ভূগোলের সোনালি সম্ভাবনা

হাবিব উল্লাহ রিফাত
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০: ২১

বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ অনেক দিন থেকে আলোচিত একটি দেশ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের কর্ণধাররা ভৌগোলিক এই সোনালি সম্ভাবনাকে আজও কাজে লাগাতে পারেননি। চোখের সামনে ম্লান হয়ে গেছে অনেক অপার সম্ভাবনা।

আমাদের উত্তর-পূর্ব ভারতের ৪০-৪৫ কিলোমিটার করিডোর, যা চীন, নেপাল, ভুটান, এমনকি দূরবর্তী মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি করতে পারত, যা আজও অপার সম্ভাবনার দুয়ারে তালাবদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের নিচে লুকিয়ে থাকা সম্পদ আর অজস্র আন্তর্জাতিক জাহাজের সম্ভাবনা দেখেও আমরা নিস্তব্ধ। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার কুমিরা থেকে উখিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল আজও বৈদেশিক মুদ্রার এক বিশাল ভান্ডারে রূপ নিতে পারেনি।

আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সব সময় ব্যস্ত ছিল বিরোধীদের দমন আর ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্রে। রাজনীতিকে তারা পরিণত করেছে পেটনীতিতে।

সম্প্রতি আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন, কীভাবে আমরা আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে পারি। তার পরিকল্পনায় শুধু সমুদ্রবাণিজ্য নয়, আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং জাতীয় সম্পদের উন্নয়ন নিয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।

তবে এই পরিবর্তনের দায়িত্ব একজন ব্যক্তির নয়। এটি একটি জাতির দায়িত্ব। এটি একটি ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দায়িত্ব, যারা শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, বরং জনগণের উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করবে। আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তাদের সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কারণ, এখনকার মানুষ আগের মতো নয়। তারা বোঝে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতির রাজনীতি আর টিকবে না এদেশে। মানুষ এখন কাজ দেখতে চায়, কথার ফুলঝুরি নয়।

আমরা এমন একসময়ের দিকে এগোচ্ছি, যেখানে নির্বাচনের রাজনীতি আর শুধু ক্ষমতার খেলা হবে না। এটি হবে মানুষের আস্থা অর্জনের লড়াই। আমাদের দরকার এমন নেতৃত্ব, যারা সাহস ও দূরদর্শিতার সঙ্গে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। যারা দেখাবে শুধু স্বপ্ন নয়, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথও।

বাংলাদেশের এই সোনালি সম্ভাবনার দ্বার খুলতেই হবে। তা যদি বর্তমান নেতৃত্ব না পারে, তবে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে তা করতে হবে। একটি উন্নত, আত্মনির্ভরশীল এবং গর্বিত বাংলাদেশ গড়তে হলে ইচ্ছাশক্তি, জবাবদিহি এবং জনগণের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা প্রয়োজন। যারা ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত হবে, তাদের চিরতরে বয়কট করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

পরিশেষে, বাংলাদেশের সম্ভাবনা শুধু কল্পনায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। প্রয়োজন শুধু সাহসী নেতৃত্বের, যে নেতৃত্ব জাতিকে একটি নতুন ভোর দেখাবে। ভূগোলই আমাদের ভাগ্যবদলের চাবিকাঠি হতে পারে, যদি আমরা তা কাজে লাগানোর মতো সচেতন হই। মনে রাখতে হবে, ইতিহাসের অঙ্গীকার আমাদেরই পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি স্বপ্নই একদিন বাস্তবে রূপ নেবে—এটাই আমাদের বিশ্বাস, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক : এমএসএস, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত