসব বিবৃতি দিচ্ছে, তা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক নয়। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চাই।
শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতির ব্যাপারে ভারত সরকারের দেওয়া এই বক্তব্য দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। দিল্লির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা রীতিমতো ভণ্ডামি। ভারত এখন বাংলাদেশের সঙ্গে যা করছে, তা শত্রুরাষ্ট্রের আচরণের মধ্যে পড়ে। এ বিষয়ে আমাদের সরকার উদাসীনতার পরিচয় দিলে বাংলাদেশ বড় মাত্রার বিপর্যয়ে নিপতিত হতে পারে।
লেখক : কূটনৈতিক প্রতিবেদক, আমার দেশ
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ব্যাপারে রীতিমতো দ্বিচারিতায় লিপ্ত হয়েছে দিল্লি। একদিকে মুখে সুসম্পর্ক গড়ার কথা বলছে, অন্যদিকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে যা কিছু করার, তার সবই করছে মোদি প্রশাসন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে উৎখাত হওয়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে তার মাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করার পরও তা আমলে নেয়নি দিল্লি। উল্টো বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতির ব্যাপারে দিল্লির কোনো দায় নেই। আমরা এখানে কোনো ভূমিকা পালন করছি না। শেখ হাসিনা যা কিছু করছেন, তা তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগেই করছেন। আমরা শেখ হাসিনাকে কোনো প্ল্যাটফর্ম দিইনি।
দিল্লির এই দ্বিমুখী আচরণকে ভণ্ডামি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলে মিথ্যাচার করছে। তারা আসলে সবাইকে বিভ্রান্ত করতে চায়। ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে শত্রুরাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে। ড. ইউনূস সরকারকে তারা উৎখাত করতে চায়। শেখ হাসিনা পুরোপুরি ভারতীয় গোয়েন্দাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছেন। দিল্লির আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনা কী বলতে পারবেন আর কী বলতে পারবেন না, তা অবশ্যই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাই নির্ধারণ করে থাকে।
গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের পর মোদি প্রশাসন শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়, যদিও এই রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে কখনো স্বীকার করেনি সাউথ ব্লক, কারণ শেখ হাসিনা গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি।
মূলত দিল্লির প্রকাশ্য মদতে দীর্ঘ ১৫ বছর বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছিলেন শেখ হাসিনা। জুলাই বিপ্লবে তার পতন যতটা না ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা, তার চেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল ভারতের ডিপ স্টেটের ব্যর্থতা। ভারতের ইতিহাসে তার ডিপ স্টেটের এমন ব্যর্থতা আর কখনো চোখে পড়েনি। শেখ হাসিনার পতনকে কোনোভাবেই মানতে পারেনি ভারত। তাই হাসিনার পতনের পর থেকেই বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় নামে মোদি প্রশাসন। প্রথমেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের কল্পিত কাহিনি তৈরি করে চারদিকে শোরগোল তৈরির চেষ্টা করে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা কাহিনি প্রচারে ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম পর্যন্ত মাঠে নামে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘু ব্যানারে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উসকানিমূলক বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চালায় ভারত। সংখ্যালঘু ইস্যুর পাশাপাশি ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কুমার দাসের গ্রেপ্তারে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কল্পকাহিনি তৈরি, সীমান্তে হত্যা, বেআইনি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের মাধ্যমে সীমান্ত উত্তেজনা তৈরিসহ নানা ইস্যুকে সামনে এনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয় দিল্লির পক্ষ থেকে।
ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা ও কূটনীতিক এবং বিভিন্ন থিংকট্যাংক একযোগে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য রেখেছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরে আসবে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর। তবে ভারতের সেনাপ্রধান মন্তব্য করেন, দুই দেশের সেনা নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক অটুট রয়েছে। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের ঘটনার সময় বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। সেই যোগাযোগ এখনো অব্যাহত আছে।’ ভারতের সেনাপ্রধান তার বক্তব্যের মাধ্যমে একদিকে ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে ভারতের এক ধরনের অনাস্থার কথা জানিয়েছেন, অন্যদিকে সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরির অপচেষ্টা করেছেন।
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে মোদি প্রশাসন সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে খোদ শেখ হাসিনাকেই ব্যবহার করছে। শেখ হাসিনার বিভিন্ন অডিও বার্তা এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনালাপের অডিও রেকর্ড ধারাবাহিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। এসব অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত গণহত্যার দায় ড. মুহম্মদ ইউনূসের ওপর চাপান। তিনি তার নেতাকর্মীদের মাঠে নামার উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগবিরোধীদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ারও নির্দেশ দেন এবং আমলা, পুলিশসহ সেনাকর্মকর্তাদের নানাভাবে উসকানোর চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনার ধারাবাহিক মিথ্যাচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পাশাপাশি ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার ভারতকে জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ ধরনের বিবৃতি দেওয়া থেকে শেখ হাসিনাকে বিরত রাখতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
এদিকে আগাম ঘোষণা দিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক লাইভে এসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার ওই ভাষণ ছিল মিথ্যায় পরিপূর্ণ এবং চরম উসকানিমূলক। দুই হাজারের বেশি মানুষ খুনের নির্দেশদাতা হয়েও শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন—তার অপরাধ কী! শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ছাত্র-জনতার মাঝে। ফলস্বরূপ মাটিতে মিশে যায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ভবন।
ঘটনাটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ হলেও কোনো ধরনের বিলম্ব না করেই এর নিন্দা জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, ধানমন্ডির ৩২নং ভবনটি গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের প্রতীক। এ বিষয়ে আমাদের সবার নিন্দা জানানো উচিত।
৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার পবন বাধেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে শেখ হাসিনার মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্যের ব্যাপারে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। ভারতীয় দূতকে দেওয়া প্রোটেস্ট নোটে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে আপনারা থামান। তার দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতি শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকেই অস্থিতিশীল করছে না, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বলেন, আমরা বারবার ভারতকে বলছি, শেখ হাসিনাকে থামান। তিনি দিল্লিতে বসে যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তা মিথ্যা ও চরম উসকানিমূলক। ধানমন্ডি ৩২-এর ঘটনা শেখ হাসিনার উসকানিরই ফল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য বাংলাদেশে যেমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে সহায়তা করছে, তেমনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। শেখ হাসিনাকে থামাতে ভারতের কাছ থেকে আমরা কোনো সাড়া পাচ্ছি না। বিচারের জন্য আমরা শেখ হাাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। তারও কোনো জবাব এখনো পাইনি।
এদিকে ঢাকায় ভারতীয় দূতকে তলবের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো. নুরাল ইসলামকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতির বিষয়ে ভারত সরকারের কোনো দায় বা ভূমিকা নেই। মুখপাত্র উল্টো বাংলাদেশের ওপর দায় চাপিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকার যেসব বিবৃতি দিচ্ছে, তা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক নয়। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চাই।
শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতির ব্যাপারে ভারত সরকারের দেওয়া এই বক্তব্য দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। দিল্লির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা রীতিমতো ভণ্ডামি। ভারত এখন বাংলাদেশের সঙ্গে যা করছে, তা শত্রুরাষ্ট্রের আচরণের মধ্যে পড়ে। এ বিষয়ে আমাদের সরকার উদাসীনতার পরিচয় দিলে বাংলাদেশ বড় মাত্রার বিপর্যয়ে নিপতিত হতে পারে।
লেখক : কূটনৈতিক প্রতিবেদক, আমার দেশ
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১১ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১১ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১১ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে