সানোয়ার হোসেন (শান্ত)
বাংলাদেশের সম্ভাবনা সীমাহীন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তরুণ জনসংখ্যা এবং প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের স্বপ্ন- সবকিছুই এক নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত বহন করে। অথচ এই স্বপ্নপূরণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি নীরব ও মারাত্মক সংকট- ব্রেইন ড্রেইন বা মেধা পাচার। আমাদের দেশের মেধাবী, সৃজনশীল এবং দক্ষ জনশক্তি যখন একের পর এক বিদেশমুখী হচ্ছে, তখন প্রশ্ন আসে- এই মূল্যবান মানুষগুলোর অনুপস্থিতি কীভাবে প্রভাব ফেলছে আমাদের সামগ্রিক উন্নয়ন যাত্রায়? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো- এই মানুষগুলো যদি ফিরে আসেন, তাহলে কি আমরা প্রস্তুত তাদের সঠিকভাবে গ্রহণ করার জন্য?
সম্প্রতি যিনি এই প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি আশাব্যঞ্জক উত্তর হয়ে উঠেছেন, তিনি আশিক চৌধুরী। দীর্ঘদিন তিনি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের জায়গায় ছিলেন। সেই চাকচিক্যময় জীবন, আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা, করপোরেট নিরাপত্তা- সব পেছনে ফেলে তিনি ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার দেশে ফেরা শুধু একটি চাকরি পরিবর্তনের ঘটনা নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি প্রতীকী পদক্ষেপ- যেটি প্রমাণ করে, সঠিক পরিবেশ ও সুযোগ থাকলে মেধা দেশেই ফিরে আসতে পারে। তবে আশিক চৌধুরীর এই ফেরা এখনো একটি ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়।
বাস্তবতা হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশি পেশাজীবী- চিকিৎসক, প্রকৌশলী, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ- বছরের পর বছর ধরে দেশের বাইরে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছেন। এই মানুষগুলোর অনেকেই বাংলাদেশে ফিরতে চান, কিন্তু ফেরার পথটি এতটাই অনিশ্চিত, জটিল এবং অপরিচিত যে অধিকাংশই থেকে যান প্রবাসে।
শুধু উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবছর প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। এই শিক্ষার্থীদের বড় অংশই উন্নত বিশ্বে থেকে যাওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন। ইউনেসকোর সর্বশেষ (২০২৩) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৫৮ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজারে পৌঁছেছে।
এটি দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দেশগুলোর একটি। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন এবং বেশিরভাগই আর ফিরছেন না। অনেকে গবেষণার সুযোগ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং কর্মক্ষেত্রের স্বচ্ছতা পেয়ে সেখানেই নিজেদের গড়ে তুলছেন। তাদের কেউ কেউ বলেন, ‘দেশে ফিরলে ক্যারিয়ারে অগ্রগতি ব্যাহত হবে, গবেষণার সুযোগ নেই, প্রশাসনিক জটিলতা প্রচুর।’ আবার কেউ বলেন, ‘দেশে সম্মান নেই, মূল্যায়ন নেই, কাজের স্বাচ্ছন্দ্য নেই, মেধা প্রয়োগের ক্ষেত্র নেই।’ ফলে, অনেকে দেশে ফিরতে চাইলেও ঝুঁকি নিতে চান না।
এই বাস্তবতা থেকেই বলা যায়, ব্রেইন ড্রেইন শুধু একক ব্যক্তি বা পরিবারভিত্তিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি কাঠামোগত ও নীতিগত দুর্বলতার ফল। যদি দেশের অভ্যন্তরে যথাযথ গবেষণাগার, পেশাগত নিরাপত্তা, বেতনের প্রতিযোগিতামূলক কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া যেতÑ তাহলে হয়তো এই মেধারা আজ দেশে থাকতেন।
তরুণদের নিয়ে করা একটি জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশই সুযোগ পেলে দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান। এর পেছনে শুধু উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষাই নয়, বরং আছে একটি গভীর আস্থার সংকট। একটি মেধাবী মানুষ চায় স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ, চায় তার দক্ষতার মূল্যায়ন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এখনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনীতিকীকরণ, পেশাদারিত্বের অভাব এবং গবেষণায় বাজেট ঘাটতির কারণে এই চাহিদাগুলো পূরণ হয় না।
তবে সমস্যা যত বড়ই হোক, সমাধানের পথও রয়েছেÑ যদি তা আন্তরিকতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। আশিক চৌধুরীর মতো যারা বিদেশে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং পরে দেশে ফিরেছেন, তাদের সংখ্যা বাড়াতে হলে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। দেশে ফিরে আসা প্রবাসী পেশাদারদের জন্য একটি ‘রিটার্নিং ট্যালেন্ট পলিসি’ প্রণয়ন করা জরুরি, যার মাধ্যমে তাদের জন্য আলাদা কর সুবিধা, নির্দিষ্ট গবেষণা তহবিল, সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় সম্মানজনক পদের সংরক্ষণ এবং দ্রুত আমলাতান্ত্রিক সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।
বিশ্বের অনেক দেশ এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ভারত ‘ব্রেইন গেইন’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রবাসী ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গবেষণা তহবিল, রিসার্চ চেয়ারের ব্যবস্থা এবং বিশেষায়িত হাব গড়ে তুলেছে। চীন ‘হায়েন প্রজেক্ট’ নামে একটি বৃহৎ কর্মসূচি নিয়েছে, যেখানে তারা বিদেশফেরত চীনা পেশাজীবীদের দেশে এনে স্টার্টআপ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি খাতে যুক্ত করছে। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়াও সরকারি সহায়তায় ‘ট্যালেন্ট হাব’ গড়ে তুলেছে, যেখানে প্রবাসী দক্ষ নাগরিকরা দেশে ফিরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বাংলাদেশও চাইলে এ ধরনের একটি কাঠামো দাঁড় করাতে পারে। শুধু চাই সাহসিকতা, সুপরিকল্পনা এবং মেধাবীদের প্রতি সম্মান দেখানোর সদিচ্ছা। একটি জাতীয় ‘ট্যালেন্ট ডাটাবেস’ তৈরি করে বিদেশে থাকা পেশাজীবীদের খুঁজে বের করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। একই সঙ্গে তাদের সরকারের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করে টেকসই উন্নয়নের অংশীদার বানানো যায়।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা। দেশে ফিরে এলে অনেকে নিজ পরিমণ্ডলে অবহেলা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা ‘অন্যরকম’ চোখে দেখার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। আমরা যদি তাদের সত্যিকারের মূল্যায়ন না করি, সমাজে তাদের অবদানকে স্বীকৃতি না দিই, তবে তারা ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই তা বাতিল করে দেবেন। দেশে ফিরেও যেন তারা এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা বোধ না করেন, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
আশিক চৌধুরী শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি হয়ে উঠতে পারেন একটি অনুপ্রেরণা। তার মতো আরো অসংখ্য আশিক চৌধুরী ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে।
ব্রেইন ড্রেইনের এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন একটি ‘মেধাবান বাংলাদেশ’ নির্মাণের কৌশল। রাষ্ট্রের উচিত একে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখা। কারণ অবকাঠামো দিয়ে একটি দেশ গড়ে ওঠে ঠিকই, কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় মূলত তার মানুষের মেধা, মনন ও নেতৃত্ব। এই নেতৃত্ব যারা দিতে পারেন, তাদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রের নয়Ñ সমগ্র সমাজেরও।
ব্রেইন ড্রেইন কোনো সময়ের ফ্যাশন নয়; এটি একটি ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ। এই ক্ষরণ থামাতে না পারলে জাতি হিসেবে বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে। তবে এখনো সময় আছেÑ যদি আমরা আশিক চৌধুরীদের উদাহরণকে ছড়িয়ে দিতে পারি, যদি আমরা বিদেশে থাকা প্রতিটি সম্ভাবনাময় মেধার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে পারি। মেধা যদি ফিরে আসেÑ তবেই বদলাবে বাংলাদেশ।
লেখক : মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট, সাংবাদিক
বাংলাদেশের সম্ভাবনা সীমাহীন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তরুণ জনসংখ্যা এবং প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের স্বপ্ন- সবকিছুই এক নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত বহন করে। অথচ এই স্বপ্নপূরণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি নীরব ও মারাত্মক সংকট- ব্রেইন ড্রেইন বা মেধা পাচার। আমাদের দেশের মেধাবী, সৃজনশীল এবং দক্ষ জনশক্তি যখন একের পর এক বিদেশমুখী হচ্ছে, তখন প্রশ্ন আসে- এই মূল্যবান মানুষগুলোর অনুপস্থিতি কীভাবে প্রভাব ফেলছে আমাদের সামগ্রিক উন্নয়ন যাত্রায়? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো- এই মানুষগুলো যদি ফিরে আসেন, তাহলে কি আমরা প্রস্তুত তাদের সঠিকভাবে গ্রহণ করার জন্য?
সম্প্রতি যিনি এই প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি আশাব্যঞ্জক উত্তর হয়ে উঠেছেন, তিনি আশিক চৌধুরী। দীর্ঘদিন তিনি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের জায়গায় ছিলেন। সেই চাকচিক্যময় জীবন, আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা, করপোরেট নিরাপত্তা- সব পেছনে ফেলে তিনি ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার দেশে ফেরা শুধু একটি চাকরি পরিবর্তনের ঘটনা নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি প্রতীকী পদক্ষেপ- যেটি প্রমাণ করে, সঠিক পরিবেশ ও সুযোগ থাকলে মেধা দেশেই ফিরে আসতে পারে। তবে আশিক চৌধুরীর এই ফেরা এখনো একটি ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়।
বাস্তবতা হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশি পেশাজীবী- চিকিৎসক, প্রকৌশলী, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ- বছরের পর বছর ধরে দেশের বাইরে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছেন। এই মানুষগুলোর অনেকেই বাংলাদেশে ফিরতে চান, কিন্তু ফেরার পথটি এতটাই অনিশ্চিত, জটিল এবং অপরিচিত যে অধিকাংশই থেকে যান প্রবাসে।
শুধু উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবছর প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। এই শিক্ষার্থীদের বড় অংশই উন্নত বিশ্বে থেকে যাওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন। ইউনেসকোর সর্বশেষ (২০২৩) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৫৮ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজারে পৌঁছেছে।
এটি দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দেশগুলোর একটি। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন এবং বেশিরভাগই আর ফিরছেন না। অনেকে গবেষণার সুযোগ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং কর্মক্ষেত্রের স্বচ্ছতা পেয়ে সেখানেই নিজেদের গড়ে তুলছেন। তাদের কেউ কেউ বলেন, ‘দেশে ফিরলে ক্যারিয়ারে অগ্রগতি ব্যাহত হবে, গবেষণার সুযোগ নেই, প্রশাসনিক জটিলতা প্রচুর।’ আবার কেউ বলেন, ‘দেশে সম্মান নেই, মূল্যায়ন নেই, কাজের স্বাচ্ছন্দ্য নেই, মেধা প্রয়োগের ক্ষেত্র নেই।’ ফলে, অনেকে দেশে ফিরতে চাইলেও ঝুঁকি নিতে চান না।
এই বাস্তবতা থেকেই বলা যায়, ব্রেইন ড্রেইন শুধু একক ব্যক্তি বা পরিবারভিত্তিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি কাঠামোগত ও নীতিগত দুর্বলতার ফল। যদি দেশের অভ্যন্তরে যথাযথ গবেষণাগার, পেশাগত নিরাপত্তা, বেতনের প্রতিযোগিতামূলক কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া যেতÑ তাহলে হয়তো এই মেধারা আজ দেশে থাকতেন।
তরুণদের নিয়ে করা একটি জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশই সুযোগ পেলে দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান। এর পেছনে শুধু উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষাই নয়, বরং আছে একটি গভীর আস্থার সংকট। একটি মেধাবী মানুষ চায় স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ, চায় তার দক্ষতার মূল্যায়ন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এখনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনীতিকীকরণ, পেশাদারিত্বের অভাব এবং গবেষণায় বাজেট ঘাটতির কারণে এই চাহিদাগুলো পূরণ হয় না।
তবে সমস্যা যত বড়ই হোক, সমাধানের পথও রয়েছেÑ যদি তা আন্তরিকতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। আশিক চৌধুরীর মতো যারা বিদেশে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং পরে দেশে ফিরেছেন, তাদের সংখ্যা বাড়াতে হলে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। দেশে ফিরে আসা প্রবাসী পেশাদারদের জন্য একটি ‘রিটার্নিং ট্যালেন্ট পলিসি’ প্রণয়ন করা জরুরি, যার মাধ্যমে তাদের জন্য আলাদা কর সুবিধা, নির্দিষ্ট গবেষণা তহবিল, সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় সম্মানজনক পদের সংরক্ষণ এবং দ্রুত আমলাতান্ত্রিক সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।
বিশ্বের অনেক দেশ এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ভারত ‘ব্রেইন গেইন’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রবাসী ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গবেষণা তহবিল, রিসার্চ চেয়ারের ব্যবস্থা এবং বিশেষায়িত হাব গড়ে তুলেছে। চীন ‘হায়েন প্রজেক্ট’ নামে একটি বৃহৎ কর্মসূচি নিয়েছে, যেখানে তারা বিদেশফেরত চীনা পেশাজীবীদের দেশে এনে স্টার্টআপ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি খাতে যুক্ত করছে। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়াও সরকারি সহায়তায় ‘ট্যালেন্ট হাব’ গড়ে তুলেছে, যেখানে প্রবাসী দক্ষ নাগরিকরা দেশে ফিরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বাংলাদেশও চাইলে এ ধরনের একটি কাঠামো দাঁড় করাতে পারে। শুধু চাই সাহসিকতা, সুপরিকল্পনা এবং মেধাবীদের প্রতি সম্মান দেখানোর সদিচ্ছা। একটি জাতীয় ‘ট্যালেন্ট ডাটাবেস’ তৈরি করে বিদেশে থাকা পেশাজীবীদের খুঁজে বের করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। একই সঙ্গে তাদের সরকারের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করে টেকসই উন্নয়নের অংশীদার বানানো যায়।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা। দেশে ফিরে এলে অনেকে নিজ পরিমণ্ডলে অবহেলা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা ‘অন্যরকম’ চোখে দেখার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। আমরা যদি তাদের সত্যিকারের মূল্যায়ন না করি, সমাজে তাদের অবদানকে স্বীকৃতি না দিই, তবে তারা ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই তা বাতিল করে দেবেন। দেশে ফিরেও যেন তারা এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা বোধ না করেন, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
আশিক চৌধুরী শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি হয়ে উঠতে পারেন একটি অনুপ্রেরণা। তার মতো আরো অসংখ্য আশিক চৌধুরী ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে।
ব্রেইন ড্রেইনের এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন একটি ‘মেধাবান বাংলাদেশ’ নির্মাণের কৌশল। রাষ্ট্রের উচিত একে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখা। কারণ অবকাঠামো দিয়ে একটি দেশ গড়ে ওঠে ঠিকই, কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় মূলত তার মানুষের মেধা, মনন ও নেতৃত্ব। এই নেতৃত্ব যারা দিতে পারেন, তাদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রের নয়Ñ সমগ্র সমাজেরও।
ব্রেইন ড্রেইন কোনো সময়ের ফ্যাশন নয়; এটি একটি ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ। এই ক্ষরণ থামাতে না পারলে জাতি হিসেবে বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে। তবে এখনো সময় আছেÑ যদি আমরা আশিক চৌধুরীদের উদাহরণকে ছড়িয়ে দিতে পারি, যদি আমরা বিদেশে থাকা প্রতিটি সম্ভাবনাময় মেধার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে পারি। মেধা যদি ফিরে আসেÑ তবেই বদলাবে বাংলাদেশ।
লেখক : মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট, সাংবাদিক
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে